ব্লগার পাঠক হিসেবেই বেশী আনন্দে আছি।
দীছ শরীফ-এ ওদের দাজ্জাল বলা হয়েছে। ওরা ধর্মব্যবসায়ী। মূল দাজ্জাল আসার আগে ওরা আসবে শত শত। রাজাকার আলবাদর, গো’আযম, মইত্যা, মইজ্জা, বাংলার ইহুদী ওরফে সাঈদী তথা গোটা জামাতী, দেওবন্দী, খারিজী এরা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত দাজ্জালে কাজ্জাব তথা মিথ্যাবাদী দাজ্জাল।
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আলামতের সাথে ওদের হুবহু মিল। হাদীছ শরীফ-এ ওদের আলামত সম্পর্কে বলা হয়েছে, “ওরা এমন সব কথা বলবে যা তোমরা শোননি এমনকি তোমাদের বাপ-দাদা চৌদ্দপুরুষও শোনেনি। ” বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশের প্রায় ৯৫ ভাগ জনগণ জানে যে, ৭১-এ জামাতীরা রাজাকার আলবাদর নামে এদেশে যে নির্মম খুন, লুন্ঠন ও পৈশাচিক কায়দায় এদেশের মা-বোনদের সম্ভ্রম লুন্ঠন করেছে। কিন' সম্প্রতি ইংরেজি পত্রিকা প্রোব-এর সাথে সাক্ষাৎকারে মইত্যা রাজাকার ৭১-এ তাদের অপকর্মের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। যা আজকের প্রজন্ম কোনদিন শুনেনি তাদের বাপ দাদারাও শোনেনি।
এক্ষেত্রে তারা যে কুখ্যাত মিথ্যাবাদী দাজ্জালের তবকায়ই পড়ে। হাদীছ শরীফ-এর বর্ণনা অনুযায়ী ওদেরকে নির্দ্বিধায়, নির্বিঘ্নে, নিঃসঙ্কোচে, নিশ্চিন্তে মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বলে চিহ্নিত করা যায়। গো’আযম, মইত্যা রাজাকার, মইজ্জা, বাংলার ইহুদী ওরফে সাঈদীর ১৯৭১-এ অপকর্ম অস্বীকারের বিপরীতে নিম্নে ওদের অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হলো। যার দ্বারা পাঠক সহজেই মূল্যায়ন করতে পারবে যে, সত্যিই ওরা দাজ্জালের কত ঘনিষ্ঠজন। কি রকম খাছ চেলা তথা মিথ্যাবাদী দাজ্জাল।
া া া া া ৩ এপ্রিল, ১৯৭১ গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন জ্ঞাপন করে গোলাম আযম। ৭ এপ্রিল, ১৯৭১ সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে গোলাম আযম বলে, সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারীদের দেখামাত্র খতম কর। ৮ এপ্রিল, ১৯৭১ পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযম ও সাধারণ সম্পাদক এক যুক্ত বিবৃতিতে বলে, ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে। ভারতীয় বা পাকিস্তানবিরোধী এজেন্ট বা অনুপ্রবেশকারীদের যেখানেই দেখা পাওয়া যাবে, দেশপ্রেমিক পূর্ব পাকিস্তানিরা তাদের নির্মূল করবে। ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ সামাজিকভাবে বিরুদ্ধাচরণের জন্য শান্তি কমিটি গঠন হয়।
গোলাম আযম শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় পত্রস্থ হয়, যারা পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশ করেছিলো তাদের পাকিস্তানে জায়গা হবে না। ১২ এপ্রিল, ১৯৭১ ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তি কমিটির পরিকল্পিত মিছিলে গোলাম আযম নেতৃত্ব দেয় এবং মিছিল শেষে সে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করে। ১২ এপ্রিল, ১৯৭১ ঢাকার ছাত্রসংঘ (আইসিএস) নেতা মতিউর রহমান নিজামী, মোহাম্মদ ইউনুস, নুরুদ্দিন ইসলাম, শাহ জামাল চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলে, স্বাধীন বাংলা আমাদের গোলামে পরিণত করবে। ১৫ এপ্রিল, ১৯৭১ জামাতে ইসলামী মুখপত্র ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পাকিস্তানি সৈন্যদের গ্রামে, গিয়ে দুষ্কৃতিকারীদের (মুক্তিবাহিনী) আক্রমণ করার পরামর্শ দেয়।
২২ এপ্রিল, ১৯৭১ ইসলামী ছাত্রসংঘ নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে জামালপুরে প্রথম আলবাদর বাহিনী গঠিত হয়। ২২ এপ্রিল, ১৯৭১ ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় লেখা হয়, মাননীয় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও টিক্কা খানের সময়োপযোগী পদক্ষেপের জন্য পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে। ২৩ এপ্রিল, ১৯৭১ ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় মুক্তিবাহিনী ধরার জন্য বাড়ি বাড়ি তল্লাসী করার পরামর্শ দেয়। ১ মে, ১৯৭১ ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় লেখে, দেশের শান্তির জন্য দুষ্কৃতিকারীদের (মুক্তিবাহিনী) নির্মূল করা একান্ত প্রয়োজন। ৪ মে, ১৯৭১ মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের ধরিয়ে দেবার জন্য ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করে এবং বলে, এটা ঈমানী দায়িত্ব।
৮ মে, ১৯৭১ ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় লেখা হয়, শেখ মুজিব ২৬ মার্চ সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলা কায়েমের পরিকল্পনা এঁটেছিলেন। সেনাবাহিনী তা জানতে পেরে ২৫ মার্চ হঠাৎ আক্রমণ করে এই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়ে আমাদের পাকিস্তানকে বাঁচিয়েছে। ১৯ মে, ১৯৭১ পাকিস্তান জামাতের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ও শ্রম সম্পাদক মোহাম্মদ শফিউল্লাহ এক যুক্ত বিবৃতিতে স্বদেশের পবিত্রতম মাটি থেকে পাকিস্তানবিরোধীদের উৎখাত করতে আহ্বান জানায়। তারা বলে, আল্লাহ পাক-এর মেহেরবানীতে পাকিস্তানবিরোধী দুষ্কৃতিকারী ও বিচ্ছিন্নবাদীদের ত্রাসের রাজত্ব খতম হয়েছে এবং পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে। ২৪ মে, ১৯৭১ ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায় এবং বলে, গেরিলাগিরির নামে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা পাকিস্তান সেনাবাহিনী তছনছ করে দিবে।
২৭ মে, ১৯৭১ মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার দেয়া হবে বলে ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় ঘোষণা দেয়। একই সাথে মুক্তিবাহিনী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের আবদেন জানায়। ২৮ মে, ১৯৭১ মুক্তিবাহিনী নির্মূলের জন্য অস্ত্রশস্ত্র দাবি করে এবং বেসামরিক পোশাকে একটি বাহিনী গঠনের পরামর্শ দেয়। ১৩ জুন, ১৯৭১ গেরিলাগিরির নামে যেসব দুষ্কৃতিকারী দেশের শান্তি ব্যাহত করছে, সামরিক কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে প্রয়োজনীয় হাতিয়ার নিয়ে গেরিলা পদ্ধতিতেই দুষ্কৃতিকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) নির্মূল করার জন্য গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করতে হবে বলে ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় লেখা হয়। ১৫ জুন, ১৯৭১ ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় মুক্তিবাহিনীকে খতম করার জন্য কেবল সেনাবাহিনীর দিকে না তাকিয়ে থেকে পাকিস্তানিদের পথ বেছে নিতে বলা হয়।
১৭ জুন, ১৯৭১ গোলাম আযম বলে, দুষ্কৃতিকারী (মুক্তিযোদ্ধা) এখনও ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত রয়েছে। এদের পাকড়াও করা গেলে তবেই পরিসি'তি দমন করা যাবে। ২০ জুন, ১৯৭১ গোলাম আযম লাহোরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলে, যারা প্রকাশ্যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করেছিলো, তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। সেনাবাহিনী সকল দুষ্কৃতিকারী উৎখাত করেছে। মুক্তিবাহিনীকে মোকাবেলার জন্য সরকারের কাছে অস্ত্র সরবরাহের জন্য সে দাবি জানায়।
২২ জুন, ১৯৭১ এক সাক্ষাতকারে গোলাম আযম বলে, তারা কখনোই পাকিস্তানকে ত্যাগ করতে পারবে না। প্রয়োজনে কুরবানী দেয়ার জন্যেও তার কর্মীরা প্রস্থত রয়েছে। একই দিন গোলাম আযম তার দলের এক কর্মীসভায় বলে, বেআইনি ঘোষিত আওয়ামী লীগ কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানে সৃষ্ট গোলযোগ ১৮৫৭ সালের বাংলা বিদ্রোহের চেয়েও দশগুণ বেশি শক্তিশালী ছিলো। ওদিনই সে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে যেসব দল আন্দোলন করছে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করার আহ্বান জানায়। ২৩ জুন, ১৯৭১ পূর্ব পাকিস্তানি ভাইয়েরা সর্বদাই পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে বাস করবে।
৩০ জুন, ১৯৭১ গোলাম আযম ও তার রাজনৈতিক পূর্বসূরি বা গুরু মাওলানা আবুল আলা মওদুদী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সংসদ সদস্যদের সদস্যত্ব বাতিল ঘোষণা করায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে অভিনন্দন জানায়। এদিন ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাকে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা বলে অভিহিত করে। ৪ জুলাই, ১৯৭১ ইসলামী ছাত্রসংঘের পরিচালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে রাজাকারদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যুদ্ধে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। একই দিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ইহুদী ষড়যন্ত্র বলে ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় এক উপসম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়। ৮ জুলাই, ১৯৭১ পাকিস্তান জামাতের জেনারেল সেক্রেটারি আব্দুল খালেক এক বিবৃতিতে বলে, সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী ও স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে গ্রাস করার ভারতীয় চক্রান্ত জনগণ পুরোপুরিভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানের শত্রু দুষ্কৃতিকারী বলে আখ্যায়িত করে পাকিস্তান জামাতের নেতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদী। জামাতে ইসলামী মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায়। এদিন ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় মন্তব্য করে, পাকিস্তান টিকে থাকার জন্য এসেছে। ৯ জুলাই, ১৯৭১ জামাতে ইসলামী এবং ‘দৈনিক সংগ্রাম’ মুক্তিবাহিনীকে দুষ্কৃতিকারীর সাথে ডাকাত বলে অভিহিত করতে শুরু করে। ১৬ জুলাই, ১৯৭১ মহান ভাষা আন্দোলনের স্মরণে নির্মিত ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভেঙ্গে ফেলায় ‘দৈনিক সংগ্রাম’ এবং জামাত নেতারা অভিনন্দন জানায়।
ওইদিন ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় এবং জামাত নেতারা অভিনন্দন জানায়। ওইদিন ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় লিখেছে, যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে পাকিস্তানপন'ীরা তাদের কোনদিনই ক্ষমা করবে না। ১৭ জুলাই, ১৯৭১ মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের দেশদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করে ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকা। এ মাসে বরিশালে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের সভায় অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান বিশ্বাস (সাবেক রাষ্ট্রপতি), ব্যারিস্টার আখতার উদ্দিন আহমদ, মেজর আফসার উদ্দিন প্রমুখ নেতারা মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতিকারী ও বিদেশী চর আখ্যা দিয়ে এদের উৎখাত করার আহ্বান জানায়। ১৯ জুলাই, ১৯৭১ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের সচিত্র প্রতিবেদন ব্রিটিশ টেলিভিশনে পরিবেশিত হবার পর দৈনিক সংগ্রাম লেখে, এগুলো ঘূর্ণিঝড়ের ছবি।
২ আগস্ট, ১৯৭১ জামাতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযমের এক ছাত্র মিছিলে বলে, মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে জিততেই হবে। ৮ আগস্ট, ১৯৭১ গোলাম আযম ‘দৈনিক সংগ্রামে’ এক উপসম্পাদকীয়তে লেখে, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে টিক্কা খানের বীরত্বের কথা শুনে তাকে এক নজর দেখার ইচ্ছা প্রবল হচ্ছিল। তার ছবি আমার মানসপটে বিশেষ মর্যাদার সাথে আঁকা রয়েছে। ১২ আগস্ট, ১৯৭১ গোলাম আযম বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থকদের দুশমন আখ্যা দিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজে বের করার আহবান জানায়। একই দিন জামাত নেতারা ডাক্তার মালেকের পুতুল সরকারে যোগ দেয়।
১৪ আগস্ট, ১৯৭১ গোলাম আযম বলে, জাতি যে চরম সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে এবারের স্বাধীনতা দিবস পালন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের আদর্শের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতাই জাতীয় সঙ্কটের মূল কারণ। ১৮ আগস্ট, ১৯৭১ গোলাম আযম লাহোরে বলে, ভারত দুষ্কৃতিকারীদের সাহায্য করছে। তাই পাকিস্তানের উচিত কালবিলম্ব না করে ভারত আক্রমণ করা এবং আসাম দখল করা। ২২ আগস্ট, ১৯৭১ গোলাম আযম বলে, যারা জামাতে ইসলামীকে দেশপ্রেমিক সংস্থা নয় বলে আখ্যা দিচ্ছে তারা হয় জানে না বা স্বীকার করার সাহস পায় না যে, ইসলামের আদর্শ তুলে ধরা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরোধিতা করার জন্যই কেবল পূর্ব পাকিস্তানে জামাতের বিপুল সংখ্যক কর্মী দুষ্কৃতিকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে।
২৬ আগস্ট, ১৯৭১ পেশোয়ারে এক সাংবাদিক সম্মেলনে গোলাম আযম বলে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানি দুষ্কৃতিকারীদের হাত থেকে রক্ষা করেছে। এই দুষ্কৃতিকারীদের ধ্বংস করার জন্য সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করতে হবে। ২৮ আগস্ট, ১৯৭১ গোলাম আযম বলে, শুধুমাত্র ইসলামী আদর্শই পাকিস্তানের দুই অংশের ঐক্য বজায় রাখতে পারে। সে পাকিস্তানের সংহতি রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে। ৩১ আগস্ট, ১৯৭১ গোলাম আযম বলে, বেআইনি আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত ও সরকার কর্তৃক বহাল ঘোষিত ৮৮ জন সদস্যের অধিকাংশই পাকিস্তানে নেই।
বর্তমান মুহূর্তের আশু প্রয়োজন হচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তানে দেশপ্রেমিক ও ইসলাম প্রিয় লোকজনের হাত শক্তিশালী করা। এসব লোক পূর্ব পাকিস্তানের পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে সাহায্য করছে। এবং দুষ্কৃতিকারীদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে ও বিদ্রোহীদের দমনে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনকে পূর্ণ সহযোগিতা দান করছে। পূর্ব পাকিস্তানের পরিসি'তি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ গোলাম আযম বলে, কোন ভাল মুসলমানই তথাকথিত বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থক হতে পারে না।
পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নির্মূল করার জন্যে একমনা ও দেশপ্রেমিক লোকেরা একত্রে কাজ করে যাচ্ছেন। রাজাকাররা খুবই ভালো কাজ করছেন। ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ জামাতে ইসলামী এবং ‘দৈনিক সংগ্রাম’ টিক্কা খানের বিদায়ে এবং গভর্নর ডাক্তার মালেকের নিয়োগে লেখে, টিক্কা খান কথা বলতেন কম এবং কাজ করতেন বেশি। তিনি বীরত্বের সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পাকিস্তান একদিনও টিকে থাকতো না। এদেশের মানুষ কোনদিনও তাকে ভুলবেনা এবং তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেনা।
ডাক্তার মালেককে অভিনন্দন এবং সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়। ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ জামাতের ঢাকা শাখার সাধারণ সম্পাদক এক বিবৃতিতে বলে, ৬ সেপ্টেম্বর আমদের পাকিস্তানের সংহতি ও অখণ্ডতার জন্য শপথ নিতে হবে। ওইদিন মতিউর রহমান নিজামী বলে, ছাত্রসংঘ কর্মীরা রক্ত দিয়ে পাকিস্তানের প্রতি ইঞ্চি জমি রক্ষা করবে। ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ নিজামী সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের খতম করার আহবান জানায়। ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ মতিউর রহমান নিজামী বলে, দুনিয়ার কোন শক্তি পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারবেনা।
১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ গভর্নর ডাক্তার মালেক মন্ত্রিসভার ১০ জনের মধ্যে ২ জন জামাতী নেতা আব্বাস আলী খান এবং এ কে এম ইউসুফ শপথ গ্রহণ করে। একই দিন গোলাম আযম রাজাকারদের মনোবল শক্ত করার জন্য রাজাকার শিবির পরিদর্শন করে। ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ ডাক্তার মালেক মন্ত্রিসভাকে গোলাম আযম অভিনন্দন জানায়। ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ মন্ত্রিসভাকে জামাতে ইসলামী এক সম্বর্ধনা দেয়। সম্বর্ধনা অনষ্ঠানে গোলাম আযম বলে, পাকিস্তানই যদি না থাকে তাহলে জামাত কর্মীদের বেঁচে থেকে লাভ নেই।
৮ অক্টোবর, ১৯৭১ পাকিস্তান জামাতের প্রধান মাওলানা মওদুদী বলে, পাকিস্তান রক্ষা পেলে ইসলাম রক্ষা পাবে। কেননা, পাকিস্তানই বিশ্বে ইসলামের সবচেয়ে বড় দুর্গ। ১১ অক্টোবর, ১৯৭১ জামাত নেতার রাজাকার, আলবাদরদের ভারী অন্ত্রশস্ত্র দাবি করে বলে, অন্যথায় মুক্তিবাহিনী দমন করা যাবেনা। ১৮ অক্টোবর, ১৯৭১ ‘দৈনিক সংগ্রাম’ বলে, যারা পাকিস্তানের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, তারা যেন এদেশ ছেড়ে চলে যায়। ২০ অক্টোবর, ১৯৭১ ‘দৈনিক সংগ্রাম’ লেখা হয়, জাতি কর্তৃক গোলাম আযমের গলাধাক্কা খাওয়ার সম্ভবনা নেই।
৭ নভেম্বর, ১৯৭১ ‘দৈনিক সংগ্রামে’ লেখা হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মূলে হয় গাজী, নয় শহীদ হওয়ার শপথ নিতে হবে। ৮ নভেম্বর, ১৯৭১ ‘দৈনিক সংগ্রাম’ লেখে, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল খরচ ইসরাইল বহন করছে। মুক্তিবাহিনীকে ট্রেনিংও দিচ্ছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। ইহুদীরা মুক্তিবাহিনীকে অস্ত্রশস্ত্র-টাকা পয়সাও দিচ্ছে। ১০ নভেম্বর, ১৯৭১ জামাত নেতা মওলানা আব্দুর রহিম গভর্নর ডাক্তার মালেকের সাথে সাক্ষাৎ করে আইন-শৃঙ্খলা পরিসি'তি নিয়ে আলোচনা করেন।
এ ব্যাপারে তার দল সরকারকে সব রকম সাহায্য সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়। ১২ নভেম্বর, ১৯৭১ ‘দৈনিক সংগ্রাম’ খোলাখুলিভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরামর্শ দেয়। এদিন লেখা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তর থেকে যারা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করছে তাদের দ্রুত খুঁজে বের করে উৎখাত করতে হবে। এটা যতই বিলম্ব হবে ততই পাকিস্তানের ক্ষতি হবে। ১৬ নভেম্বর, ১৯৭১ মতিউর রহমান নিজামী এক নিবন্ধে বলে, পাকিস্তান হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার ঘর।
২৪ নভেম্বর, ১৯৭১ গোলাম আযম এক বিবৃতিতে বলে, পাকিস্তানকে ভারত আক্রমণের আহবান জানায় এবং রাজাকার-আলবাদরদের উন্নতমানের স্বয়ংক্রীয় অস্ত্রে সজ্জিত করার আহবান জানায়। া া া া া কুরআন শরীফ-এ ধর্মব্যবসায়ীদের প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা অল্পমূল্যে আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফকে বিক্রি করোনা। ’ উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা আল্লাহ পাক উনার সম্পর্কে মিথ্যা বলতেও ধর্ম ব্যবসায়ীদের ঠেকেনা। সামান্য মূল্যের পরিবর্তে আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফকে বিকৃত ও বিক্রি করতেও তাদের কুণ্ঠা হয়না। নিজেদের বারবার বিক্রি করতেও তাদের সঙ্কোচ হয় না।
এটাই তাদের চিরন্তন খাছলত যার সবটুকুই পুরোপুরি প্রমাণিত করেছে আলবাদর, রাজাকার, জামাতীরা। কাজেই শুধু রাজাকার, আলবাদর হিসেবেই এদের পরিচয় শেষ নয় বরং ইসলামের দৃষ্টিতে এদের বিশেষ পরিচয় হল এরা মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। যে দাজ্জাল আবহমানকাল ধরে মুসলিম শিশু থেকে সবার কাছেই অব্যক্ত ঘৃণা, শ্লেষের পাত্র, অস্পৃশ্য বলে প্রতিভাত। সব মুসলমানের কাছে রাজাকার জামাতীরাও ঠিক তাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।