বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রোববার এক সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের সময় প্রসিকিউটরকে এই পরামর্শ দেন আসামি।
এদিন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন চট্টগ্রামের রাউজানের বাসিন্দা ৭৮ বছর বয়সী চপলা রাণী।
তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তার দুই ভাসুর ও বাবার নিহত হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন। ঘটনার সময় সেখানে সালাউদ্দিনের উপস্থিত ছিলেন বলে সাক্ষ্যে বলেন তিনি।
চপলা রাণীর সাক্ষ্য দেয়া শেষ হলে সালাউদ্দিন কাদের আসামিকে তিনটি প্রশ্ন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এই সময় প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেন, আইনে আসামির সাক্ষীকে জেরা করার কোনো নিয়ম নেই।
তখন চট্টগ্রামের বাসিন্দা রানা দাশগুপ্তকে ওই জেলার সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের বলেন, “রানা সাহেব আইনটা ভালোমতো পড়ে আসুন।
“আমরা আইন বানিয়েছি, সেই আইন নিয়ে আপনারা ব্যবসা করেন। সবই তো জানি। ”
এসময় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “একসঙ্গে দুজন জেরা করা যায় না।
আপনার আইনজীবীর জেরা শেষ হলে আপনি প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন। ”
তখন সালাউদ্দিন বলেন, “অন্য কোনো প্রিভিলেজই দেন না, এ প্রিভিলেজ দিলেই কী, আর না দিলেই কী। ”
এরপর সালাউদ্দিন কাদেরের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা সাক্ষীকে জেরা শুরু করেন। তার জেরা শেষ হলে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের প্রশ্ন করার সুযোগ পান।
কুমারের স্ত্রী চপলা রাণীকে প্রথম প্রশ্নে সালাউদ্দিন কাদের জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি বা আপনার স্বামী হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করার জন্য কোনোদিন আমার বাড়িতে গিয়েছিলেন কি না?”
এ প্রশ্নে ‘না’ সূচক উত্তর দেন চপলা রাণী।
এরপর সালাউদ্দিন কাদের প্রশ্ন করেন, “আমি কোনোদিন হাঁড়িপাতিল কিনতে আপনার বাড়িতে গিয়েছিলাম কি না?”
এ প্রশ্নের উত্তরে সাক্ষী বলেন, “দেখি নাই। ”
তৃতীয় প্রশ্নে সালাউদ্দিন কাদের জিজ্ঞাসা করেন, “আপনার বয়স যখন (১৯৭১) ২৫ থেকে ৩৯ বছর ছিলো, সেসময় চট্টগ্রামের কোথাও আমার স্থায়ী ঠিকানা ছিলো কি না, তা জানেন না কি?”
এর উত্তরেও সাক্ষী চপলা রাণী বলেন, “আমার জানা নাই। ”
চপলা রাণী সাক্ষ্যে বলেন,’৭১ সালের চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের গ্রাম ঘেরাও করে ফেলে।
“আর্মি আমাদের বাড়িতে এসে সবাইকে ডেকে নিয়ে সতীশ মহাজনের পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। সতীশ মহাজনের ভাইয়ের নাম ক্ষিতিশ মহাজন।
”
তিনি বলেন, “সতীশ মহাজনের পুকুরপাড়ে আমাদের জড়ো করার পরে আমরা সবাই কান্নাকাটি শুরু করি। এসময় আমার ভাসুর বেনীমাধব বলে, তোমরা কান্নাকাটি করো না, এখানে আমাদের সঙ্গে মকবুল চেয়ারম্যান আছেন, সালাউদ্দিনও আছেন। ”
“এরপর গুলি চালানো হলে আমি মাটি পড়ে অচেতন হয়ে যাই। আমার দুই ভাসুর ও বাবা সতীশ পাল গুলিতে মারা যায়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে লোকজন সেখানে জড়ো হয়ে লাশগুলো উল্টেপাল্টে দেখার সময় আমার হুঁশ ফিরে আসে।
”
“আমি তখন আমার স্বামীকে খুঁজতে শুরু করি। সেখানে একজন মুসলিম প্রতিবেশীও ছিলো। তিনি আমার স্বামীকে দেখিয়ে দেন। আমার স্বামী তখন অচেতন ছিলো। ওই প্রতিবেশীর সহায়তায় স্বামীকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে মাথায় পানি দেয়া হলে তার জ্ঞান ফিরে আসে।
”
চপলা জানান, এরপর তিনি স্বামীকে নিয়ে এক মুসলিম প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে চারদিন থাকার পরে নিজের বাড়িতে ফেরেন।
সাক্ষীকে জেরার পরে জব্দ তালিকার সাক্ষী চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ কোর্টে কর্মরত সহকারী উপপরিদর্শক মো. এরশাদুল হক সাক্ষ্য দেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।