দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল...
ফেইসবুকে এই ব্যানারটা দেখলাম। আমার এফবি বন্ধুরা শেয়ার করছেন। কারন, বাংলাদেশে ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শন সংক্রান্ত। এ নিয়ে শুনেছি সরকার কি সব চুক্তি করে ফেলেছেন।
দেশের সিনেমা হল গুলোতে ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র! কি চুক্তি, কিভাবে ভারতীয় ছবির আমদানী, বছরে তার পরিমানইবা কি, কেবল ভারতীয় ছবি আমদানী নাকি বিদেশী ছবি আমদানী আইনকানুন কিছুই জানি না। কেবল শুনছি গেল গেল বাংলা সিনেমা গেল! আটকাও, বন্ধা কর। কেবল স্টপ এন্ড সেইভ, আর আমার বন্ধু রাশেদ এর চোখ বাঁধা ছবি।
বাংলাদেশের সিনেমা প্রেমী এক দল মানুষ তাই একটা অনলাই ক্যাম্পেইনে নেমে পরেছেন। বিভিন্ন গ্রুপে বিভিন্ন পোষ্ট লিখে আর কভার ফটো প্রোফাইল ফটো দিয়ে তাঁরা জানাতে চাচ্ছেন তাদের কথা।
বলতে চাচ্ছেন কতৃপক্ষকে, ঠিক হচ্ছে না এটা ঠিক হচ্ছে না। এই কভার ফটোটিও সেই প্রতিবাদের কথাই বলছে। এখানে আমার বন্ধু রাশেদ কে দিয়ে হয়ত বোঝানো হয়েছে সে বাংলাদেশের সিনেমা। তাকে চোখ বেঁধে মেরে ফেলা হচ্ছে। আমরা সকল বাংলাদেশীরা যেন এই হত্যা চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হই, রুখে দাড়াই।
বাঁচিয়েদেই মৃত্যুর হাত হতে বাংলাদেশের সিনেমাকে।
বুঝতে চেষ্টা করি কিভাবে বাঁচাবো আমরা বাংলাদেশের সিনেমাকে? বাংলাদেশের সিনেমার প্রতি আমার এই ফেইসবুকের বন্ধুদের ভালোবাসার প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। আমি সবসময় আনন্দের সাথে দেশী সিনেমা নিয়ে অন লাইনে তাঁদের নানান ভাবনাচিন্তা ও কর্মকান্ড'র খোঁজ খবর রাখি। সম্প্রতি তাঁদের বাংলাদেশী সিনেমা রক্ষার প্রচারনাটি আমার চোখে পড়ল। আমাদেরে দেশে তেল গ্যাস রক্ষার জন্য আন্দোলন হচ্ছে, সুন্দর বন আর তার পরিবেশ বাঁচাবার আন্দোলন চলছে, দেশী সিনেমার জন্য ভালোবাসা নিয়ে এক্টিভিজম, সেত অনন্দের সংবাদ!
যেই ব্যানারটি দেখে কথা বলার ইচ্ছে জাগ্রত হলো সেই ব্যানার প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
আমার বন্ধু রাশেদের চোখ বাঁধা ছবি আর লিখা, 'বাঁচাও বাংলাদেশী ছবি'। এইটুকু দেখে আমার মনে হল, চোখ বাঁধা বাংলাদেশের সিনেমার চোখ খুলে দাও। বাংলাদেশের সিনেমাকে পৃথিবীটা দেখতে দাও। দেশের সিনেমাকে আর অন্ধকারে রেখো না। আর স্যাতস্যাতে সিনেমা হলের ভেতর হত্যা করো না আমাদের সিনেমাকে।
বাংলাদেশের সিনেমাকে আলো দাও বাতাশ দাও। বাংলাদেশের সিনেমাকে বেঁচে থাকতে দাও। এবার ব্যানারের উপরের লিখাটিতে চোখ পরল। সেখানে লিখা আছে, 'বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের স্বার্থে এখনই ভারতীয় ছবি আমদানী নয়'। এইটুকু পড়ে আমার মনে প্রশ্ন এলো, কেন শুধু ভারতীয় ছবি? কেন পৃথিবী'র আর কোন দেশের ছবি আমদানী নয়! আমিতো বাংলাদেশে বসে একটা কোরীয়ান ছবিও দেখতে চাই, একটা ইরনী ছবিও দেখতে চাই।
কেবল ইন্ডিয়ান ছবি নয় কয়টা ভালো ইটালীয়ান ছবি ও দেখতে চাই। এ বছর কান চলচ্চিত্র উৎসব এ যে ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেল সেই ছবিটি সিনেপ্লেক্সের একটি হলে দেখতে চাই। অস্কার পুরস্কারের বিদেশী ভাষায় পুরস্কারের জন্য মনোনীত ছবি গুলিও দেখতে চাই দেশের সিনেমা হলে বসে। দেখতে চাই ধুন্দুমার কোন হলিউডি ছবি। ছুটির দিনে মন চাইলে দল বেধে মধৃমিতায় যেয়ে চেন্নাই এক্সপ্রেসের মত কোন সিনেমাও দেখতে চাই অসুবিধা কি? প্রশ্ন আসে, দেখলামতো সবই তাহলে আমাদের দেশী সিনেমার কি হবে! আমারতো মনে হয় কেবল তখনি আমাদের দেশী সিনেমা মন্দ যাদুকরের মন্ত্র দেয়া দড়ি ছিড়ে বের হবার জন্য পথ খুঁজে বের করবে।
চোখ খুলে, হাত পা নেড়ে নিজেকে আবিষ্কার করবার চেষ্টা করবে বিশ্ব মাঝে। আর কত নিজের আঙ্গিনায় অলিক নিরাপদ এক বেষ্টনী বানিয়ে ধুলোকাঁদা মেখে খেলা? যেখানে পুরো দুনিয়া আজ অবারিত, এক টিপে চলে যাওয়া যায় বিশ্ব সিনেমার অপার ভূবনে! প্রায় ৫০ বছর যাবত বহুত হয়েছে, বোতলে করে দেশী সিনেমাকে সাগু খাওয়ানো। অর কত! গত দশ বারো বছরে বারোশ সিনেমা হল থেকে সাততো সিনেমাহল ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে। সিনেমার তীর্থ স্থান সিনেমা হল, সেই তীর্থ স্থান হতে হতে হয়েছে পুঁতি গন্ধময় এক গহব্বর। কোন কোন সিনেমা হলে ছবি দেখতে গেলে মনে হয় ময়লা আবর্জনায় পূর্ণ কোন নর্দমার ভেতর এসে পরেছি।
এই কি তাহলে বাংলাদেশের সিনেমার গন্তব্য! বুঝলাম এখনই আমদানী নয় তাহলে কখন? হল গুলির এই দুরঅবস্থা দূর হবে কোথা হতে কি দিয়ে! দেশের প্রায় সমস্ত সিনেমা হল হলো সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা থিয়েটার। যে পরিমান যায়গা নিয়ে একটা সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল শহর, বন্দর, গ্রামে, গঞ্জে অবস্থিত সেই পরিমান যায়গায় সিনেমা ব্যাবসার চেয়ে অন্য অনেক ব্যাবসায় অনেক লাভ পেতে পারেন যায়গার মালিক। হলের উন্নতি ত দূরের কথা তবে কেন শুধু শুধু হল নামক এই হাতিটি মালিক বিনা কারনে পুষে যাবেন?
ভারতের সাথে আমাদের কোন লেনদেনই জ্ঞানত পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা করে হয় না। এই সিনেমা নিয়ে যে লেনাদেনা হচ্ছে তাতেও আমাদের স্বার্থ জলাঞ্জলি যাবার সমুহ সম্ভাবনা। ভারতীয় পেঁয়াজ দিয়ে ভারতীয় গরুর গোস্ত রান্দা ছাড়া আমাদের কোরবানীর ঈদ হইতে চায় না।
এবারে কি তাহলে ভারতীয় সিনেমা দেখা ছাড়া আমাদের আগামী ঈদ ও উদযাপন করা যাবে না! ভয় শুধু এখানেই।
আমি বাংলাদেশের সিনেমা ব্যাবসা তথা সিনেমার ভবিষ্যত চিন্তা করে আমাদের দেশের হল গুলির আশু রোগমুক্তি কামনা করি। সেই প্রয়োজনে অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে সীমিত সংখ্যক বিদেশী ছবি( এই সুযোগে অব্যশ্যই কেবল ভারতীয় ছবি নয়) আমদানীর পক্ষে। বাংলাদেশের তথাকথিত বানিজ্যিক নির্মাতারা এফডিসির খোয়াড়ে বসে বসে দেশী সিনেমার বহুত উদ্ধার করার সময় পেয়েছেন গত ৪০/৫০ বছরে এবং এক সময় নামতে নামতে কোন নর্দমায় নেমে গিয়েছিলেন আমাদের দেখা আছে তা। কই নকল করাকরি তো আজও বন্ধ হলো না! আগেতো সিনেমা কার্বন কপি করার ইতিহাস আছে তার পর নকল গল্প আর গল্পাংশ।
অতঃপর গান/সুর এবং নকল করতে করতে সিনেমার নাম নায়কের নাম পর্য্যন্ত! নকল করে করে পরীক্ষায় পাশ করা যায় না। গত এক দশকে সাতশোর ও অধিক সিনেমা হলের জানাযা পড়া হয়ে গেছে। 'ওরে আমারে মাইরা ফেলাইলোরে, খাইয়া ফেলাইলোরে' করে আর কত ঠ্যাং ছড়িয়ে কাঁদবো আমরা? এবার একটু বড় হও বাংলাদেশের সিনেমা! অন্তত মুরদ দেখিয়ে বল,
আমরা নির্মাণ করবো আমাদের ভাষায় আমাদের সিনেমা।
সেই সাহস কি আমাদের নেই?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।