আমার এক আত্মীয় যার স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করার সৌভাগ্য হয়েছে। তিনি উদীয়মান টাকাওয়ালাও বটে! বেচারা ক্রোরপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর! কোন এক কাজে তার সাথে রিকসায় চড়ে মধ্যবাড্ডা যাই। রিকসাওয়ালাকে ভাড়া হিসেবে দশ টাকা দিলে সে দু'টাকা ফেরৎ দেয়। টাকাওয়ালা বললো, পাঁচ টাকা ভাড়া রাখো। রিকসাওয়ালা বললো, না ভাই, ভাড়া আট টাকাই।
ইত্যবসরে আমি একটু দূরে দাড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে একটা কিছু ভাবছি এবং তাদের তর্কাতর্কি আংশিক শুনছি।
হঠাৎ কানে ভেসে এলো বিকট এক চড়ের শব্দ। চটজলদি তাকিয়ে দেখি রিকসাওয়ালাভাই হাত দিয়ে গালে চেপে ধরে অনুচ্ছস্বরে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে! কী বলবো, কী করবো কোন সিদ্ধান্তই দ্রুত নিতে পারছিলাম না। এদিকে একজন দু'জন করে লোক জড়ো হতে লাগলো। অবস্থা বেগতিক ভেবে রিকসাওয়ালাকে আরো কিছু টাকা এবং ইষৎ শান্তনা দিয়ে টাকাওয়ালা ভাইকে নিয়ে দ্রুত কেটে পড়ি।
কিন্তু প্রচন্ড মর্মজ্বালা আমার পিছু ছাড়ছিল না! রিকসাওয়ালার বোবা কান্নার কথা মনে পড়লে এখনো জ্বালা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে!
গোড়ান টেম্পো স্ট্যান্ড থেকে শেয়ারে রিকসায় চড়ে অফিসে যাই। কী করবো? ছা পোষা কেরাণী! বাধ্য হয়েই শেয়ারে রিকসায় চড়তে হয়! বাজারের যে অবস্থা হেঁটে যাওয়াই উত্তম ছিল কিন্তু এই গরমে হাঁটা বহুত মুশকিল তবে অফিসের 'কাম' শেষ করে যখন বাসায় ফিরি তখন আল্লার উপর ভরসা রেখে দু'পায়ের উপর দিয়েই চালিয়ে দেই! সেদিন দেখলাম, আমার এক গলিগ যিনি ঢাবি থেকে ভাল একটি সাবজেক্টে অনার্স মাস্টার্স করেছেন তাছাড়া সমপ্রতি এমবিএ পাশ দিয়েছেন তিনি এক রিকসাওয়ালাকে মারার জন্য ভয়ংকর মূর্তিধারন করে হটপট উঁচিয়ে তেড়ে যাচ্ছেন। আরেক ভদ্রলোক তাকে থামিয়ে দিলেন।
আমি দ্রুত তাঁর কাছে গেলাম। বললাম, ভাই রিকসাওয়ালা বেয়াদবী করেছে নাকি? তিনি রিকসাওয়ালাকে বড় কুটুমের পুত বলে গালিয়ে দিয়ে বললেন, ত্রিশ টাকার ভাড়া ও চলি্লশ টাকা চায়!! বললাম, এই হটপট দিয়ে মারলে তো ও মরেই যেতো! তিনি বললেন, সরি, মাথাটা বিগড়ে গিয়েছিল।
হাসতে হাসতে বললাম, ভাই বাসা ভাড়া আর রিকসা ভাড়া দিয়েই যদি বেতনের টাকা শেষ হয়ে যায় তাহলে তো মাথা বিগড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক তবে একে সামলে চলতে হবে!
আমার আরেক গলিগ যার সাথে মাঝে মাঝে শেয়ারে রিকসায় উঠি। খিলগাঁ রেল গেইটের যানজটের কারণে মনে হচ্ছিল অফিসে যেতে লেইট হয়ে যাবে। ফলে অস্থিরতা কাজ করছিল আমাদের মাঝে। পীর জঙ্গী মাজারের কাছাকাছি যেতেই আমার গলিগ পিতার বয়সী রিকসাওয়ালাকে বললো, কী রে! কি চালাস? বেটা হেঁটেই তো তোর আগে যাওয়া যাবে! গলিগের এই নোংড়া আচরণে আমি হতবাগ হয়ে পড়ি। একজন শিতি লোকের কাছ থেকে এরকম নীচু আরচণ কল্পনাও করিনি!
সন্ধ্যার পূর্ব মুহুর্তে বাসার সামনে একজন রিকসাওয়ালাকে ঘিরে হৈচৈ শুনে বিষয়টি জানার জন্য নীচে যাই।
বিষয়টি শুনে আমার কান গরম হয়ে উঠে। ভদ্রলোকটি নাকি জিন্সের প্যান্ট পড়া। গায়ে দামি টি শার্ট! দেখতে শুনতেও মন্দ না। রিকসাওয়ালাকে নিয়ে প্রায় একদুপুর বিভিন্ন অলিগলি ঘুরেছে। ভাংতি নেই বলে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ত্রিশ টাকার বেনসন সিগারেট কিনেছে।
এক মওকায় চা-নাস্তা খেয়ে একই অজুহাতে তার কাছ থেকে ১৮ টাকা নিয়ে নাস্তার বিলও দিয়েছে! অবশেষে এই বিল্ডিং এর সামনে নেমে বললো, আপনি বসেন, বাসা থেকে টাকা নিয়ে আসছি। সহজ সরল রিকসাওয়ালা আছরের পূর্ব হতে সন্ধ্যাঅব্দি বসে আছে কিন্তু ভদ্রলোকের হদিস নেই!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।