‘এশা (আয়েশা হুমায়রা) আমাকে বলল, “ছেলেটা বাড়াবাড়ি করছে। আমাদের সম্পর্কের কথা ওর বাবাকে বলে দেবে বলে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছে। ওকে একটা শিক্ষা দাও। ” ১৯ জুন রাতে এশার ঘরে ওর সামনেই আমি সামিউলের গলা টিপে ধরি। এশা পা চেপে ধরে রাখে।
তারপর বালিশ চাপা দিই। এতে সামিউল মারা যায়। ’
মোহাম্মদপুরের আদাবরে শিশু সামিউল হত্যা মামলার আসামি শামসুজ্জামান আরিফ র্যাব সদর দপ্তরে এভাবেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন। তাঁর কথা শুনে র্যাব কর্মকর্তারাও বিস্ময় প্রকাশ করেন। গতকাল সোমবার ভোরে বাড্ডার নতুনবাজার থেকে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা আরিফ ও তাঁর ভাই নুরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করেন।
এর আগে আদাবর থানার পুলিশ আরিফের স্ত্রী সাথীকেও গ্রেপ্তার করে।
আরিফ হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিলেও সামিউলের মৃতদেহ ফ্রিজে লুকানো এবং তা বস্তাবন্দী করে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানেন না দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘ওই রাতে হত্যাকাণ্ডের পর আমি ছাদে চলে যাই। সারা দিন ছাদেই বসে থাকি। বের হই বিকেলের পর।
আমার ধারণা, এশা পরে লাশটি ফ্রিজে রেখে দেয় এবং সুবিধাজনক সময়ে রাস্তার পাশে ফেলে আসে। ’
গ্রেপ্তারের পর আরিফ ও তাঁর ভাইকে গতকাল র্যাব সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। খুনের কথা অকপটে স্বীকার করে আরিফ জানান, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ভাই নুরুজ্জামানের অবৈধ সম্পর্ক আছে। এ কারণে র্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর তিনি নুরুজ্জামানকে ফাঁসাতে চেয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুন ২০১০) মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের এ-ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের একটি ফাঁকা জায়গা থেকে সামিউলের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়।
সামিউল মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদসংলগ্ন গ্রিনউডস স্কুলে নার্সারিতে পড়ত।
ছেলেকে খুনের অভিযোগে পুলিশ লাশ পাওয়ার পরপরই মা আয়েশাকে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মামলাটি তদন্ত করছেন আদাবর থানার উপপরিদর্শক কাজী সাহান হক। পাশাপাশি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও (ডিবি) তদন্ত করছে।
এর আগে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা বলেন, সামিউল খুন হওয়ার এক সপ্তাহ আগে তিনি ও আরিফ বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু আরিফ কোনোভাবেই তাঁর একমাত্র ছেলে সামিউলকে মেনে নিতে পারছিলেন না। আরিফ তাঁকে বলেছেন, ‘বিয়ে হতে পারে, কিন্তু সামিউলকে বাবার বাড়িতে রেখে আসতে হবে। ’ আয়েশার ধারণা, এ কারণে পথের কাঁটা সরাতে সামিউলকে হত্যা করতে পারেন আরিফ।
আয়েশার এ বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে আরিফ বলেন, ‘ঘটনার দিন রাতে এশা আমাকে আসতে বলে।
রাত পৌনে ১০টার দিকে আমি ওই বাসায় আসি। এ সময় আমার জন্য এশা বাসার নিচে নেমে আসে। দারোয়ান যাতে আমাকে দেখতে না পায়, সে জন্য এশা দারোয়ানদের একজনকে ডিম কিনতে পাঠায়, আরেকজনকে বাচ্চার বল খুঁজতে পাঠায়। এরপর আমি উপরে উঠে আসি। কিন্তু তার পরও দারোয়ান আমাকে দেখে ফেলে।
’ আরিফ জানান, তাঁর আসল নাম শামসুজ্জামান। আয়েশা তাঁকে আরিফ নামে ডাকেন বলে দারোয়ানেরাও এ নামেই চেনেন।
আরিফ স্বীকার করেন, ওই রাতে তিনি বাসায় ওঠার পরপরই সামিউল তাঁকে দেখে ফেলে। এ কারণে তিনি ছাদে চলে যান। গভীর রাত পর্যন্ত ছাদেই বসে থাকেন।
রাত দেড়টার দিকে সামিউলের বাবা ঘুমানোর পর আয়েশা তাঁকে মিসড কল দিলে তিনি বাসার ভেতরে যান। আয়েশার স্বামী আলাদা কক্ষে থাকেন, সামিউল তখন মায়ের বিছানায় ঘুমাচ্ছিল। ঘরে ঢুকেই ডিমলাইটের আলোয় আরিফ ছেলেটিকে হত্যার জন্য গলা টিপে ধরেন।
আরিফ বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পরপরই আমি ছাদে চলে যাই। ভোর পর্যন্ত ছাদে ছিলাম।
কয়েকবার বের হওয়ার চেষ্টা করেও পারিনি। এভাবে দুুপুর পর্যন্ত ছাদেই ছিলাম। দুজন কাজের লোক আমাকে ছাদে দেখে ফেলে, তবে তারা কিছু বলেনি। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ছাদে থাকার পর বের হতে গেলেই দারোয়ানেরা দেখে আটকে দেয়। এশাকে ফোন করে জানালে সে নিচে নেমে এসে আমাকে ছাড়িয়ে দেয়।
’
সামিউলের মৃতদেহ কী হলো? র্যাব কর্মকর্তাদের এ প্রশ্নের জবাবে আরিফ বলেন, ‘আমি সকালে একবার এসে লাশের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলাম। এশা বলে, “তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি ফ্রিজে রেখে দিয়েছি। ” তবে ওই দিন এশা তার রুমে কাউকে ঢুকতে দেয়নি। ’
আরিফের বক্তব্যের পর র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, আয়েশা ও আরিফ শিশুটিকে হত্যার পর লাশ ফ্রিজে রাখেন।
এক দিন পর বাচ্চাটি খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে বলে গল্প ফাঁদেন। পরে সুযোগমতো কেউ একজন মৃতদেহটি রাস্তায় ফেলে আসেন। অবশ্য আদাবর থানার ওসি জাকির হোসেন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, আয়েশা এখনো এ কথা স্বীকার করেননি।
র্যাব সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও জনসংযোগ শাখার পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে শামসুজ্জামান আরিফ জানিয়েছেন, ’৯১ সালে তিনি প্রথম বিয়ে করেন। ওই ঘরে তাঁর দুই সন্তান আছে।
২০০২ সালে বিউটিশিয়ান সাথীর সঙ্গে পরিচয় হলে তিনি সাথীকেও বিয়ে করেন। সাথীর ঘরেও দুই সন্তান আছে। ২০০৪ সালে স্ত্রীর বিউটি পারলারে আশেয়ার সঙ্গে আরিফের পরিচয় হয়।
আরিফের স্ত্রী সাথী আটকের পর পুলিশকে বলেছেন, তাঁর স্বামী খুবই খারাপ প্রকৃতির লোক। তাঁর পক্ষে বাচ্চা খুন করা কোনো ব্যাপার নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।