আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মন খারাপের আষাঢ়



মনাকাশের সিঁড়ি ১৪ আষাঢ় ১৪১৭ কবিতা আমার, অঝোরে ঝরছে আকাশ। আষাঢ় এসেছে চৌদ্দ দিন আগে কিন্তু আষাঢ়স্য দিন বুঝি এল মাত্র গতকাল। মৃত্তিকা মেতেছে তুমুল কেলীতে। বৃষ্টির সাথে সঙ্গম সুখে গা এলিয়ে দিয়ে অলস আর আদর আদর চোখে মাটি চেয়ে আছে নরম তুলতুলে ঊর্বশীর মতো। নববর্ষায় পৃথিবী আজ অনেক খুশি।

ঠিক যেন নববধূর মত সুখী। তবু কি স্বার্থক হয়নি আকাশের কান্না! এখনো সে রয়ে রয়ে কাঁদছে কোন না পাওয়ার ব্যথায়? আমি কিন্তু বুঝেছি তার সে ব্যথা। এ ঠিক সেই ব্যথা- সব কিছু থাকা সত্ত্বেও যে ব্যথা আজো তোমার ভেতর বোবা কান্নার ঢেউ তোলে। কি যেন হারিয়েছি, কি যেন নেই- এর মত না যায় বুঝা আবার না যায় ভোলা। অসহনীয় সে জ্বালা প্রখর পোড়ায় গোপনে।

শত কোটি বস্তুগত প্রেম হারানোর চেয়ে অধিক এই অনিদৃষ্ট না পাওয়ার যন্ত্রণা। আবার বৃষ্টির মধ্যে শন্ শন্ করে বয়ে যাওয়া হাওয়া এ খবরও আমাকে জানিয়ে যায় যে, ‘অবুঝের মত করে বুঝেছ সব কিছু। ’ তাই মোহমুক্তি ঘটেনা। তবু বলি, থাক না এ মোহ আমার নীরবে আর গোপনে। সব সুখ যখন না বুঝে ‘দিয়েছি জলাঞ্জলি’ তখন অবুঝের মত চিঠি লেখার সুখ থেকে কেনই বা বঞ্চিত করবো নিজেকে।

এ লেখা আমার পদ্য বা গদ্য কোনটাই যে হয়না তা খুব ভাল করেই জানি। তারপরও লিখি। কেন লিখি জান? ওই যে- আকাশ আর পৃথিবীর মাঝখানে যতখানি ফাঁকি তা ঘুচবার নয়। যদি ণিকতরে মিলন ঘটে হাহাকারের বৃষ্টিতে- এই শুধু প্রত্যাশা। আকাশের বিছানায় শয্যা পাতার সামর্থ্য নেই মৃত্তিকার, আবার মৃত্তিকার বিছানায় নেই আকাশের অধিকার।

কারো বিছানায় কেউ শয্যা পেতে সুখী হতে পারেনা কস্মিন কালেও। তাই শয্যা পাতা হৃদয়ের বিছানায়। মন মৃত্তিকা আমার, শুয়ে থাকো পাশাপাশি এখানে। বিচ্ছেদের ভয় নেই। কোন পাতায় কোন হাওয়া দোলা দেয় আর কোন ফাঁকে কোন আলো লুকোচুরি খেলে যায় তা ভাববার আর অনুভূতির রঙে রাঙিয়ে নেয়ার উত্তম শয্যা এটি।

এখানে সুখ চিরকালের। আজ লিখতে বসে তোমার সেই কথাটি অনেক বেশি মনে পড়ছে। হয়তো তা আজ আর তোমার মনে নেই। আমাকে একটি শূণ্যস্থান পূরণ করতে দিয়েছিলে। অনেক ছোট বেলায় স্কুলে পড়ার সময় শিকরা শূণ্যস্থান পূরণ করতে দিতেন।

পরীায় ও আসতো। সেই ছেলেবেলায় ঝটপট শূণ্যস্থান পূরণ করতে পারার গৌরবে নিজেকে কত নিপুন ছাত্রই না ভাবতাম। কিন্তু আজকের মতো সেদিন বুঝতাম না কোন শূণ্যস্থানই নিছক শূণ্যস্থান নয়। এটাও বুঝতামনা যে সব শূণ্যস্থান পূরণযোগ্য নয়। যাই হোক তুমি লিখেছিলে, ‘আকাশ আর পৃথিবীর মাঝে যেটুকু ফাঁকি..................... ! বাকীটা তুমি সম্পূর্ণ করে দিও’।

এই শূণ্যস্থানে যে কথাগুলো যথাযথ হবে তা আজো আমি লিখতে পেরেছি কি না জানিনা। হয়তো পারিনি। আর থাক না একটু শূণ্যতা। ওটুকু না থাকলে পূর্ণতার সুখ বুঝবো কি দিয়ে? বিবর্তনশীল কবিতাকে দেখেছি নানা রূপে। কখনো সে দেখা দিয়েছে কান্ত চেহারায়।

কিন্তু মেঘের বিবর্তন কেন আমার চোখে ধরা পড়ে না। ও কি কখনো এতটুকু সভ্য হবে না? আদিম বৃত্তি থেকে কেন সে বের হয় না বুঝি না। একই নিয়মে চিরকাল ঝরতে হবে কেন? ও যখন মুখ গোমরা করে গুমোট ভাব ধরে থাকে তখন যে কারো অন্তর জ্বলে যায়, আর যখন নীর হয়ে ঝরে তখন যে আমার ভেতরে মরি আমি হাজারবার এ কথা কেন সে বুঝতে চায় না। কি জানি! হয়তো ও বুঝেই করে সব আর আমি বুঝি অবুঝের মত। সেই কবে থেকে আমি কবিতার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।

তারপরও ওই চোখ একটুও একঘেয়ে মনে হয় না। অন্ধকার রাতে আমার জন্মস্থানের বাগানঘেরা আঁলপথগুলো যেমন স্বাচ্ছন্দে চিনতে পারি ঠিক তেমন পরিচিত হয়ে উঠেছে কবিতার কপাল, চোখের পাতা, নাক, মুখ, চিবুক, হাত, পা, নখ। সব পথ ঘুরে যখন এসে দাড়াই তোমার চোখের কিনারে তখন পথ যেন কোথায় মিলিয়ে যায়। দিগন্তের শেষ রেখাটির মত হারিয়ে যায় অস্পষ্ট হয়ে। কখনো দেখি নূহের প্লাবন কখনো বা খা খা মরু।

এই দেখি শরতের শুভ্র আকাশ আবার দেখি শ্রাবণ মেঘের ছায়া। যা দেখি তা কি সত্যি? না কি আমার চোখের ঘোর! হবে হয়তো কিছু একটা। আমার কি দোষ বল- কোন মানুষই তো একই জিনিসের দুই পিঠ এক সাথে দেখতে পায় না। তবু বলি স্বচ্ছতায় ভরা দৃষ্টি হোক তোমার। আনত বরষায় ‘মায়ার কুজ্ঝটি জাল’ ধুয়ে দিক মৃত্তিকার বুক থেকে।

মেঘের ছায়া সরিয়ে নতুন আলোর মত ঠিকরে পড়–ক কবিতার ছটা। কেটে যাক মন খারাপের আষাঢ়। ভাল থেকো কবিতা আমার। ইতি কবিমনি

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।