আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নয় বছরে ওএসডি ৩৬০৫ কর্মকর্তা

জনপ্রশাসনে গত নয় বছরে সরকারের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি-ওএসডি) সংখ্যা তিন হাজার ৬০৫ জন। তাঁদের পেছনে সরকারের ব্যয় হয়েছে ১৫০ কোটি ৯১ লাখ ৫৮ হাজার ৭ টাকা।
এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ওএসডি কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল এক হাজার ৬১৬ জন। তাঁদের পেছনে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ ৯৩ হাজার ৪৭০ টাকা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আজ রোববার এই চার বছরের (২০০৪-২০০৭) প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।

বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মো. খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয় গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়। আদালত ২৯ মে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১৯ জন সচিব, ৮৮ জন অতিরিক্ত সচিব, ২৮০ জন যুগ্ম সচিব, ৮৭৮ জন উপসচিব, ২৪৪ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও ১০৭ জন সহকারী সচিবকে ওএসডি করে রাখা হয়।

২০০৮-২০১২ সাল:
এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ওএসডি-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, এই সময়ে এক হাজার ৯৮৯ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয়।

এর মধ্যে ১৩ জন সচিব, ১৬৬ জন অতিরিক্ত সচিব, ৪৯০ জন যুগ্ম সচিব, ৭৯০ জন উপসচিব, ৪৬০ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও ৭০ জন সহকারী সচিব। এই সময়ে তাঁদের পেছনে সরকারের ব্যয় হয়েছে ১০৩ কোটি ২৫ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৭ টাকা।
সব মিলিয়ে গত নয় বছরে ওএসডি কর্মকর্তার সংখ্যা তিন হাজার ৬০৫ জন। তাঁদের পেছনে সরকারের ব্যয় হয়েছে ১৫০ কোটি ৯১ লাখ ৫৮ হাজার ৭ টাকা।
গত বছরের ৪ জুন এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত ১০ বছরে জনপ্রশাসনে ওএসডি করা কর্মকর্তাদের তালিকা দাখিল করতে নির্দেশ দেন।


কতজন কর্মকর্তা কত দিনের জন্য ওএসডি ছিলেন বা আছেন, তাঁদের পেছনে বেতনসহ কত টাকা ব্যয় হয়েছে, সে তালিকাও দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রথমে ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওএসডি-সংক্রান্ত প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এবার দেওয়া হলো ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ওএসডি-সংক্রান্ত প্রতিবেদন।
গত বছরের ৩১ মে ওএসডির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে সাবেক সচিব এম আসাফউদ্দৌলাহ রিট আবেদনটি করেন। প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ৪ জুন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারির পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দেন।


রিট আবেদনে জানা যায়, গত বছরের মে পর্যন্ত জনপ্রশাসনের ৫৯১ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিনজন সচিব, ৩৭ জন অতিরিক্ত সচিব, ১৪৬ জন যুগ্ম সচিব, ১৭০ জন উপসচিব, ১৯০ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও ৪৫ জন সহকারী সচিব। মূল বেতন হিসাবে প্রতি মাসে তাঁদের পেছনে এক কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার টাকা খরচ হয়। এখানে তাঁদের বসিয়ে রেখে বেতন দেওয়া হচ্ছে। ১৯৯১ সালের ৩ অক্টোবর তত্কালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে কী কী কারণে ওএসডি রাখা যায়, সে বিষয়ে এবং এর সময়সীমা বলা আছে।

কিন্তু বর্তমানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ওএসডি রাখা হচ্ছে, যা বেআইনি। এখন অনেক কর্মকর্তাকে কোনো কারণ ছাড়াই চিঠি দিয়ে ওএসডি করে রাখা হচ্ছে। সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে অনুপার্জিত আয় কোনো ব্যক্তি ভোগ করতে পারবে না। যাঁদের ওএসডি করে রাখা হচ্ছে, তাঁরা কোনো দায়িত্ব ছাড়া সরকারের কাছ থেকে বেতন ভোগ করছেন। জনগণের ট্যাক্সের অর্থ থেকে তাঁদের বেতন দেওয়া হয়।

এটা জনস্বার্থ ও সংবিধান-পরিপন্থী। কারণ, সংবিধানের ২৭ ও ৪৪ অনুচ্ছেদে সমতার কথা বলা আছে।
রুলে নির্ধারিত কারণ ও সময়ের বাইরে কোনো দায়িত্ব ছাড়া জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওএসডি করে রাখা এবং জনগণের করের টাকায় বেতন দেওয়া কেন অসাংবিধানিক হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ওএসডি করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা কেন করা হবে না, তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়। জনপ্রশাসনের সচিবকে আট সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।