বাংলায় কথা বলি,বাংলায় লিখন লিখি, বাংলায় চিন্তা করি, বাংলায় স্বপ্ন দেখি। আমার অস্তিত্ব জুড়ে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ।
(প্রথম আলো, ১১ জুলাই ২০১০)
তাঁর বয়স ১১০ বছর। তবে এটিই কেবল তাঁর ব্যতিক্রমী দিক নয়। দীর্ঘ জীবনে একে একে
২২টি বিয়ে করেছেন তিনি।
বাবা হয়েছেন ৭৪ জন সন্তানের। এখন সর্বশেষ স্ত্রী নিয়ে সংসার করছেন এই শতবর্ষী। এই ঘরে তাঁর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
বাকি ২১ জন স্ত্রী ও ৬৯ জন সন্তান রয়েছে কেবল তাঁর হিসাবের মধ্যে। তাঁরা কে কোথায় আছেন, সবাই বেঁচে আছেন কি না, তা তিনি বলতে অক্ষম।
এই শতবর্ষী ব্যক্তিটি হলেন আরজুমন্দ আলী। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর প্রতাপপুর এলাকার দুর্গম পান্থরাই গ্রামের বাসিন্দা তিনি।
বয়সের কারণে আরজুমন্দ আলী ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। তবে কথাবার্তা এখনো গুছিয়ে বলতে পারেন। ব্রিটিশ আমলে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন।
পত্রপত্রিকা, বইপত্র তিনি চশমা ছাড়াই পড়তে পারেন। ব্রিটিশ আমলে টানা ১৫ বছর সরকারি চাকরি করার কল্যাণে তিনি ভালো ইংরেজিও বলেন।
গতকাল শনিবার দুপুরে আরজুমন্দ আলীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর কাছে শোনা যায় এই ২২টি বিয়ের কাহিনি। পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী এসব বিয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেন। নিজের বহুবিবাহ নিয়ে এখন খুব অনুতপ্ত আরজুমন্দ আলী।
প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি বড় মনঃকষ্টে আছি। আমার জীবনে মহা ভুল একের পর এক বিয়া করা। এই যুগে যেন কেউ আর এই রকম বিয়া না করে। বাইচ্চাও যেন দুইটার অধিক না নেয়...!’
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আরজুমন্দ আলীর জন্মসাল তাঁদের হিসাবের মধ্যে নেই। বাংলা ১৩৩৬ সালে ঘটা প্লাবনের সময় তাঁর বয়স ছিল ২১ বছর।
তখন তিনি প্রথম বিয়ে করেন। তখন তিনি ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত সেন্ট্রাল ফুড অ্যান্ড রিলিফ কাউন্সিলের বেতনভুক সদস্য ছিলেন। পেশাগত কারণে তখন তিনি বগুড়ায় ছিলেন। প্রেম করে বিয়ে করেন পিয়ারুন নেছা নামের এক তরুণীকে। কিন্তু বগুড়া থেকে পিয়ারুন নেছা তাঁর বাড়িতে আসতে রাজি না হওয়ায় স্ত্রীকে রেখে তিনি চলে আসেন।
এরপর বাবার পছন্দে সিলেটের খাদিম এলাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন আরজুমন্দ আলী। তিন সন্তান জন্ম নেওয়ার পর দ্বিতীয় স্ত্রী ছমিরুন নেছা মারা যান। এরপর ভবঘুরে বনে যান তিনি। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে তিনি কবিগান লিখতেন আর গাইতেন। এ সময় তিনি একের পর এক বিয়ে করতে থাকেন।
সিলেট, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় তিনি বিয়ে করেন। আরজুমন্দ আলীর ভাষ্য, স্ত্রীরা কেউ তাঁর সঙ্গে আসতে রাজি না হওয়ায় তাঁদের ছেড়ে আসতে বাধ্য হন তিনি। ৭৫ বছর বয়সে নূরজাহানকে শেষ বিয়ে করেন আরজুমন্দ আলী। এখন তাঁকে নিয়েই সংসার করছেন।
আরজুমন্দ আলী জানান, অন্য স্ত্রীরা এখন কে কোথায় কীভাবে আছেন, তাঁদের মধ্যে কয়জনই বা বেঁচে আছেন, তা তাঁর জানা নেই।
বাকি সন্তানেরা কে কীভাবে আছেন, তাও তিনি জানেন না। এ কারণে বহুবিবাহ নিয়ে তিনি অনুতপ্ত।
আরজুমন্দ আলীর স্ত্রী নূরজাহান (৪৬) জানান, বহুবিবাহের কারণে এক ধরনের অনুশোচনায় ভুগছেন তাঁর স্বামী। নূরজাহানের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। ছোট সন্তানের বয়স সাত বছর।
বড় দুই ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তাঁদের ঘরে তিন নাতি-নাতনি রয়েছে।
বড় ছেলে আখলাছ মিয়া (৩২) বলেন, তাঁর বাবা যে ভুল করেছিলেন, তা তিনি অকপটে স্বীকার করেন। এ জন্য বাবার প্রতি তাঁদের ক্ষোভ নেই।
পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফয়জুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আরজুমন্দ আলীর বহুবিবাহের কথা লোকমুখে ফিরলেও তিনি সরল ও বয়স্ক বলে এ নিয়ে এলাকার কেউ বিদ্রূপ করে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।