....
..................
.....................
(এই পোস্টটি এক সংগ্রামী ছেলেকে নিয়ে, ছোট্ট এ জীবনে যে পাড়ি দিয়েছে অনেক চড়াই উৎরাই, লেখাটি কয়েকটি পর্বে প্রকাশিত হবে। প্রথম পর্ব শুরু করলাম আজ থেকে)।
শীতের শুরুতে ভোর রাতে বাবা-মায়ের কোল আলো করে পৃথিবিতে এলো একটি ছেলে, জন্ম মাত্র সুতীব্র চিৎকারে পৃথীবিকে জানিয়ে দিল তার আগমন বার্তা। নানার বাড়িতে জন্ম, চিৎকার শুনেই হাসতে হাসতে ছেলেটির নানা বলল নাতি আমার দুনিয়া ফাটিয়ে ফেলবে।
বাবা-মায়ের আদরে বড় হতে লাগল ছেলেটি, কিছুদিন পরে ফিরে এলো দাদার বাড়িতে সেখানে তাকে নিয়ে শুরু হলো আরেক হুল্লোড়।
না সে পরিবারের বড় সন্তান নয়। দাদার বাড়িতে যৌথ পরিবার, অনেকগুলি চাচাত ভাইবোন তার আর নিজের বাবা মায়ের সে দ্বিতীয় সন্তান, তারপরও সবাইকে ছাপিয়ে সেই হয়ে উঠল সকলের নয়নের মনি।
সবার আদরের ধন এই ছেলেটি ছোট বেলা থেকেই ছিল খুবই মেধাবী, কোন জিনিস একবার দেখলে তা হুবহু করে দিতে পারত। পড়াশুনায় ও হয়ে ওঠে মারাত্নক মেধাবী, বাবা মা নার্সারীতে ভর্তি করে দিল গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, কিন্তু ছয় মাস না যেতেই শিক্ষকেরা তাকে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করেনিল, আর বছর শেষে তাকে আর দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়তে হলো না সোজা তৃতীয় শ্রেণীতে, অথচ তার বয়স তখন মাত্র ছয় বছর ২ মাস।
পড়াশুনায় মেধার পাশাপাশি ছেলেটি ছিল অসম্ভব রকমের জেদি।
সে যা একবার চাইবে তা তাকে পেতেই হবে। তার এই জিদের কারনে বাবা মায়ের কাছে অনেক সময় অনেক বকুনি এমনকি মার ও খেতে হয়েছে। ছেলেটি এভাবে বেড়ে উঠতে উঠতে পঞ্চম শ্রেণীতে উঠল, তার কিছুদিন আগেই ছেলেটিদের যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবারে রুপ নিল। কৃষক বাবা কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং পরিবারে তিনিই ছিলেন একমাত্র উপার্জন ক্ষম ব্যক্তি। হঠাৎ একদিন বাবা অসূখে পড়লেন, যেমন তেমন অসূখ নয় বাবার শরীরের বাম অংশ পক্ষাঘাতে পড়ল, চিকিৎসার পিছনে তখন উড়ছে লাখ লাখ টাকা, জায়গা জমি বিক্রি করে চলছে বাবার চিকিৎসা।
তিন মাস ভূগে বাবা সুস্থ হলেন তবে পুরাপুরি নয়, আর ছেলেটির পরিবার পড়ল নিদারুন অর্থ কষ্টে। সামনে ছেলেটির প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা, বাবা মায়ের ইচ্ছা ছেলেটির জন্য একজন গৃহশিক্ষক রাখবেন কিন্তু অভাবের তাড়নায় নিজেদের খাবার জোটে না তিন বেলা তার উপর গৃহ শিক্ষক। জুলাই মাসে স্কুলের হেডস্যার জানালেন ছেলেটির বৃত্তি পরীক্ষা দেয়ার দরকার নেই, কারন এমন প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার জন্য ছেলেটি মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়, যদিও ছেলেটি ক্লাসে প্রথম স্থান দখল করে আছে।
ছেলেটির ও জিদ চেপে গেলো, যে করেই হোক তাকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতেই হবে এবং তাকে বৃত্তি পেতে ও হবে।
প্রধান শিক্ষক মহোদয় তার মতামত অনুযায়ী ছেলেটিকে ছাড়াই বৃত্তি পরীক্ষার জন্য বিশেষ কোচিং ক্লাস শুরু করে দিলেন।
ছেলেটির পরিবারের পীড়াপীড়িতে প্রধান শিক্ষক মহোদয় ছেলেটিকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিলেন। যথাসময়ে পরীক্ষা শেষ হলো, পরবর্তীতে যখন রেজাল্ট হলো, ছেলেটি তখন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। ফলাফলে দেখা গেলো ছেলেটি শুধু ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিই পায়নি বরং সমগ্র বিভাগের ভিতর প্রথম হয়েছে এবং ৯৯% মার্কস নিয়ে।
এভাবে ছেলেটি এগিয়ে চলতে লাগল তার গন্ডিতে। অষ্টম শ্রেণীতে ও সে একই রেজাল্ট করে তাক লাগিয়ে দিল।
এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান যা তাকে নতুন রুপে চিনতে সাহায্য করল।
ছেলেটির এ সাফল্যের পিছনে না বলা যে কথাটি রয়ে গেছে তা হলো সে কখনও ভালো কোন স্কুলে পড়তে পারে নি, গ্রামের স্কুলেই তাকে পড়তে হয়েছে। মেধা তালিকায় প্রথম হয়েও সে কোন ভালো কলেজে ভর্তির চেষ্টা করল না কারন একটাই - দারীদ্র। দারীদ্রের কারনে ছেলেটি ভর্তি হলো গ্রামের কলেজে, সেখানে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা করলে ও না ছিল ভালো শিক্ষক, না ছিল তেমন কোন অবকাঠামো আর ল্যাব সুবিধা। সে অবস্থায় ই ছেলেটি চালিয়ে যেতে লাগল তার জীবন যুদ্ধ।
পড়াশুনার পাশাপাশি ছেলেটি ছিল দারুন তুখোড়, আবৃতি, বিতর্ক, রচনা প্রতিযোগীতায় অনেকবারই জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সে। খেলত ফুটবল ও ক্রিকেট। ফুটবলে স্কুল টিমের বাইরে একটি দ্বিতীয় বিভাগ ক্লাবে গোলরক্ষক হয়ে খেলত। ক্রিকেটে সে প্রথম বিভাগে অলরাউন্ডার হিসাবে খেলত। আর বন্ধুদের আড্ডায় ছেলেটি ছিল তুমুল জনপ্রিয়।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।