আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লুল কিংবা তেতুল

আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান-বুকে একে দেব পদচিহ্ন/ আমি স্রষ্টা-সূদন, শোকতাপ-হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন

""লুল কিংবা তেতুল"" সাকিব সম্প্রতি কিঞ্চিত ক্যাচালে আছে। ক্যাচালের নাম কুলসুম; কুলসুম বানু। এই ভয়াবহুস্টিক ক্যাচাল তার গলায় মুক্তোর মালার মত যেই মহান ব্যক্তি ঝুলিয়ে দিয়েছেন, তিনি রবিন ভাই। রবিন ভাই ফেসবুকে নোট আকারে কিছুদিন পরপর চর্যাপদ টাইপের কিছু কিছু লেখা আপলোড করেন। সেই লেখার টাইটেলে থার্ড ব্রাকেটের মাঝে 'গল্প' লেখা থাকে বলে বোঝা যায় সেটা গল্প।

যদি তিনি সেটা লিখে না দিতেন, তবে সেই লেখা ঠিক কী তার মর্মোদ্ধার করতে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে কবর থেকে উঠে আসতে হত। সাকিবের মাঝে মাঝে মনে হয়, ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কেও যদি কখনও রবিন ভাইয়ের লেখা পড়তে দেয়া হয়, তবে তিনিও সিদ্ধান্ত নেবেন এসব চর্যাপদেরও আগে লেখা বাংলা ভাষার আদিতম নিদর্শন। বাংলা সাহিত্য নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি রবিন ভাইকে একুশে পদক দেয়ার প্রস্তাবও করতে পারেন। আর এখন ক্ষমতায় আছে লীগ। রবিন ভাইয়ের বাড়ি ফরিদপুর।

জেলা কোটায় একুশে পদক পেয়েও যেতে পারেন। মঞ্চে উঠে রবিন ভাই ভাষণ দেবেন, “আমার এই সফলতার পেছনে যেই মহান মানুষটির চেতনা কাজ করছে, তার নাম বঙ্গবন্ধু...”। মজার ব্যাপার হচ্ছে, রবিন ভাইয়ের এইসব দুর্বোধ্য এবং অতি উচ্চমার্গীয় (!) লেখা পড়ে তার কিছু ফ্যান জন্মে গেছে। তারা গল্প পড়ে, “ওয়াও!”, “হাউ সুইট” কিংবা “ভেরি নাইস” টাইপের কমেন্ট করে। কুলসুমও রবিন ভাইয়ের সেই টাইপের ফ্যান।

ফ্যানের স্তর পার হয়ে সে এখন রবিন ভাইয়ের এয়ারকুলার হবার চেষ্টায় আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, রবিন ভাইয়ের অবিবাহিত বউ বিদ্যমান। তার নাম তৃষা। দেখতে একেবারে ডানাকাটা পরী। রবিন ভাইয়ের ধারণা, বাসর রাতে ভাল করে খুঁজলে তার পিঠে ডানা কেটে ফেলার চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে।

এমন বউ রেখে বিলকিসের দিকে তাকানোর প্রশ্নই ওঠে না। সুতরাং, রবিন ভাই সাকিবকে বললেন, “সাক্কু, বুঝিসই তো। সিম্পল একটা মামলা। তুই একটু সামলা। এখন থেকে আমার আইডি আমরা দু'জনে চালাব।

তুই কুলসুমকে দেখবি। আমি বাকি সব। ” শুনে সাকিবের চোখ চকচক করে ওঠে। বাড়িতে অবিবাহিত বউ সাকিবেরও আছে। নাম বিলকিস।

সেটা ব্যাপার না। সাকিব ফেসবুকের কিংবদন্তি লুল সালেহ তিয়াসের শিষ্য। সে সালেহ তিয়াসের এমনই হার্ডকোর ফ্যান যে, সালেহ তিয়াসের মত করে নিজের স্ট্যাটাসে নিজেই লাইক দেয়। নিজের স্ট্যাটাসে নিজেই লাইক দেয়া না'কি সালেহ তিয়াসের সাইন। সাকিবও সেটা অনুসরণ করে।

তার এমন শিষ্য হয়ে একাধিক রমণীকে সামলাতে না পারা কোন কাজের কথা না। সুতরাং, রবিন ভাইয়ের সাথে সাকিবের ডিল হয়। প্রেম চলতে থাকে। ঠেলাগাড়ির মত চলতে শুরু করে একসময় সেটা মার্সিডিজ বেনজ হয়ে যায়। তিনশ কিমি স্পিড তুলে চলতে শুরু করে এরোপ্লেনের মত উড়াল দেয়।

কুলসুমকে ভালমত পটানো হয়ে গেলে, সাকিব তাকে নিজের পরিচয় দিয়ে দেয়। বলে সেও রবিন ভাইয়ের মত লেখালেখি করে। কুলসুমও দেখে, রবিন ভাই তাকে পাত্তা দেয় না। তাই তার পেছনে লেগে থেকে লাভ নেই। সাকিবই ভাল।

সাথে সাথে কুলসুম সাকিবের কোন লেখা না পড়েই “ওয়াও!”, “হাউ সুইট” বলতে শুরু করে। সাকিব কুলসুমের সাথে প্রথম এবং নিজের জীবনের সাতশ বত্রিশতম ডেটে যায়। কিন্তু, কুলসুমের জীবনে এটাই প্রথম। সে কিছু ঠিক করতে না পেরে, তার মা'কে নিয়ে আসে। সাকিবের মত পিচ্চি ছেলে দেখে কুলসুমের মা রেগে মেগে মিগ বিমানের ফায়ার হয়ে যান।

সাকিব কুলসুম দু'জনকেই দু'টো রাম থাবড়া মারেন। থাবড়া খেয়ে সাকিব ম্যা ম্যা করে কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে চলে যায়। সেই কান্না দেখে কুলসুমের বুক ভেঙ্গে যায়। সাকিব বাসায় ফিরে স্ট্যাটাস দেয়: কাঁচা তেঁতুল খাইতে গিয়া খাইলাম আমি চড় কুলুর মাম্মি তুই অহনি ট্রাকের তলে পড় কুলসুম সেই স্ট্যাটাসে লাইক দেয়। কমেন্ট করে, “জান্টুশ, আমার সান্টুশ, প্লিজ প্লিজ প্লিজ তুমি রাগ কোরো না।

আমার আম্মু এই এত্তগুলা পচা। তুমি চলে যাবার পর আমার চোখের পানিতে আমাজন নদ তৈরি হয়েছে। তুমি ফেসবুকের ব্রেকিং পেইজটা দেখ। শিরোনাম আছে - বাংলাদেশে সৃষ্টি হল বিশ্বের দ্বিতীয় আমাজন নদ। প্লিজ তুমি আমাকে একটা কল দাও।

আমি তোমার কলের জন্য ওয়েট করে অপেক্ষা করছি। ” এই কমেন্ট চোখে পড়ে সাকিবের অবিবাহিত বউ বিলকিসের। সাথে সাথে সে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে তেগুনী হয়ে যায়। সে সাকিবকে কল করে বলে, “তুমি... তুমি... তুমি... আর কখনও আমাকে কল করবা না। তুমি থাকো তোমার ওই কুলসুম বানুকে নিয়ে।

তুই... তুই... আর একবার আমার সামনে আসছি তো তোকে... তোকে আমি... টুট... টুট... টুট...” বলেই ফোন কেটে দেয়। ফেসবুকেও সাকিবকে ব্লক করে। সাকিব গিয়ে হামলে লুল সম্রাট সালেহ তিয়াসের কাছে। তিয়াস ভাই তাকে আশ্বস্ত করেন, তিনি সবকিছু সামলাবেন। এদিকে সাকিবও তার বন্ধুকে দিয়ে কুলসুমকে ফোন করে বলে, “সাকিব, বাংলাদেশের সৃষ্টি হওয়া দ্বিতীয় আমাজন নদে ডুবে মারা গেছে।

” সেই খবর শুনে কুলসুমের হৃদয় বিদারী চিৎকারে আকাশ পাতাল প্রকম্পিত হয়। বাংলাদেশে তৃতীয় আমাজন নদের সৃষ্টি হয়। এদিকে তিয়াস ভাই কাহিনী সামলানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। তিয়াস ভাইয়ের পাক্কা পাঁচ হাজার ফ্রেন্ডের বিশাল ফ্রেন্ড-লিস্ট। এই ফ্রেন্ড-লিস্ট বানাতে গিয়ে তিনি বর্তমানে ত্রিশ দিনের ব্লকে আছেন।

কিন্তু, কাজের কথা হচ্ছে বিলকিস তার ফ্রেন্ড-লিস্টে আছে। সে মাঝে মাঝে তিয়াস ভাইয়ের থ্রিলার পড়ে কমেন্ট করে, “দুঃখে চোখে পানি চলে আসল” কিংবা টুইস্ট পড়ে কমেন্ট করে, “কাহিনীর সহজ সরল বর্ণনা ভাল লাগল। ” এবার খোদ তিয়াস ভাই গিয়ে বিলকিসের প্রোপিকে কমেন্ট করলেন, “খাসা তেঁতুল। ” সালেহ তিয়াসের মত সেলিব্রেটি তার প্রোপিকে কমেন্ট করেছে দেখে বিলকিসের ভাবে আর মাটিতে পা পড়ে না। সে তিয়াস ভাইকে নক করে।

“হাই, হ্যালো। কারেন্ট গেলো। ” টাইপ কথা দিয়ে তাদের চ্যাটিং চলতে থাকে। বিলকিসের মনে হয় তিয়াস ভাই তার কত দিনের চেনা। মনের সব কথা তার সাথে শেয়ার করা যায়।

সে তাকে সাকিবের কথা বলে। বলে যে, “সে থাকতে সাকিব অন্য একটা মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে। ” তিয়াস ভাই বলেন, “সাকিবকে তো আমি খুব ভাল করেই চিনি। ওর কাজই তো ফেসবুকে সব মেয়েদের সাথে লুলামি করে বেড়ানো। তোমার আগেও সাত-আটশ মেয়ের সাথে ওর রিলেশন ছিল।

” বিলকিস তব্ধিত হয়ে বলে, “কী বলেন ভাইয়া!” তিয়াস ভাই সাথে সাথে শুধরে নেন, “ইয়ে মানে, সাত আটটা মেয়ের সাথে। তবে খুবই ক্লোজ রিলেশন। তুমি ছোট। তোমাকে এসব না বলাই ভাল। ” বিলকিসের মনে হয় মানুষটা কত ভাল।

সাকিবের মত বজ্জাতের সাথে দেখা হবার আগে যদি এর সাথে পরিচয় হত, তাহলে তার আজকে এভাবে কপাল পুড়ত না। অবশ্য তার কপাল সব সময়েই পোড়া। একবার মাছ ভাজতে গিয়ে গরম তেল ছিটকে এসে কপালে লাগল। সেই পোড়া দাগ আজও উঠল না। দিনে দিতে তিয়াস ভাই আর বিলকিসের চ্যাটের পরিমাণ বাড়তে থাকে।

মাস-খানেক পরে লুলসম্রাট সালেহ তিয়াসের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ হয়। সেখানে ভেসে ওঠে - In a relationship with Princes Belkes. সেটা ভেসে ওঠে সাকিবের ওয়ালে। সাকিব স্ট্যাটাস দেয়: দুই তেঁতুলের চিপায় পড়ে করলাম আমি ভুল ফেসবুকের এই নীল আর সাদায় সবাই যে হয় লুল সেই স্ট্যাটাসে তিয়াস ভাই আর রবিন ভাই দু'জনেই লাইক করে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।