সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা
ছেলেটির নাম আলমাস। পড়াশোনার অদম্য আগ্রহ। অথচ পদেপদে পাহাড়সম বাঁধা। ছেলেটি জন্মেছিল মাদারীপুর জেলার এক স্বচ্ছল পরিবারেই। মা-বাবার বিচ্ছেদ, মায়ের আত্মহত্যা আর বাবার ইতালি প্রবাস জীবন ওকে ৫ বছর বয়সেই মামা বাড়ির কাজের ছেলে বানিয়ে ফেলে।
ছেলেটি বুঝতে পারলো মামারা ওকে বারবার লেখাপড়া বন্ধ করে দিচ্ছে বাড়ির কামলা বানানোর উদ্দেশ্যে। এলাকার মানুষও বলছে, ওর মামারা বলেছে লেখা পড়া শিখলে ওর মায়ের অংশের ভাগ চাইবে এজন্য স্কুলে যেতে দিবে না। বিদ্যালয়ের ফার্স্ট বয় এবং ওর মেধার কথা চিন্তা করে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ওর মামাদের বলে কয়ে বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনে। ওর মামারা আবারো স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এবার সে মাদারী পুর জেলার ধুরাইল ইউনিয়নের মামাবাড়ি থেকে পাড়ি জমায় অজানার উদ্দেশ্য।
লক্ষ্য একটাই লেখাপড়া শিখতে হবে, মানুষ হতে হবে। আশ্রয় নেয় মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরের শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়নের মান্দ্রা গ্রামে।
এই গ্রামে এসে এক বাড়িতে গিয়ে আবেদন জানায়, শুধু স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে একটু পড়াশোনার সুযোগ দেয়ার, বিনিময়ে সব কাজ করে দিবে। গেরস্ত বাড়ির মালিক ওকে রাখাল বানিয়ে ফেলতে চায়। গরু নিয়েই দিনরাত পরে থাকতে হয়।
পড়বে কখন। বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে অস্বীকার করলে অন্য এক বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেই বাড়িতে থেকে ও ভাগ্যকুল মান্দ্রা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। তীব্র খাটুনি সহ্য করতে না পেরে আবারো বাড়ি পাল্টায়। পড়ার ঘরতো দূরের কথা মাথাগুজার ঠাঁই নেই।
এক দর্জি দোকানে রাতে থাকে। এতো কষ্টের মাঝে থেকেও প্রথম সাময়িক পরীক্ষাতেই প্রথম স্থান দখল করে নেয়।
আলমাস বরাবরই ভালছাত্র ছিল। মনোযোগী, শান্তশিষ্ট ও মেধাবী। যাকে ভালবাসা যায়, আদর করা যায় কিন্তু নিন্দা করা যায় না।
কিন্তু ওকে ভালবাসার কেউ নেই, আদর করার কেউ নেই। ও বুঝেইনা আদার-ভালবাসা কাকে বলে? এর পূর্বে মাদারীপুরের ধুরাইল কপালীকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণী থেকে ১ম স্থান অধিকার করেই ৪র্থ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিল। ওর স্মরণ শক্তি বিস্ময়কর। সেই কবে এক নজর জন্ম নিবন্ধন কার্ডটি দেখেছিল তাতেই স্মরণে আনতে পেরেছিল জন্ম তারিখ। বর্তমান বিদ্যালয়ের শিক্ষিকরার জানালেন, ওর পড়া বুঝে নেয়ার ক্ষমতা অসাধারণ।
এক অনন্য মেধাবী ছাত্র।
আলমাসের বাবার পরিবারের অনেক সম্পত্তি থাকলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে সফল হ্িচ্ছল না। তার ঘোরাঘুরি কথা একটা অভ্যাস ছিল। ওর মা চেয়েছিল একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি নিতে। আলমাস শুধু জানে ওর মা ভালই লেখাপড়া জানতো, কিন্তু কি পাশ তা জানে না।
এই চাকরীর জন্য প্রয়োজন ছিল অর্থের। সংসারে অশান্তি এসেছিল এ নিয়েই। ওর মা সালমা বেগম এ নিয়ে বাবার সাথে ঝগড়াঝাটি করে চলে এসেছিল আলমাসের নানা বাড়িতে। ওর মামাদের সাথে বাবার ঝগড়াঝাটি লেগে যায়। পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা হয়, সংঘাত চলে।
ওর মা চাইতো বাবার সংসারে ফিরে যেতে। কিন্তু দুই পরিবারে চরম শত্র“তা তৈরি হয়ে যাওয়াতে সম্ভব হচ্ছিল না। ওর মামাদের কারণে বাবা ও মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ওর বাবা আরেকটি বিয়ে করে। এ খবর পেয়ে ওর মা বেছে নেয় আত্মহননের পথ।
কয়েক বছর পর ওর বাবা চলে যায় ইটালি। ওর বাবা যদিও ওর খোঁজ খবর কখনোই নেয়নি। এমনকি ওর একমাত্র জমজ বোন, যাকে মামা বাড়িতে রেখে এসেছে অনিশ্চতার মধ্যে, তার খোঁজও বাবা নেয়নি। আলমাসের সৎ ভাইবোনদের সাথে ইতালি থেকে ফোনে অনেক কথা বলে। অথচ আলমাস এবং মিনা নামে তার একজোড়া জমজ সন্তান রয়েছে তা ভুলেও মনে করে না।
দুঃখে আলমাসের দু চোখ বেয়ে নেমে আসে অশ্র“র বন্যা।
লেখাপড়ার তীব্র আগ্রহ নিয়ে বিক্রমপুরে আসলেও পড়াশোনার পরিবেশ কোথাও পায়নি। সবাই শুধু কাজ করিয়ে নিতে চায়। মনভরে পড়তে না পাড়ায় কোন বাড়িতেই স্থায়ী হতে পারে না। সবাই বলতে চায় পড়াশোনা করে কি করবি? কাজকাম কর।
পরে কাজ নেয় এক চায়ের দোকানে। ভোররাতে উঠে কাজ শুরু করে। ১১ টা বাজলে স্কুলে যেতে দেয়। স্কুল হতে আসলেই ডুব দিতে হয় কাজের মধ্যে। ছুটি মিলে রাত ৯টার পরে।
ওকে খুঁজে বের করতে হয় পড়ার জায়গা। একটি স্ব-মিলে রাত ১০ টা পর্যন্ত জেনারেটরের আলো থাকে। এই ১ ঘন্টায় ও পড়াশোনা শেষ করতে পারে না। ভাল রেজাল্ট করতে হলে আরো সময় প্রয়োজন। যারা ওকে শুরু থেকে দেখে আসছে তারা বলছে ওর স্বাস্থ্য অনেক খারাপ হয়ে গেছে।
কিন্তু খাবার কষ্টের কথা স্বীকার করতে চায় না। খাওয়া হয়তো পর্যাপ্ত পায়নি কোথাও। খাওয়ার কষ্টের চেয়েও বড় কষ্ট পড়তে না পারার কষ্ট। ও চায়ের দোকানের চাকরিটি ছেড়ে দেয়, পড়াশোনার সময় বাড়ানোর জন্য। শুরু করে রিক্সা চালানো।
যদি ৪/৫ ঘন্টা রিক্সা চালিয়ে সেই উপার্জনের অর্থে যদি থাকা খাওয়াটা মেটানো যায়। তাহলে পড়াশোনা ঠিকমতো করতে পারবে। অতটুকু শরীরে রিক্সা চালানোর কঠিন শ্রম কি সহ্য করতে পারবে? আসলেই পারছে না, অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে মাঝে মধ্যেই।
আলমাসের স্বপ্ন পাইলট হবে। ওর কাছে জানতে চাই, তোমার কোন আনন্দের স্মৃতি আছে? ও বলে লেখাপড়া করে বড় হলেই সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাবো।
ওর মা মারা যাওয়ার পরের সব স্মৃতিই কষ্টের। মা বেঁচে থাকলে মার কাছে থেকেই লেখাপড়া শিখে বড় হতে পাতো। কিন্তু মা তো নেই, আছে শুধু লেখাপড়া শেখার এক অদম্য আকাঙক্ষা
অদম্য এই ছেলেটির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়ার একজন মহৎ প্রাণ কি কোথাও নেই?
Email:
Mobile: 01718265286, 01819412953
Manager, Agrani Bank Limited
Hashara Bazar Branch, (Dhaka-Mawa Road)
Munshigonj
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।