আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোট বেলার গল্প-সল্প



ছোট থাকতে, তখনও স্কুলে ভর্তি হয়েছি কি হইনি মনে নেই, আব্বা অফিস থেকে আসলে আমাদের দুই বোনের (আমি আর ছোট বোন) কাজ ছিল আব্বার দুই পায়ের জুতা-মোজা খুলে দেয়া, লুঙ্গী এগিয়ে দেয়া। আব্বা হাত-মুখ ধুয়ে ভাত খেয়ে একটু শুতেন। আমরা দুই বোন তখন আব্বার দুই পাশে বসতাম। আব্বা দুই হাতে আমাদের দুইজনের মাথা রাখতাম। আব্বা মাঝে মাঝে গান শুনাতেন, কখনও কখনও ছড়া বলতেন।

আর কখনও আমরা আবদার করলে গল্প শুনাতেন। গল্পগুলো বেশির ভাগ অনেকবার করে শোনা থাকত। তাও শুনতে চাইতাম। মাঝে মাঝে আমাদের ঠান্ডা করার জন্য আব্বা বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতেন। আব্বার বেশির ভাগ গল্প ছিল বোকা জোলাদের নিয়ে।

(সম্ভবত জোলা বলতে তাঁতীদেরকে বোঝায়, যারা বংশানুক্রমে তাঁতের কাজ করে)। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার শুনেছিলাম এক জোলার শ্বশুরবাড়িতে কিছুমিছু নিয়ে যাওয়ার গল্প। এইটা মনে হয় সবাই ছোটবেলায় শুনেছে। একটা গল্প ছিল এমন, এক গ্রামে এক পন্ডিত এসে তার পান্ডিত্য জাহির করতে থাকল। তার পান্ডিত্যকে টেক্কা দেয় এমন কোন মানুষ সেখানে নেই।

তখন এক জোলা এসে পন্ডিতকে চ্যালেঞ্জ করল। ঠিক হল যে তারা সবার সামনে মুখোমুখি বুদ্ধির লড়াই করবে। তবে লড়াই হবে ইশারায়। গ্রামের সবাই জড়ো হল এক মাঠে। পন্ডিত আর জোলা মুখোমুখি বসল।

পন্ডিত প্রথমে এক আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখাল। জোলা সাথে সাথে দুই আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দিল। এরপর পন্ডিত পাঁচ আঙ্গুলে গোলাকার বস্তু ধরলে যেমন হয় সেভাবে ইশারা করে দেখাল। জোলা সেটা দেখে সেও গোলাকার বস্তুর মত করে হাতের ইশারা করল, তবে হাতটা স্থির না রেখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাল। পন্ডিত এবার বলে উঠল, আমি হার মানছি।

এই লোক অনেক জ্ঞানী, তাকে বুদ্ধিতে হারানো আমার পক্ষে সম্ভব না। গ্রামের সবাই খুব খুশী, তাদের মান রক্ষা হয়েছে। কিছু কৌতুহলী মানুষ এবার পন্ডিতকে বলল, তা আপনাদের প্রশ্নোত্তরের ব্যাপারটা তো বুঝলাম না, একটু বুঝিয়ে দেন না আমাদের। পন্ডিত বলল, আমি প্রথমে এক আঙ্গুল দেখিয়ে বললাম, আল্লাহ এক। সে দুই আঙ্গুল দেখিয়ে বুঝিয়ে দিল, এক আল্লাহর রাস্তা দেখানোর জন্য তার রাসূল (সাঃ) -ও আছেন।

এরপর আমি হাতের ইশারায় বললাম পৃথিবী গোল। সে তখন হাত ঘুরিয়ে বুঝিয়ে দিল, গোল পৃথিবীটা স্থির না, এটা অনবরত ঘুরছে। এইবার গ্রামবাসীর সন্দেহ হল, আসলেই কি জোলার এত বুদ্ধি? তারা জোলার কাছে গিয়ে জানতে চাইল কী হয়েছিল। জোলা বলল, পন্ডিত আমারে এক আঙ্গুল দেখায়া কয়, তর এক চোখ কানা কইরা দিমু। আমি কইছি, আমি তর দুই চোখ কানা কইরা দিমু।

পরে পন্ডিত হাত দিয়া আমারে আন্ডা দেখায়। আমি কইছি ঐ আন্ডা আমি পেঁয়াজ মরিচ দিয়া ভাইজা খাইয়ালামু। লেখাটা কি বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আব্বার আরেকটা গল্প খুব মনে পড়ছে। ছোট্ট গল্প, লিখেই ফেলি।

এক দেশে ছিল এক রাজা। (বেশির ভাগ গল্পের শুরু তো এমনই হয়)। রাজার প্রতিদিন ডিম খেত। ডিম খেতে খেতে তার পেটটাই গেল ডিমের মত হয়ে। রাজা তখন কবিরাজকে ডেকে পাঠাল।

কবিরাজ দেখে বলল, আপনার ডিম খাওয়া ছাড়তে হবে, এর বদলে কলা খাবেন। কবিরাজের কথামত রাজা প্রতিদিন কলা খাওয়া শুরু করল। কিছুদিন পর তার পেট হয়ে গেল কলার মত। আবার কবিরাজের ডাক পড়ল। কবিরাজ এবার দেখেশুনে বলল, আপনার ডিম খাওয়াও বাদ, কলা খাওয়াও বাদ, আপনি খাবেন ডালভাত।

এরপর থেকে রাজা প্রতিদিন ডালভাত খেত। আর তার পেটও একদম ঠিকঠাক হয়ে গেল। গল্প শেষ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।