এসো নীপবনে
জীবনটা শালার ‘না’য়ের জীবন হয়েই রইলো
এভাবেই কাটাতে হবে বাকীটা জীবন।
সেই ছোটবেলায় বিদেশ ফেরত মামার কাছে
তেমন কিছু না, একটা হ্যাঙ্গার চেয়েছিলাম
কী বিচিত্র দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো আমার দিকে
-‘হ’ তোমার হ্যাঙ্গার নিয়া বইসা রইছি
ঘন ঘোর বর্ষায় যেমন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে বৃষ্টি,
নড়বড়ে বাধ ভেঙ্গে যেমন ভাসিয়ে নেয় সব বন্যার পানি
তেমনি আমার দু’চোখে অশ্রু বয়েছে
আমি আলনায় ভাঁজ করে রাখা কাপড়ে মুখ গুজে কেঁদেছি।
একটা হ্যাঙ্গার, কাপড় রাখার হ্যাঙ্গার তেমন কিছু নয়,
তবু সেই প্রথম কিছু চাওয়ার দাবীতে এমন চপ্পল
হৃদয়ে স্থায়ী দাগ হয়ে আছে।
এরপর দারিদ্রের মহান শিক্ষায় শিখেছি
যতই চাও পাবে না কিছু।
-মা সেভেনাপ খাবো
-এটা খায় না সোনা, পেটে আলসার হয়।
-ওরা যে খাচ্ছে?
-ওদের পেটে আলসার হবে।
-বাবা এই ঈদে কিন্তু বেইলী কেডস কিনে দিতে হবে
-কেডসের তো অনেক দাম!
আমি জানি, বাবার বেতন দু’জ়োড়া কেডসের কিছু বেশি
তাই……
বন্ধুত্বের দাবীতে ভুলে গেলাম বন্ধুর কাছেও কিছু চাইতে নেই।
তাই কলেজের এক অনুষ্ঠানে আমি যা নই তাই সাজতে
বন্ধুর একটা জুতো কেবল পড়েছি
আর জুতোর জন্য বেরিয়ে এলো বন্ধুর স্বরূপ
-‘খোলো, আমি আমার জুতো কারো সাথে শেয়ার করি না’।
সেই থেকে আমি জেনে গেছি-
সব সম্পর্ক যেমন তুমি জানো, তেমনি জেনে চলো
তার দাবী কখনো তুলোনা।
সাবান পানিতে গড়া বুদবুদের মতো সব সম্পর্ক
ছোঁয়াতেই হবে চুরমার, টোকার প্রয়োজন নেই।
সেই থেকে আমি জেনে গেছি
আমার কষ্ট কেবল আমার নিজের
পুড়লে কেবল আমিই পুড়ি।
কৈশোর পেরোনো জীবনে কার হৃদয়ে না রঙ লাগে?
যারে দেখি তারেই ভালো লাগে
ইচ্ছা করে ভালোবাসতেও
ভালোবাসতে ইচ্ছা করলেও মনে পড়ে মায়ের সাবধান বানী
‘মেয়েরা কিন্তু কালসাপ। সাবধান, ছোবল দিয়ে চলে যাবে
তখন আর কিছু করার থাকবেনা’।
আমি কাউকে ভালোবাসতে পারিনা-
কিছু দিন গেলেই ফোলানো বেলুন যেমন চুপসে যায়
তেমনি চুপসে যায় আমার ভালোলাগা, ভালোবাসা।
জীবনে অনেক চড়াই উৎড়াই পেড়োই
তবু একটা শূন্যতা থেকে যায়।
একদিন শূন্যতা ছিলো আমার ভেতর
অনেকদিন পর দেখি আমি শূন্যতার ভেতর বসে আছি।
সেই শূন্যতার বলয় ভাঙ্গতে চেয়ে ভুলে গেলাম মায়ের সাবধান বানী।
রঙের সাথে রঙ মেশানোর মতো হৃদয়ের সাথে হৃদয় মেশাবো বলে
সকল শক্তি আর সাহস সঞ্চয় করে
কাউকে বলেছিলাম- ‘ভালোবাসি’।
যতটা উচ্ছাস নিয়ে বলেছিলাম, ততখানি দৃঢ়তার সাথেই
সে বলেছিলো- ‘সম্ভব না’।
আমি ফের শূন্যতার ভেতর ঢুকে যাই।
মাঝে মাঝে মনে হয়-
মা কি আমাকে সাবধান করেছিলো না অভিশাপ দিয়েছিলো?
জানি না, আমি কিছুই জানি না
শুধু জানি আমার জীবন একটা হাহাকার,
একটা শূণ্যতার ভেতর ঢুকে গেছে
শূন্যতার মাঝে বিলীন না হওয়া পর্যন্ত
এই আমার ঠিকানা।
২৭/০৪/২০১৩ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।