চলতাছে আরকি
Click This Link target='_blank' >প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব | তৃতীয় পর্ব
হিমালয় নিয়ে রহস্যের শেষ নাই। মানুষের কল্পনাপ্রবণ মন, খুব সহজেই খোঁজে অতীন্দ্রিয় কিছু। সে খুঁজে বের করে বিভিন্ন মিরাকল। কারন মিরাকলগুলো তাকে একধরনের নির্ভরতা আর শান্তি দেয়। সে কারনেই আমরা দেখি যে, গ্রিসের অলিম্পাস পর্বতে থাকেন মহাশক্তিধর জিউস।
কারন অলিম্পাস সে সময় অজেয় ছিল। ঠিক যেরকম ভাবে এক সময়ে অজেয় ছিল হিমালয়। হিমালয়ের শুভ্র বরফে মোড়া দুর্লঙ্ঘ চূড়া, দুর্গম পাহাড়ের ভাঁজ আর প্রকৃতির বিশালতা মানুষকে দিয়েছে কল্পনার পাগলা ঘোড়া ছোটানোর লাইসেন্স।
হিন্দু ধর্মের আদি পুরুষ, দোর্দন্ডপ্রতাপ শিব বাস করেন এই হিমালয়েরই কোন এক গুহায়। গঞ্জিকা সেবন আর নারী সম্ভোগ ছাড়াও (অফ টপিকঃ বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় গুরুদের এত নারী প্রীতি কেন?) তিনি সেখানে বসেই তার বিভিন্ন মিশন চালনা করেন বলে শোনা যায়।
৫০ এর দশকে ইউরোপ-আমেরিকায় যখন অস্থির বীট জেনারেশন আন্দোলন গড়ে উঠছে, তখন তারাও এই হিমালয় ও হিন্দু ধর্মীয় অতীন্দ্রিয় মায়াঝালে মুগ্ধ হচ্ছিল। সাথে বাড়তি আকর্ষণ হল গঞ্জিকা। সাধু বাবাদের সাথে বসে গঞ্জিকা সেবন এবং যোগ ব্যায়াম ও কৃষ্ণমন্ত্র জপ করছিল বিটলস থেকে শুরু করে জিমি হেনড্রিক্স সহ অনেকেই। নেপাল তখন বীট জেনারেশনের আরেকটি পীঠস্থান। সেকারনেই কাঠমান্ডুর আদি ট্যুরিস্ট স্পটের নাম ফ্রিক স্ট্রিট (freak street)।
এই কল্পনার মায়াজালে সম্প্রতি শখানেক বছর আগে যুক্ত হয়েছে ইয়েতি নামক এক কাল্পনিক জীব। এই রহস্যময় জীবকে দেখা যায় না। শুধু তার বড় বড় পায়ের ছাপ দেখা যায়। ইয়েতি নিয়ে আরেকদিন লিখব।
হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চলে অনেক ধরনের গাছ গাছড়ার দেখা মেলে।
সেই সব গাছ গাছড়ার ধ্বনন্তরী প্রভাব নিয়েও আছে অনেক গল্প। কিছু গাছের পাতা আর ফল আবার খুবই পবিত্র। তার মধ্যে একটি হল রুদ্রাক্ষ- একটি গাছের ফল, অনেকটা বরইর বিচির মত দেখতে, কিন্তু আকারে বড়। সাধারনত যোগী-যোগিনীরা এই রুদ্রাক্ষের মালা পরে ঘুরে। কিন্তু একটা অরিজিনাল একমুখী রুদ্রাক্ষের দাম কয়েক লাখ টাকাও হতে পারে।
কারন একমুখী রুদ্রাক্ষ শিবের প্রতীক। পাঁচমুখী রুদ্রাক্ষ গনেশের প্রতীক। এই রুদ্রাক্ষকে ঘিরে আছে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা।
আজকে বলছি আরেকটি ধ্বন্বন্তরী ঔষধ- ইয়ার্সাগুম্বার কথা। অনেকে এটাকে বলে নেপালী ভায়াগ্রা।
ইয়ার্সাগুম্বা কথাটার শাব্দিক অর্থ হল – কিছুদিন উদ্ভিদ আর কিছুদিন প্রানী। জিনিসটা উপর দিক থেকে দেখলে আসলে তাই।
এই অদ্ভুদ জিনিসটা বছরের ছয়মাস থাকে প্রাণী (একধরনের বিছে পোকার মত প্রাণী), আর বাকী অর্ধেক সময় উদ্ভিদ। বিষয়টা একটু কনফিউজিং? কিন্তু আসলে তা না।
ইয়ার্সাগুম্বার ল্যাটিন নাম কর্ডিসেপস সিনেসিস(cordyceps sinesis)।
হিমালয়ের উপরে ভুমি থেকে প্রায় ৩৫০০ মিটার (প্রায় ১১০০০ ফুট) উপরে পাহাড়ি মালভুমিতে এদের দেখা মেলে। প্রথমে এটি একটি বিছে জাতীয় পোকা (caterpillar)। বর্ষার শুরুতে এই পোকার গায়ে একধরনের ফাঙ্গাস জমতে শুরু করে। এই ফাঙ্গাস বা ছত্রাক গুলো পরজীবি ছত্রাক। আস্তে আস্তে এই ফাংগাস গুলো ছড়িয়ে পড়ে পুরো পোকাটার উপরে।
ফাংগাস গুলো এই পোকার সমস্ত রস শুষে খেয়ে ফেলে এবং পোকাটা মারা যায়। ফলে এটা দেখতে অনেকটা আধা গজানো শুট বা অঙ্কুরের মত দেখতে হয়, মনে হয় যে একটা বৃক্ষ গজিয়ে উঠছে। তখন গ্রামবাসীরা মিলে এটাকে সংগ্রহ করে নেয়। নেপালের দুর্গম অঞ্চল ডোলপা, রোলপা এসব জায়গায় ইয়ার্সাগুম্বার দেখা মেলে সব চেয়ে বেশি।
এই অদ্ভুত জিনিসটি একটি সর্বরোগনিরাময়ী ঔষধ হিসাবে বাজারে বিক্রি হয়।
মুলত কবিরাজেরা বলেন যে, যে কোন ধরনের ব্যাথা মুহুর্তের মধ্যে সারিয়ে তোলে এই বস্তু। তাছাড়া এজমা, কাশি, রক্তশুণ্যতা এরকম আরো হাজারটা রোগের জন্য এর ব্যবহার কিন্তু যার কারনে এর সবচেয়ে বেশি প্রসার তা হল, এটি নাকি ন্যাচারাল ভায়াগ্রা। মর্দামী শক্তি বৃদ্ধির এক মোক্ষম উপায়। আর যায় কোথায়। মানব সমাজ সেক্স জাতীয় কিছু পেলেই হল।
সেক্স বিজনেস অনেকটা ধর্ম বা মাদকের মতই কঠিন বিজনেস। ফলে গত দশ বছরে ইয়ার্সাগুম্বার দাম হয়েছে আকাশচুম্বি। সরকারও বসিয়ে দিয়েছে ট্যাক্স- ইয়ার্সাগুম্বা ব্যবসায়ীদের উপরে। গোল্ড রাশের মতই অনেকটা- মৌসুম আসলে দলে দলে মানুষ ইয়ার্সাগুম্বার খোজে যায়। তখন সরকারকে ইজারা দিতে হয়।
এখন এক কেজি ইয়ার্সাগুম্বার দাম এক থেকে দেড় লাখ টাকা। দশ বছর আগেও এর দাম ছিল কেজি প্রতি হাজার দশেক। বেশিরভাগই রপ্তানী হয়ে যায় ইউরোপ আমেরিকায়।
তবে কারো লাগলে জায়গায় বইসা আওয়াজ দিয়েন ভাইয়েরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।