রাইট ব্যাক থেকে হঠাৎ ফাঁকা জায়গায় বলটা পেয়ে গেলাম। সামনে শুন্যের হাহাকার,কোন ডিফেন্ডার নেই। চারিদিকে শুধু কানে আগুন ধরানো আর মেজাজ গরম করানো ভুভুজেলার শব্দ। সেই শব্দ যেন সুর তুলে আমাকে অর্ডার দিচ্ছে “দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিস টা কি? খিচ্চা দে দৌড়! ”
তাই করলাম। দিলাম বলটা নিয়ে দৌড়, আমার পিছনে সমান তালে এক গাদা ডিফেন্ডারও তাই করলো, তাদের পিছনে পুরো দুনিয়া।
মনে হচ্ছে তাদের সারা জীবনের সহায় সম্পত্তি নিয়ে আমি পালাচ্ছি। যে করে হোক আমার পা থেকে তাদের সেই সম্পত্তি পূণঃদখল করতেই হবে। তাতে তাদের জান যায় যাক!
ওদিকে আমি আমার জান নিয়ে দৌড়াচ্ছি গোলপোস্টের দিকে। মানুষের জান থাকে তাদের বুকের ভেতর, আর আমার জান-জীবন সবই আছে এখন পায়ের কাছে থাকা এই বস্তুটিতে। যদি কোনভাবে এটিকে তার ২৪ ফুট দৈর্ঘের লহ্মে ঢুকাতে না পারি , তাহলে আমার কোচ, মিডিয়া, প্রাক্তন বর্তমান মিলিয়ে ৮ জন গার্লফ্রেন্ড........এমন কি পাশের বাড়ীর মোটা আংকেল, সবাই আমার অগ্রে এবং পশ্চাতে থাকা চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করবে।
এসব ভাবছি আর দৌড়াচ্ছি, চোখ পড়ল আমার চিড়শত্রু দিকে। আমার দিকে তেড়ে আসছে। ভাবটা এমন যে আর এক পা এগোলে আমাকে গিলে খাবে। হাত-পা-ঠ্যাং সব যেভাবে ছড়িয়ে রেখেছে, ব্যাটা পারলে এক্সট্রা কিছু হাত-পা লাগিয়ে নেয়। আমার মনে হলো আমি ওর মনের কথা শুনতে পাচ্ছি, বলছে “আমি এখনও দুনিয়ার বাইচা আছি।
আর আমি বাইচা থাকতে তুই দিবি গোল! আয় দেখি। ”
গোলকিপারের এহেন অগ্নিমুর্তির তাপ মনে হয় আমার সাহসের মোমটা কিছুটা গলিয়ে দিল। তবুও বুকের standby সাহসটা reload দিয়ে করলাম কিক।
কিপারের বা পাশ দিয়ে বলটা চলে যাচ্ছে। হার্টবিট মনে হয় এই আধা সেকেন্ডে ১০০ বার আপ ডাউন করে ফেলল।
গোলটা কি হয়েই যাচ্ছে?
এই ৮৯ মিনিটে স্কোরটাকে ২-২ থেকে ৩-২ এ নিয়ে আমিই কি হতে যাচ্ছি দেশের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক? পেলে-ম্যারাডোনার পাশে কি যুক্ত হতে যাচ্ছে আরো একটি নাম?
মুহুর্তের এই ভাবনার বেলুনটা ফটাশ করে ফুটিয়ে দিল একটা ঠ্যাং , গোলকিপারের ঠ্যাং। এই জিনিসটা কোথা থেকে এসে বলটা কে তার শান্তির নীড়ের জালে জড়াতে দিল না, মানুষের লাথি-গুতা-ঠূয়া থেকে কয়েক কয়েক মিনিট রক্ষা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হল বেচারা। এখন পর্যন্ত পুরো ম্যাচে মাত্র ২+২=৪ বার এই শান্তি খুজে পেয়েছে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি লাথি খাওয়া এই গোলাকার বস্তুটি। আরো একবার সেই শান্তির ব্যবস্থাই তো আমি করেছিলাম। কিন্তু আভাগার দুঃখ কে বোঝে?
কি নির্মম মানুষ! কি নিষ্ঠুর এই গোলকিপার!
কপাল পুড়লো আমার।
পেছনে ফিরে দেখলাম কোচ মাথায় হাত দিয়ে লাফাচ্ছে। আমার সতীর্থদের মাথায়ও হাত। সবার যখন মাথায় হাত, তখন আমি কেন বিরত থাকব? এখন কৈ মাছের মত একটু লাফালাফি না করলে তো ফেডারেশন কোচের সাথে আমাকেও বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গুড বাই বলে দেবে। আগত্য আমিও মাথায় হাত দিয়ে চিৎকার দিলাম “বুল সিট !”
মাথায় হাত দিয়ে মনে পড়লো- গোল যখন মিস হল তাহলে তো এখন কর্নার কিক হবে, মানে হেড করা, আর হেড করা মানে হেয়ার স্টাইলটা নষ্ট।
ইশ! কত গ্যালন জেল দিয়ে চুলটা সেট করেছি।
এত কষ্ট বৃথা যাবে?
তারচেয়ে বরং হাত দিয়ে গোল দেয়ার একটা চেষ্টা করে দেখলে কেমন হয়?
মুহুর্তেই রেফারির বিশাল টাক মাথার নিচে শকুনের মত চোখ দুটো দেখে আইডিয়াটা বাতিল করে দিলাম।
কর্নার থেকে বাতাসে বলটা বাতাসে ভাসলো।
এই সারছে! বলটাতো দেখি আমার দিকেই আসছে রে! এটা আমাকে এত পছন্দ করে! এই ডি বক্সের ময়দানে মোরগ লড়াই এ নামা ২১ টা মুরগি রেখে ফাটার জন্য ডিমটা আমার মাথাই পাইলো?
কি আর করা? দিলাম লাফ।
লাফ দেবার সাথে সাথে কোথা থেকে এক গ্লাস বৃষ্টি এসে আমাকে ভিজিয়ে দিল। পাশে তাকিয়ে দেখলাম গোলপোষ্টের পেছনে গ্যালারীতে একটা খালি গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে মা বলছে “আর কত ঘুমাবি? ওঠ তাড়াতাড়ি।
পরীহ্মা দিতে যাবি না? ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।