আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রবি-তোষণ : চঞ্চল আশরাফের হক কথা!!!

নিজের বিষয়ে কিছুই বলিবার নাই

আসসালামু আলাইকুম, বিগত জুন মাসের ৪ তারিখে প্রথম আলোর সাহিত্য-পাতায় চঞ্চল আশরাফ নামক একজন লেখক রবি-বাবুর কবিতা বিষয়ে কিছু মন্তব্য করিয়াছিলেন। যাহা লইয়া বিভিন্ন ব্লগসহ বেশ কিছু স্থানে-অস্থানে বেশ খানিকটা চাঞ্চল্য দেখা দিয়াছে। অনেকটা হায় গেল হায় গেল--জাতীয় রব উঠিয়াছে। বোঝা যায় ভ্রাতা চঞ্চল আশরাফ আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অসাড় চেতনায় একটা ঘা দিতে সক্ষম হইয়াছেন। চঞ্চল আশরাফকে আমি চিনি না তবুও তাহার প্রতি আমার হাজার ছালাম রহিলো।

এখন দেখা যাউক কী কহিয়াছিলেন চঞ্চল আশরাফ যাহার কারণে তাহাকে বর্জন করিবার ঘোষণা আসিতেছে? ৪ তারিখের প্রথম আলোয় ভ্রাতা চঞ্চল আশরাফ কহিয়াছেন : ''আজ মনে হয়, খুব ভালো করে আমার মনে হয়, কবিতায় রবীন্দ্রনাথের অপচয় বিপুল, শামসুর রাহমানও অত অপচয় করেননি। এটা অবশ্য বিপুল রচনারই নিয়তি। '' এখন প্রশ্ন হইতেছে এইটা কি কোনো নতুন অভিযোগ? যাহার কারণে চঞ্চল আশরাফকে বন্জন করিতে হইবে?চঞ্চল তো অতিশিষ্টাচারের সহিত তাহার বক্তব্য বয়ান করিয়াছেন। ভারতের পরাধীন প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গের একজন অতি-বিখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গাঙ্গুলী। তিনি যখন রবি বাবুর রচনাকে তিনজোড়া লাথি দিয়া মাটিতে ফেলিয়া দিতে চাহিয়াছিলেন তখন তো তাহাকে বরজন করিবার কথা ওঠে নাই? সুনীল বাবুর কথা তুলিলাম এই কারণেই যে তিনি এই স্বাধীন বাংলাদেশেও আতি জনপ্রিয়।

তিনিই লিথিয়াছিলেন : নিকষ বৃত্তের থেকে চোখগুলি ঘোরে ও ঘুমোয়, শিয়রে পায়ের কাছে বই-বই-বই তিন জোড়া লাথির ঘায়ে রবীন্দ্র-রচনাবলী লুটোয় পাপোশে। এইটা সুনীল বাবুর পাপ ও দুঃখের কথা ছাড়া আর কিছুই থাকে না--কবিতায় পাইবেন। আর কিতাবটির নাম : আমি কী রকমভাবে বেচে আছি প্রথম প্রকাশ :১৩৭২ ৩২/২ যোগী পাড়া রোড, কলিকাতা-২৮ এই তো গেল কবিতার কথা। প্রবন্ধেও সুনীল বাবু রবি বাবুর কবিতা-বিষয়ে অকপটে বলিয়াছেন : রবীন্দ্রনাথের অতি দীর্ঘ, পুনরক্তিবহুল কবিতা লেখার ঝোক ছিল। (৪২ পৃষ্টা) প্রবন্ধের নাম : ‘এমন আর কে-ই বা (প্রকাশ :২০০০) বিকল্প প্রকাশনী ১ বিধান সরনি, তিন তলা।

কলিকাতা-৭০০০৭৩ সুনীল বাবু আরো কহিয়াছেন : কবি হিসেবে তার (রবি বাবু) প্রস্তুতি অতি ধীর, এখনকার অনেক কবির তুলনায় প্রাক-বিংশতি বর্ষে তার কবিতার ভাষা বেশ দুর্বল। এই বিষয়ে তিনি ‘নির্ঝরের স্বপ্নভগ্ন’কবিতাটির উদাহরণ টানিয়া কহিয়াছেন : এই কবিতাটি সম্পর্কেও কিছু গোলমাল আছে। রবীন্দ্রনাথ নিজেই এই কবিতাটির ইতিহাস রচনা করে এটিকে বিখ্যাত করেছেন। প্রথমে কবিতাটি বেশ কাচা ছিল, বিহারীলালের অক্ষম অনুকরণ। (পৃষ্ঠা-৪১) আমি নিজে অবশ্য বিহারীলালের কবিতা পড়ি নাই।

রবি বাবুর গীতাঞ্জলি নিয়া সুনীল গাঙ্গলীর বয়ান : গীতাঞ্জলির জন্য তাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। আমরা তো জানি, তার অন্যান্য কাব্যের তুলনায় গীতাঞ্জলি বেশ দুর্বল গ্রন্থ। ইংরেজি অনুবাদ ছিলো ততোধিক দুর্বল। (পৃষ্ঠা-৪২) এইবার আসা যাউক রবি বাবুর বেশি লিখিবার বিষয়ে। কলিকাতার রবিন্দ্র-পন্ডিত হিসাবে যিনি খ্যাতনামা সেই শঙ্খ বাবু (শঙ্খ ঘোষ) রবি বাবুর প্রতি শ্রদ্ধা রাখিয়াই চঞ্চল আশরাফের মতোই দীর্ঘদিন পূর্বেই কহিয়াছিলেন : তাই বলে কি সঙ্গে-সঙ্গে এ-ও মানবা না যে অতিবাচনের ভার রবীন্দ্ররচনাকে থেকে-থেকে কেমন স্খলিত করে দেয়? লক্ষ করবা না যে মেষ বয়সে এই পল্লবিত ভাষণ বেড়ে গিয়েছিল আরো বেশি? শঙ্খ বাবু নিজেই একটি হিসাব পেশ করিয়া জানাইয়াছিলেন : অন্তিম ১০ বছরে রেখা ২১ টি কবিতা-বইয়ের প্রায় ৮৫০ সাড়ে আটশো কবিতায় সর্বত্রই কি সত্যি কোনো আনিবার্যতা অনুভব করি? (পৃষ্টা-৪১) এইখানেই তিনি থামেন নাই।

শঙ্খ বাবু বলিতেছেন : ভালোবাসার ক্ষোভ জাগে না কি মনে-মনে, আরো একটু কম বললেন না কেন কবি? শেষ দশকের কবিতায় খুব অল্প কয়েকটি কথাকেই কতো বিশদ অজস্রতায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বোঝাতে চাইলেন তিনি? (পৃষ্টা-৪২) শঙ্খ ঘোষ কবিতা-পরিচয় (প্রকাশ কাল ১৯৮১) প্রকাশক--শ্রী সুধাংশু শেখর দে দে’জ পাবলিশং ১৩ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট কলিকাতা--৭০০০৭৩ রবি বাবু নিজেও তাহার এই বেশি লেখা লইয়া আফশোশ প্রকাশ করিয়াছিলেন। তাহা সুনীল গাঙ্গুলির মারফতে জানিতে পারিতেছি। মৃত্যুর বছরেও (১৯৪১) প্রুফ দেখতে দেখতে রবীন্দ্রনাথ রানী চন্দকে নাকি জানাইয়াছিলেন : এতো লিখেছি জীবনে যে লজ্জা হয় আমার। এত লেখা উচিত হয় নি..জীবনের আশি বছর চাষ করেছি অনেক। সব ফসলই যে মাড়াইতে জমা হবে তা বলতে পারি নে।

(পৃষ্ঠা ৭৩) একশ পচিশ বছরের রীবন্দ্রনাথ প্রকাশক : আনন্দ পাবলিশার্স কলিকাতা প্রকাশ :১৯৯৯ রবি বাবু যে-ফসলগুলি মাড়াইতে জমা হবে না বলিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করিয়াছিলেন আমার মনে হয় সেই কাব্য-ফসলের দিকেই ইঙ্গিত প্রদান করিতে চাহিয়াছেন ভ্রাতা চঞ্চল আশরাফ। আর তাহা করিয়া তিনি বরং আমাদের মতন সাধারণ পাঠকের উপকারই করিয়াছেন। কোনো অন্যায় কর্ম করেন নাই। সুনীল বাবু কহিয়াছেন : রবীন্দ্রনাথের কিছু ভক্ত ও চাটুকার তাকে সবসময়েই ঘিরে থাকত, তারা তাদের গুরুদেবের দৃষ্টিকে কিছুটা আড়াল করা ছাড়া আর বিশেষ কিছু উপকার করেনি। (পৃষ্টা-৭০) আমার মনে হইতেছে সেই চাটুকরের উত্তর পুরুষের আজও টিকিয়া রহিয়াছেন।

তাহারা এখন প্রকৃত সত্যকে পাঠকের দৃষ্টিকে আড়াল করিতে চাহিতেছেন। আমাদের সমাজে যেমন তেমনি সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও লম্পটদের অভাব নাই। তাহাদের আনাগোনা সর্বত্রই বেশি। এইসব লম্পটগণ বিষয়ে সুনীল বাবু মন্তব্য করিয়াছিলেন--- লম্পটদের কল্পনাশক্তি খুব কম। ...তাদের অনেকেই ভন্ড।

যাহারা আজ বুঝিয়া বা না-বুঝিয়া ভ্রতা চঞ্চল আশরাফকে অযথা আক্রমণ করিতেছেন তাহারাও সেই সাহিত্যিক-লম্পটদের অন্তর্গত বলিয়া মনে হইতেছে। ভ্রাতা চঞ্চল আশরাফ তাহার রচনায় কহিয়াছিলেন : ''তবে বড় কবিদের অপচয়ও বেশ মূল্যবান। কেননা, তাঁদের কাছ থেকে শেখার রয়েছে অনেক কিছুই। রবীন্দ্রনাথের কাছে যেমন শেখার আছে ভাষার আড়ষ্টতা কীভাবে কাটিয়ে উঠতে হয়; ছন্দের নিরীক্ষা, শব্দের ঐশ্বর্যের সঙ্গে প্রাত্যহিকতার মেলবন্ধন কেমন করে সম্ভব ইত্যাদি। এসব অবশ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে সাহিত্যের প্রাথমিক অবস্থায়।

রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব এ জায়গাতেই। '' এই গুরত্বটির দিকে আমাদের নজর নাই। আমরা মিথ্যাকে লইয়াই নৃত্য করিতে বেশি পছন্দ করিয়া থাকি। মেকিকে লইয়াও। সকলে ছহি-ছালামতে থাকিবেন।

চঞ্চল আশরাফের রচনা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।