আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসম আসাম (২য় পর্ব)

পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয় ,,,,,পথের পাশেই আছে মোর দেবালয়
সন্ধ্যায় জলাভুমি থেকে উড়ে যাওয়া বুনো হাঁসের ঝাঁক অন্ধকার হয়ে এসেছে চারিদিক, রাস্তায় নেমে হাটছি, কিন্ত কোথায় হোটেল? সকাল থেকে শিলং এর পাহাড়ী উচু নীচু পথ বেয়ে ঘোরাঘুরি শুরু, তিনটা থেকে বাস জার্নি, ক্লান্ত দেহ একটু বিশ্রামের জন্য আকুল। এইতো সামনেই একটা সুন্দর হোটেল! ভেতরে ঢুকলাম কাচের দরজা ঠেলে,ভারী ভালো লাগছে, বেশ সাজানো লবি,কত রকম অর্কিড ফুলদানীতে, এসি চলছে। আমি সোফায় চোখ বন্ধ করে বসে আছি, ভীষন ঘুম পাচ্ছে,আমার স্বামী কাউন্টারে, এখনি রুমের চাবি নিয়ে আসবে। 'উঠো' তার ডাকে আমি চমকে তাকালাম, হাত খালি, 'চাবি' জানতে চাইলাম জানালো বিদেশী নাগরিকদের জন্য যে ফর্ম সেটা এখানে শেষ হয়ে গেছে। উঠে আরেক হোটেলের সন্ধানে হাটতে লাগলাম।

একটার পর একটা হোটেল, পাসপোর্ট দেখেই একই ধরনের কথা বলে ফিরিয়ে দিচ্ছে। ভীষন অবাক লাগছে! কি ঘটনা বুঝতে পারছিনা! অন্যান্য দেশের ট্যুরিস্টরা আমাদের নাকের ডগা দিয়ে চাবি নিয়ে যাচ্ছে! আমরা প্রায় গোটা ভারতবর্ষ ঘুরে বেড়িয়েছি এমন পরিস্হিতিতে কখনও পরিনি। শেষ পর্যন্ত একটা মুসলমান মালিকানাধীন হোটেল কোনোরকমে রাজী হোলো তবে তাদের নাকি চাদর লন্ড্রী থেকে আসেনি! এত বড় হোটেল তাদের চাদরের অভাব! এর মধ্যে থানা থেকে ফর্ম আনলো সেটা পূরণ করা হোলো আবার থানায় জমা দিতে গেল হোটেলের লোক। আর আসেনা। ক্লান্তিতে, ঘুমে পড়ে যাচ্ছি, বল্লাম 'রুম টা দেন আমরা একটু রেস্ট নেই'।

অনেক বার অনুরোধের পর রুমে নিয়ে গেল। চাদর ছাড়া বিছানা, গা ঘিন ঘিন করছে তার মধ্যে বসে আছি। বাপ ছেলে সোফায় বসা। আমার স্বামীতো পারলে তখনই ফিরে আসে, খালি রাতের বেলা ফেরার যানবাহন নেই। হোটেল খোজার ফাকেই একটা রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেয়েছিলাম তবে কি খেয়েছিলাম মনে পড়ছেনা।

মনের মধ্যে চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে কেন হোলো এমন!! আস্তে আস্তে তখন মনে পড়লো আসামের বিদ্রোহীদের কথা যারা ১৯৮৫ সাল থেকে গেরিলা যুদ্ধ করছে স্বাধীনতার জন্য এবং এরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকে বলে প্রশাসনের ধারনা। মনে হয় সেই জন্যই বাংলাদেশী নাগরিকদের উপর এত কড়াকড়ি। এত সময় লাগলো আমাদের ফিলাপ করা ফর্মগুলো থানা থেকে সই করে আনতে, মনে হোলো আমাদের সম্পর্কে তারা ঢাকা থেকে ক্লিয়ারেন্স আনালো! রাত এগারোটায় চাদর নিয়ে আসলো। মনটা ভীষন খারাপ লাগছে, বেড়ানোর সকল আনন্দটাই যেন মাটি হয়ে গেল। আসামের বিখ্যাত মশা কামড়ালেই ম্যালেরিয়া।

সেটা নিয়েও ভাবছিনা। চাদর বিছিয়ে দিল শুয়ে পড়লাম কিন্ত ঘুম আর আসেনা। ঘুমানোর আগে আরেকবার তার ঘোষনা 'শোনো সকালে উঠেই শিলং রওনা হবো সুতরাং ব্যাগ ট্যাগ খোলার দরকার নেই। ' আমার স্বামী এমনিতে খুবই ভালোমানুষ, যা বলি কখনও না করেনা,কিন্ত একবার জেদ ধরলে তা আর নড়চড়ের কোনো উপায় নেই। কাজীরাঙা অভয়ারন্যে বিখ্যাত এক শিং ওয়ালা গন্ডার।

আস্তে আস্তে মন থেকে ফিকে হয়ে আসছে ৭৮,৫২৩ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত আসাম যা কিনা অপরূপ ফুল ফলে শোভিত, কাজীরাঙা অভয়ারন্য যা কিনা বৈচিত্রময় প্রানী সম্পদে পরিপুর্ন, যেখানে আছে এক শিং ওয়ালা বিরল প্রজাতির গন্ডার, ডাকিনী যোগীনিদের কামাখ্যার মন্দির। চোখের সামনে থেকে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে সেই ভয়ংকর ব্রহ্মপূত্র নদ যা দেখতে আসা। বিখ্যাত ব্রহ্মপূত্র নদ আসামের ভৌগলিক ইতিহাস টা ভাবছি....। ভারতের উত্তর পুর্ব দিকে হিমালয়ের পদতলে আর মেঘালয়ের মাঝখানে অবস্হিত প্রাচীন প্রাগজ্যোতিষ বা কামরূপ বর্তমানে যা আসাম নামে পরিচিত যেখানে অনেক রাজবংশই শাসন করেছে। এর মধ্যে বিখ্যাত ছিল বর্মন রাজবংশ।

কামরূপ ছিল তার রাজধানী। বর্তমানে যা ডিব্রুগড়ে স্হানন্তরিত। গৌহাটি আসামের বানিজ্যিক এবং যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু। ভারতীয় রাজ্য ছাড়াও ভুটান আর বাংলাদেশের সীমান্তবেস্টিত আসাম কৃষিজাত পন্যের বিশেষ করে চা, পাট, তুলা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন প্রকারের অর্কিড ও অন্যান্য ফুলের চাষ হয় বানিজ্যিক ভাবে।

অর্কিড মিশ্র জাতিগোস্ঠি অধ্যুষিত আসাম এর অধিবাসীদের মধ্যে এক বিশাল সংখ্যক জনগোস্ঠি এসেছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ থেকে। এখানে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীস্টান সবাই একসাথে মিলেমিশেই আছে। খালি ভাবছি এতদুর আসলাম কিছু না দেখেই চলে যাবো! ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম বলতে পারিনা। চলবে.............. ছবিগুলো নেটের সৌজন্যে..। লেখকঃ মাহজাবীন জুন
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।