আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাকশাল(১৯৭২-১৯৭৫)ধারাবাহিক ভাবে চলবে



এই কি সোনার বাংলা? শেখ মুজিব জবাব দাও এই কি সোনার বাংলা? এই সোনার বাংলার জন্যই কি এত ত্যাগ, এতো তিতিা ও রক্তয়? শেখ সাহেব আপনি আমাদের ওপর নির্যাতন চালাতে পারেন, কারাগারে আটকে রাখতে পারেন; এমনকি বিভিন্ন বাহিনী লাগিয়ে হত্যাও করতে পারেন। কিন্তু ইতহাসের অমোঘ রায়কে আপনি কেমন করে ঠেকাবেন? হিটলার-মুসোলিনি-জার-বাতিস্তা-চিয়াংকাইশেক কেউই তা পারে নি। আপনিও পারবেন না। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সামনে আজ জীবন-মৃত্যুর চরম মুহূর্ত। বুটের নিচে তাদের আপনি কদিন আর দাবিয়ে রাখবেন? সন্ত্রাস, প্রতারণা ও মিথ্যার বেসাতি দিয়ে সত্যকে কদিন ঢেকে রাখা সম্ভবপর? শেখ সাহেব জবাব আপনাকে দিতেই হবে।

যেই জনতা আপনাদের জবাব নেবে সেই জনতা আজ জেগেছে। প্রকাশের তারিখ নেই, আনুমানিক ১৯৭৪, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল কর্তৃক প্রকাশিত রীবাহিনী সম্পর্কে অরূনা সেনের বিবৃতি গত ১৭ই আশ্বিন রীবাহিনীর লোকেরা আমাদের গ্রামের উপর হামলা করে। ঐ দিন ছিল হিন্দুদের দুর্গাপূজার দ্বিতীয় দিন। খুব ভোরেই আমাকে গ্রেফতার করে। গ্রামের অনেক যুবককে ধরে মারপিট করে।

লক্ষ্মণ নামে একটি কলেজের ছাত্র এবং আমাকে তারা নড়িয়া রীবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে জিজ্ঞাসা করে আমার স্বামী শান্তি সেন এবং পুত্র চঞ্চল সেন কোথায়? তারা রাষ্ট্রদ্রোহী, তাদের ধরিয়ে দিন। আরো জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্ধ্যার দিকে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। লক্ষ্মনকে সেদিন রেখে পরদিন ছেড়ে দেয়। সে যখন বাড়ি ফিরে, দেখি মারধোরের ফলে সে গুরুতর অসুস্থ।

চার পাঁচ দিন পর আবার তারা রাত্রিতে গ্রামের উপর হামলা করে। অনেক বাড়ি তল্লাশী করে। অনেককে মারধর করে। কৃষ্ণ ও ফজলু নামে দুইটি যুবককে মারতে মারতে নিয়ে যায়। আজও তারা বাড়ি ফিরে আসেনি।

তাদের আত্মীয়রা ক্যাম্পে গেলে বলে দিয়েছে তারা সেখানে নেই। তাদের মেরে ফেলেছে বলেই মে ন হয়। এরপর থেকে রীবাহিনী মাঝে মাঝেই গ্রামে এসে যুবকদের খোঁজ করতো। কিন্তু তেমন কোন ব্যাপক হামলা হয়নি। গত ৩রা ফেব্র“য়ারি রাত্রি থাকতে এসে রীবাহিনীর বিরাট একটি দল সম্পূর্ন গ্রামটিকে ঘিরে ফেললো।

ভোরে আমাকে ধরে নদীর ধারে নিয়ে গেল। সেখানে দেখলাম গ্রামের উপস্থিত প্রায় অধিকাংশ সমদেহী পুরুষ এমন কি বালকদের পর্যন্ত এনে হাজির করেছে। আওয়ামীলীগের থানা সম্পাদক হোসেন খাঁ তদারক করছে। আমার সামনেই রীবাহিনী উপস্থিত সকলকে বেদম মারপিট করে। শুনলাম এদের সকলকে ধরতে যেয়ে বাড়ির মেয়েদেরও প্রচন্ড মারপিট করেছে এবং অশ্লীল আচরণ করছে।

তাদের একদফা মারপিট করে রীরা আমাকে বললো পানিতে নেমে দাঁড়াতে। সেখানে নাকি আমাকে গুলি করা হবে। আমি নিজেই পানির দিকে নেমে গেলাম। কিন্তু নদীর পানি দূরে সরে যাওয়ায়,হাঁটু সমান কাদাতেই দাঁড়িয়ে থাকলাম। ওরা তাক করে রাইফেল ধরল গুলি করবে বলে।

কিন্তু পরস্পর কি যেন বলাবলি করে রাইফেল নামিয়ে নিল। কাদার মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকলাম। কমান্ডার গ্রেফতার করা লোকদের হিন্দু মুসলিম দুই ভাগ করে দুই কাতারে দাঁড় করালো। মুসলমানদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়ে বললো, “মালাউনরা আমাদের দুষমন্ তাদের মা করা হবে না। তোমারা মুসলমানরা মালাউনদের সাথে থেকো না।

তোমাদের এবারকার মতো মাফ করে দেয়া হ’ল। ” এই বলে কলিমদ্দি ও মোস্তাফা নামে দু’জন মুসলমান যুবককে রেখে আর সবাইকে এক এক বেতের বাড়ি দিয়ে বললো, “ছুটে পালাও”। তারা ছুটে পালিয়ে গেল। সংস্কৃতি (মাসিক), ১মবর্ষ ২য় সংখ্যা, মে-জুন ১৯৭৪ পৃঃ ৭৯-৮৭ “ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী ও রা চুক্তি” নামধারী দাসত্বমূলক চুক্তিটির কবর রচনা করুন গোপন সাতটি চুক্তি দেশদ্রোহী তাজউদ্দিন-নজরুল সাহেবেরা ভারতে থাকাকালে ইন্দিরা বেবীর সাথে গোপনে যে সাতটি গোলামীর চুক্তি স্কার করেন সেগুলি হচ্ছে ১) ভারতীয় নৈসন্যরা যে কোন সংখ্যায় ও যে কোন সময় আমাদের দেশের ভিতরে ঢুকতে পারবে এবং বাধাদানকারী যে কোন মহলকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারবে। ২) ভারত সরকার তার ইচ্ছামত ও পছন্দসই লোক দিয়ে ও তার সামরিক অফিসারদের কর্তৃত্বে আমাদের দেশে তার একটি সামরিক বাহিনী গঠন করবে: এই বাহিনীর উপর “বাংলাদেশ” সরকার- এর কোন কর্তৃত্ব থাকবে না; দেশবাসীর চোখে ধুলা দেওয়ার জন্য একে আধা সামরিক বাহিনী বলা হলেও আসলে এই বাহিনী অস্ত্রসজ্জা ও সংখ্যার দিক থেকে মূল সামরিক বাহিনীর তুলনায় হবে অধিকতর শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ।

৩) ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশের কাছ থেকে “বাংলাদেশ” অস্ত্র কিনতে পারবে না। অস্ত্রের দাম ভারত সরকারই ঠিক করে দেবে। কোন ভারী অস্ত্র, সাঁজোয়া গাড়ি ও ট্যাংক ইত্যাদি দেওয়া হবে না। সামরিক ট্রেনিং দিতে হবে ভারত ও রাশিয়ার কাছ থেকে। ৪) ‘‘বাংলাদেশ” এর পররাষ্ট্র নীতি ভারত সরকারের পররাষ্ট্র নীতির অনুবর্তী হতে হবে।

৫) অভ্যন্তরীণ েেত্র ও ভারত সরকারে হুকুমমত চলতে হবে। “বাংলাদেশ” এর বাৎসরিক বাজেট ও অন্যান্য পরিকল্পনাগুলি ভারত সরকারকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। ৬) ‘‘বাংলাদেশ” এর বহির্বাণিজ্য ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ভারত সরকারের অনুমতি ভাড়া কোন পণ্য বিদেশে রপ্তানী করা যাবে না। কোন পণ্য কত দরে বাইরে রপ্তানি করতে হবে ভারত সরকার সেই দর বেঁধে দেবে।

এইসব পণ্য ভারত সরকার নিজে কিনতে চাইলে “বাংলাদেশ সরকার” আর কারো সাথে সেই পণ্য বিক্রির কথা আলোচনা করতে পারবে না। ‘‘বাংলাদেশ সরকার” আর কারো সাথে সেই পণ্য বিক্রির কথা আলোচনা করতে পারবে না। ‘‘বাংলাদেশ” এর আমদানী তালিকা ভারত সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। ৭) উপরোক্ত চুক্তিগুলি “বাংলাদেশ সরকার” এক তরফাভাবে অস্বীকার করতে পারবে না। ভারত সরকার অস্বীকার না-করলে বছরের পর বছর এ চুক্তিগুলি বলবৎ থাকবে।

মোঃ তোয়াহা কর্তৃক প্রকাশিত, প্রকাশের তারিখ নেই, আনুমানিক ১৯৭৩; কমিনিষ্ট পার্টি

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।