ডঃ মোকাম্মেল সাহেব স্বপরিবারে অস্ট্রেলিয়া থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ছোট মেয়ে ডাঃ মোমতাহিনার বিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসা। নিউ মার্কেট এলাকায় পৈত্রিক বাড়িতে উঠেন। ছোটবেলার ঢাকার সাথে বর্তমান ঢাকার কোন মিল খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
পানিতে দূর্গন্ধ, প্রচন্ড গরম, বিদু্যতের মাত্রাতিরিক্ত লুকোচুরি, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, অসহনীয় যানজট, মানুষের উগ্র ব্যবহার প্রভৃতি কারণে অল্প কয়দিনেই যেন ঢাকায় তার দমবন্ধ হয়ে আসছে।
তিনি বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেন নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে যে যেভাবে পারছে সে সেভাবে টাকা কামাই করে নিচ্ছে! রাষ্ট্র কিংবা জনগণের কল্যাণের কথা ভাববার সময় যেন কারো নেই! প্রত্যেকের চোখে-মুখে শুধু যেনতেনভাবে টাকা কামাইয়ের নেশা! গোটা সমাজটাই যেন ভোগের নেশায় বিভোর! ত্যাগের মহিমা তার চোখে পড়ে না যেমনটি তিনি তার কৈশোরে দেখেছেন।
নিরীহ টাইপের এক আমলার ইঞ্জিনিয়ার ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন। ছেলের বাবা সারাজীবন দেশের সেবা করেছেন নিজের সেবা করার সুযোগ কখনো খুঁজেননি বা খোঁজার চেষ্টাও করেননি। ফলে আর্থিক অবস্থা চোখে পড়ার মতো না তথাপি ছেলের বাবার সততা এবং ছেলের সুকুমারবৃত্তির কারণেই মূলত বিয়েটা ফাইনাল করে ফেলেন তিনি।
অবশ্য কয়েকজন আত্মীয় এতে অমত করেছিলেন এই বলে যে, আজকাল শুধু সততা আর শিক্ষা দিয়ে 'জাতে' উঠা যায় না তাই টাকা পয়সার দিকটাও দেখতে হবে। কথা একেবারেই অমূলক না। আমাদের সামাজে আজ অর্থ দিয়েই মানুষের যোগ্যতা পরিমাপ করা হয়। গবেট মূর্খ আর নিরেট সন্ত্রাসীর সাথেও ডাক্টার মেয়ের কিংবা এম.এ পাশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে শুধুমাত্র ছেলের উপর গৌরিসেনের আর্শিবাদ থাকার কারণে!
ডঃ মোকাম্মেল সাহেব শুয়ে শুয়ে টিভিতে বরিশালে ছাত্রলীগের নৃশংসতা দেখছেন আর ভাবছেন দেশটা কোথায় যাচেছ। এমন সময় তার মিসেস এসে বললো, এই শোন, কাল ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হবে।
এ কথা শুনে তার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে। যে ব্যাংকে তাদের একাউন্ট সে ব্যাংক থেকে টাকা তুলা আর হজ্বের সময় সাফা মারওয়া করা সমান কষ্টের! গত পরশু টাকা তুলতে গিয়ে তো তার প্রাণ বায়ূ ওড়াল দেয়ার অবস্থা! তিনি প্রিয়তমা স্ত্রীকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমার ফুফাত ভাই নিজাম ঐ ব্যাংকের হেড অফিসে আছে না? 'হ আছে ত'। তাকে বলে দাও, সে যেন ম্যানেজার সাহেবকে বলে রাখে আমরা কাল যাচ্ছি। এই গরমে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে টাকা উঠানো সম্ভব না।
নিজাম প্রফুল্ল চিত্তে তার ব্যাংকের ম্যানেজার সাহেবকে ফোনে অনুরোধ করে, তিনি যেন তার দুলাভাইকে চেম্বার সার্ভিস দেন।
ম্যানেজার সাহেব বললেন, ওকে, ওকে নিজাম তাদেরকে বলে দিবেন তারা যেন আমার চেম্বারে চলে আসেন। নিজামের ফোন পেয়ে ডঃ মোকাম্মেল সাহেবের মনে হলো মরুর প্রান্তরে জলাধার খুঁজে পেয়েছেন! স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ম্যানেজার সাহেবের চেম্বারে ঢুকে সালাম দিলেন।
ম্যানেজার সাহেব পত্রিকার পাতায় ডুবে আছেন। তাদের প্রতি ভালভাবে এটেনশন দেননি। মিনিট চারেক পরে মাথা তুলে থাকালেন এবং ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন, কী খেদমত? ডঃ মোকাম্মেল সাহেব বললেন, আমি নিজামের দুলাভাই।
ম্যানেজার সাহেব বললেন, টাকা উঠাবেন? জ্বী। কত টাকা? দু'লাখ। এবার ম্যানেজার সাহেব নীচের ঠোট বাঁকা করে উপরের দিকে তুলে তাচ্ছিল্যের সাথে বললেন, দু'লাখ টাকা কোনো টাকা হলো? এটার জন্য চেম্বারে আসতে হয় নাকি? যান, লাইনে দাড়িয়ে উঠিয়ে নেন!!
********
তখন মাদারকেট এলাকায় থাকতাম। স্ত্রীকে একজন মহিলা ডাক্টারের চেম্বারে নিয়ে গেলাম। তিনি ধাত্রী বিদ্যায় অভিজ্ঞ।
সন্ধ্যে ৭টায় তাঁর আসার কথা। অথচ ৬টার পরপরই চেম্বার কানায় কানায় পূর্ণ। সাড়ে ৭টায়ও তিনি আসেন নি। রোগিনীরা অস্থির। আমার 'হেঁতি' সংক্ষুব্ধ অবস্থায় একবার বসছে একবার উঠছে।
মাঝে মাঝে আমার কাঁধে মাথা রেখে জোরে জোরে হাত চেপে ধরছে। বললাম, এমন করছো কেন? পেটের দিকে ইশারা দিয়ে বললো, মনে হয় তোমার দুষ্টুটা ডিবগবাজি খেলছে! কিন্তু ফাউল করে আমার কলিজায় লাথি মারছে! বললাম, কলিরকালের সোনারচানেরা এমন একটু আধটু ছটপট করেই। ধৈর্য ধরো!
অসহ্য যন্ত্রনায় অন্যান্য রোগিনীরাও ছটপট করছে। কিন্তু ডাক্টার আপার কোনো হদিস নেই! এক ঘন্টা দশ মিনিট লেইট করে হঠাৎ কালো মেঘ ভেদ করে উদয় হলো কাঙ্খিত শশী! ডাক্টার ম্যাডামকে দেখে সকলের মাঝেই স্বস্তিরভাব ফিরে আসে। ডাক্টারকে দরজায় দেখেই একজন রোগিনীর মা বললেন, আপা আপনি বড্ড দেরী করে এসেছেন! ইষৎ রেগে মুখে বিরক্তিভাব ফুটিয়ে ডাক্টার আপা ঝাঁঝ কন্ঠে চটজলদি জবাব দিলেন, কেন এটা কি আমার চাকুরী নাকি? এটা তো আমার নিজের চেম্বার!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।