আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশ ও দশের বিশেষ উপকার করলেন আপিল বিভাগ

অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস

আমার দেশ, ১৯ জুলাই ২০১০। আতাউস সামাদ। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম-কোর্টের আপিল বিভাগ গতকাল রোববার এমন এক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যার বলে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার দ্বিতীয়বার পুনঃপ্রকাশ সম্ভব হলো। আপিল আদালতকে এজন্য আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তবে আমরা মনে করি যে, আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত দেশ, জনগণ এবং আমার দেশ পত্রিকায় কর্মরত সবার উপকারে এসেছে।

কারণ, প্রথমত সারা বিশ্ব জানবে যে, মহাপরাক্রমশালী সরকারের কোনো কাজের জন্য বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকরা যন্ত্রণায় পড়লে বা সংক্ষুব্ধ হলে সুপ্রিমকোর্টের আশ্রয় এখনও নিতে পারে। দ্বিতীয়ত, দেশের জনগণ স্বস্তি পাবেন এই সঙ্কেত পেয়ে যে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ যেসব গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ তারা হৃদয়ে ধারণ করে, সেগুলো টিকে থাকার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া তারা এজন্য খুশি হবেন, যেসব জাতীয় সমস্যা তাদের জীবনকে দুঃসহ করে তুলছে অহরহ, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা আবারও সেগুলো তার আপন বৈশিষ্ট্যময় সাংবাদিকতার মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠভাবে সরকার ও জাতির সামনে সমাধানের জন্য তুলে ধরবে। আমার দেশ পত্রিকা শুরু থেকেই এই কাজটি একাগ্রভাবে করে আসছিল। সরকারের একটি দুঃখজনক সিদ্ধান্তের কারণে গত দেড় মাস যাবত্ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশিত হতে পারেনি, এই সময় পত্রিকাটির উপস্থিতির অভাব দেশের আপামর জনসাধারণ তীব্রভাবে অনুভব করেছে।

বন্ধ থাকার সময় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় কর্মরত সবাইকে নিরন্ন ভবিষ্যতের দুঃস্বপ্ন তাড়া করে বেড়িয়েছে। তারা সেই দুঃস্বপ্নের হাত থেকে আপাতত রেহাই পেলেন। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের একটি আদেশ এতজনের এতভাবেই উপকার করল। উচ্চতর আদালতের সামনে যে বিজ্ঞ ও প্রবীণ আইনজীবীরা ও তাদের নবীন অনুসারীরা আমার দেশ পত্রিকা পুনঃপ্রকাশের অনুমতির পক্ষে আইন ও যুক্তি তুলে ধরেছেন, তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাই। আজকে আমার দেশ পত্রিকা আবারও প্রকাশিত হবে জেনে আমরা খুশি হলেও আমাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে রইল পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কারারুদ্ধ থাকায়।

তাকে আটক করা ও বন্দি অবস্থায় রিমান্ডের নামে তার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা কলঙ্কজনক। আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি মাহমুদুর রহমানকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে দেশকে এই কেলেঙ্কারি থেকে রেহাই দিতে। আমরা আশা করছি, মাহমুদুর রহমানকে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের মাঝে মুক্ত মানুষ হিসেবে ফিরে পাব। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, কোনো দেশে গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে সেদেশে খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলা করা সহজ হয়। উল্লেখ্য, অমর্ত্য সেন বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন বিভিন্ন দেশে যেসব মারাত্মক দুর্ভিক্ষ হয়েছে, তার কারণ অনুসন্ধান করে।

বাংলাদেশের মতো প্রান্তিক সক্ষমতার একটি দেশের জন্য অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের উপরোক্ত উপদেশ অমূল্য। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের কাঠামো অস্তিত্বশীল, এখন প্রয়োজন এগুলোতে প্রাণ ও শক্তি সঞ্চার করা। সরকার এ দিকটায় যত যত্নবান হবে, সবার ততই মঙ্গল হবে। দৈনিক আমার দেশ সরকারি আদেশে বন্ধ হওয়ার পর দেশে ও বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়। এই দুঃসময়ে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, জাতীয় পত্রিকাগুলোর সম্পাদকরা, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সংস্কৃতিসেবী ও রাজনীতিবিদসহ যারা আমার দেশ-এর পক্ষে সোচ্চার হয়েছিলেন, তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এবং গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সদা সজাগ থাকতে সবিনয় অনুরোধ করি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।