আমি মন্দ.... আমি ভাল....
নয় রাত ঘুমাতে পারিনি : আদালতে সাঈদী-মুজাহিদ
নয়া দিগন্ত, Sun 11 Jul 2010
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে নতুন করে রিমান্ডে নেয়ার জন্য গতকাল আদালতে নেয়া হয় : নয়া দিগন্ত
জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ আদালতে বলেছেন, গত নয় দিনের রিমান্ডে তাদের ঘুমাতে দেয়া হয়নি। রাতভর বসিয়ে রাখা হয়েছে। নামাজ পড়ারও সুব্যবস্খা করে দেয়া হয়নি। রাতে উচ্চ তাপমাত্রার বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। এতে তারা অসুস্খ হয়ে পড়েছেন।
আদালতে একই বক্তব্য তুলে ধরে জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতার আইনজীবীরা তাদের রিমান্ডে না নিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর আবেদন জানান। আদালত দুই নেতার আইনজীবী ও সরকার পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে রমনা থানার একটি মামলায় মঞ্জুরকৃত চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। তিন নেতার আইনজীবীরা বলেছেন, এভাবে লাগাতার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ আইনসম্মত নয়।
পল্টন থানার তিনটি মামলায় নয় দিনের রিমান্ড শেষে জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতাকে গতকাল শনিবার ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। বেলা ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে কড়া পুলিশ প্রহরায় সিএমএম আদালতে নেয়া হয় সাঈদী ও মুজাহিদকে।
প্রিজন ভ্যানে করে সাধারণ বন্দিদের মতোই তাদের আদালতে নেয়া হয়। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাদের বহনকারী প্রিজন ভ্যান আদালত কম্পাউন্ডে পৌঁছায়। সেখানে তাদের আধাঘন্টা কোর্ট হাজতে রাখার পর বেলা ৪টার দিকে এজলাসে উঠানো হয়। এ সময় দুই নেতাকে খুবই ক্লান্ত দেখাচ্ছিল।
আদালতে আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্খিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মশিউল আলম, অ্যাডভোকেট মো: আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট এফ এম কামাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, ইউসুফ আলী, শামসুল ইসলাম আকন্দ, লুৎফর রহমান আজাদ এবং অ্যাডভোকেট আবু সাঈদ মোল্লাসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী।
জামায়াতের দুই নেতাকে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট ড. আবদুুল মজিদের আদালতে নেয়া হয়। সেখানে তাদের আইনজীবীরা পল্টন থানার তিনটি মামলায় জামিনের আবেদন করেন এবং নতুন করে রিমান্ডে না দিয়ে আপাতত জেলহাজতে পাঠানোর আবেদন জানান। আদালত আসামি পক্ষের আবেদন নামঞ্জুর করে রমনা থানার গাড়ি পোড়ানো ও ফারুক হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এর আগেই গত ৩০ জুন ওই মামলায় দুই নেতার প্রত্যেকের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। জামায়াত নেতাদের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, সাঈদী ও মুজাহিদকে পুলিশ রিমান্ডে থাকাকালীন নয় রাত ঘুমাতে দেয়া হয়নি।
তাদের রাতভর বসিয়ে রাখা হয়েছে। মাথার ওপর উচ্চ তাপমাত্রার বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। এভাবে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের কারণে তারা খুবই অসুস্খ হয়ে পড়েছেন। তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এবং ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে নেই। তারা দুই নেতাকে জেলহাজতে প্রেরণ ও শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার আবেদন জানান।
আদালতে মুজাহিদ বলেন, রাতে ৩০০ ওয়াটের বাল্ব জ্বালিয়ে রাখা হয়। দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারি না। চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করতে হয়। কিন্তু সেই ব্যবস্খা নেই। তিনি আদালতকে বলেন, গ্রেফতারের সময় তার ব্লাড প্রেসার ছিল ৮০/১২০।
কিন্তু বর্তমানে প্রেসার ১০০/১৫০।
সাঈদী বলেন, তিনি বয়স্ক লোক। এভাবে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অসুস্খ হয়ে পড়েছেন।
দুই নেতাই তাদের রিমান্ডে না নিয়ে চিকিৎসার আবেদন জানান। আদালতে সরকার পক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্খিত ছিলেন দ্রুত বিচার আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট এম এ কামরুল হাসান খান আসলাম।
তিনি আদালতকে বলেন, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। আসামিদের ওপর কোনো নির্যাতন হয়নি। তাদের সসম্মানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা সুস্খ আছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা অনেক তথ্য দিয়েছেন।
এ কারণে তাদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। সরকার পক্ষের আইনজীবী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্র করছেন। এ সম্পর্কে তাদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, যুদ্ধাপরাধ মামলায়ও তাদের গ্রেফতার দেখানো হতে পারে। তবে অন্য মামলায় জিজ্ঞাসাবাদেও তারা অনেক তথ্য দিয়েছেন।
দুই নেতার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আদালত দুই নেতার সাথে আইনগত পরামর্শ করার অনুমতি দিলেও তড়িঘড়ি করে তাদের নিয়ে যাওয়ায় তারা আইনি পরামর্শ নিতে পারেননি। তিনি বলেন, কোনো মামলায় রিমান্ড শেষে শারীরিক অবস্খা পরীক্ষা ছাড়া পরবর্তী রিমান্ড আইনানুগ নয় এবং তা অমানবিক। শারীরিক পরীক্ষার পর তাদের আবার রিমান্ডে নেয়া উচিত ছিল।
রমনা থানার গাড়ি পোড়ানো মামলায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পাওয়ার পর পুলিশ দুই নেতাকে প্রিজন ভ্যানে উঠিয়ে আবারো ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
গত ২৯ জুন জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া সংক্রান্ত একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়।
পর দিন ৩০ জুন ওই মামলায় জামিন দেয়া হয় তিন নেতাকে। কিন্তু ওই দিনই আরো আটটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয় তাদের। এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় পৃথকভাবে প্রত্যেককে ৫৮ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত পাঁচটি মামলায় মোট ১৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে পল্টন থানার তিনটি মামলায় নয় দিন, রমনা থানার একটি মামলায় চার দিন এবং উত্তরা থানার একটি মামলায় তিন দিনের রিমান্ড প্রদান করা হয়।
পল্টন থানার তিনটি মামলায় নয় দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল সাঈদী ও মুজাহিদকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই থানায় দায়েরকৃত রাষ্ট্রপতির গাড়িবহরে বাধাদান সংক্রান্ত মামলায় নিজামীকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গতকাল সাঈদী ও মুজাহিদকে আদালতে হাজির করে রমনা থানার মামলায় আগেই মঞ্জুরকৃত চার দিনের রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
রমনা থানার যে মামলায় সাঈদী ও মুজাহিদকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে ওই মামলাটি দায়ের হয়েছে গত ২৬ জুন মগবাজার এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে অগ্নিসংযোগের ঘটনায়। বিএনপি আহূত ২৭ জুনের হরতালের আগের রাতে ওই গাড়িটিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় ফারুক হোসেন ও সুমন নামের দুই যুবক অগ্নিদগ্ধ হয়। ১ জুলাই ফারুক মারা যান। ঘটনার পর মির্জা আব্বাসকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরো অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়। রমনা থানা পুলিশ গত ৩০ জুন আদালতে উপস্খাপিত আবেদনে উল্লেখ করে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে সিআর মামলা নম্বর ১০১২/১০, ধারা ২৯৮/১০৯ পেনাল কোডের গ্রেফতারি পরোয়ানা বলে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
আসামিদের ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় গত ২৭ জুন বিএনপি আহূত দেশব্যাপী সকাল-সìধ্যা হারতাল কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ওই আসামিসহ যুবদল, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় ২৬ জুন রাত ৯ টার দিকে টঙ্গী ডাইভারশন রোডের রেল ক্রসিংয়ের উত্তর পাশে তালতলা গলিতে পার্কিং করা একটি প্রাইভেট কারে (ঢাকা মেট্রো ক-০৩-৯৩৭১) আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ওই গাড়ির চালক সুমন ও যাত্রী ফারুক আগুনে পুড়ে মারাত্মক জখম হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। প্রাইভেট কারটি পুড়ে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। রাত পৌনে ১১টার দিকে মগবাজার ডাক্তার গলির মুখে পার্কিং করা ঢাকা মেট্রো জ-১১-২০৮৯ নম্বরের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এতে গাড়িটি পুড়ে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। পুলিশ আদালতে পেশকৃত আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছে, আসামিরা ২৬ জুন সìধ্যার পর ঘোষণা দেন একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে পারলে তিন হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। তাদের এই উসকানিমূলক বক্তৃতা ও নির্দেশনা, পরিকল্পনা, মদদ দান ও অর্থায়নের কারণে রাতে পার্কিং করা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্খিতির অবনতি ঘটানোর লক্ষ্যে ওই ঘটনা ঘটানো হয়।
পুলিশ আবেদনে উল্লেখ করে আসামিদের পুলিশ হেফাজতে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা কাদের ইìধনে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন তা উদঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহপূর্বক তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ড প্রয়োজন।
ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।