আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আহ্‌ বৃস্টি!!!

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

আহ্‌ বৃস্টি!!! শত দুর্ভোগের পরেও বাঙালির প্রাণের ঋতু অঝোর বর্ষণ আমাদের নিয়ে যায় শৈশবের দুরন্ত দিনগুলোতে। কিন্তু চলতি বছর কাংখীত বৃস্টি নেই! তারপরেও বৃস্ট হলেই মনে পড়ে ছোটবেলার গান "বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান......"। জ্যৈষ্ঠের অগ্নিক্ষরা দহনে নিসর্গ প্রকৃতি যখন দগ্ধ, নিরুদ্ধ-নিশ্বাস, তপ্ত ধরণীর বুকে যখন সুতীব্র হাহাকার, তখন প্রাণীকুল চেয়ে থাকে মেঘমেদুর অম্বরে, কখন আবির্ভাব ঘটবে "ভৈরব হরষে ঘন গৌরবে নবযৌবনা" বর্ষার। আকাশে দেখা যাবে ধূসর পিঙ্গল কৃষ্ণ মেঘের সমারোহ। শোনা যাবে বিদ্যুৎস্ফুরণের মুহুর্মুহু শব্দ।

বঙ্গ-প্রকৃতির ধূলিধূসর অঙ্গ থেকে মুছে যাবে রুক্ষতার মালিন্য। নব জলধারায় অবগাহন করবে নিসর্গ প্রকৃতি। কদম, কেয়া, যুঁই, গন্ধরাজ, হাসনাহেনার বিচিত্র বর্ণ ও গন্ধের উৎসবে প্রকৃতির হৃদয়ের দ্বার খুলে যাবে। সেই শত শতাব্দীর পূর্বে কালিদাসের মেঘ আজও মর্ত্যের বিরহী মানুষের কাছে নিয়ে আসে নতুনের বার্তা। আষাঢ়ের ওই মৃদঙ্গধ্বনি আজও মানুষকে নিয়ে যায় কোন অলকাপুরীতে, কোন চির যৌবনের রাজ্যে।

কেবল বিরহ নয়, মিলনের বার্তাও আছে কবিকণ্ঠে - "ঘন বনতলে এসো ঘননীল বসনা ললিত নৃত্যে বাজুক স্বর্ণ-রসনা। আনো বীণা মনোহারিকা কোথা বিরহিনী, কোথা তোরা অভিসারিকা আনো মৃদগ্ধ মুরজ মুরলি মধুরা, বাঁজাও শঙ্খ, কলরব করো বধূরা এসেছে ওগো নব অনুরাগিনী"। অঝোর বর্ষণ আমাদের টেনে নিয়ে যায় শৈশবের দুরন্ত দিনগুলিতে। স্কুল ছুটি শেষে বৃষ্টিতে বই-খাতা ভিজিয়ে বাসায় ফেরা অথবা পাড়ার ছেলেরা মিলে কোন খোলা মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলা। সারা শরীরে কাদা মাখিয়ে বাড়ি ফেরার পর বুবু'র বকুনি খাওয়া।

মনে পড়ে কত কবিতার লাইনঃ- মেঘের খেলা দেখে কত খেলা মনে পড়ে কতদিনের কত ঘরের কোণে !! নাগরিক জীবনে অনেকটা হুড়মুড় করেই চলে আসে বর্ষা। বর্ষার আগমনে পাল্টে যায় নগর জীবন। বর্ষার আনন্দ ছড়িয়ে যাবে পুরো গ্রাম বাংলায়, কিন্তু নগরবাসীর বাদল দিনের ছোঁয়া মায়াবিনীর পরশ মনে হলেও পরে নেমে আসে দুর্ভোগের ঝুলি। তখন মনে হয় নগরীতে বর্ষা মানেই এক অভিশপ্ত যন্ত্রণা। ঘরে-বাইরে কোথাও শান্তি খুঁজে পায় না নগরবাসী।

সামান্য বৃষ্টি হলেই এই নগরীতে পানি জমে যাওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ঘর থেকে পা বাড়ালেই হাঁটু পানি। দুর্গন্ধ, পচা পানি মাড়িয়ে যেতে হয় গন্তব্যস্থলে। কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হলে তো কোন কথা নেই। শহরের নিমাঞ্চলের বাসিন্দারা পানির ওপরেই জীবন কাটায়।

ঘরে চুলা জ্বালানোর জো থাকে না, থাকার পরিবেশ যাচ্ছে তাই। সব মিলিয়ে বর্ষায় নাগরিক জীবন হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ। বৃষ্টির পানির সঙ্গে যুক্ত হয় ড্রেনের ময়লা পানি, ডাস্টবিনের আবর্জনা। পয়ঃনিষ্কাশনের মলমূত্র হলে সেই পানি কতটা ভয়ানক তা শুধু নগরবাসীই জানে। পানি ডিঙ্গিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য একমাত্র বাহন রিকশা।

এই সুযোগে রিকশা চালকরা দাম হাঁকিয়ে বসেন ভাড়ার দ্বিগুণ-তিনগুণ, পাঁচগুণ। বাধ্য হয়েই যেতে হয় নগরবাসীকে। আর টানা বৃষ্টির কারণে হাঁটু পানি জমে গেলে রাজপথে নেমে আসে ডিঙ্গি নৌকা। গ্রামে নৌকায় চড়তে না পেরে অনেকে রাজপথে নৌকায় ওঠে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটায়। অবিন্যস্ত শহর, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নগরবাসীকে নাকাল করে রেখেছে।

একদিনের বৃষ্টিতে রাজধানীর রাজপথে জমে থাকে হাঁটু পানি। এতে স্বাভাবিকভাবেই যানবাহনের গতি থেমে যায়। নষ্ট হয় গাড়ির ইঞ্জিন। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রী, অফিসগামী কর্মব্যস্ত মানুষ, গার্মেন্টসগামী মহিলা শ্রমিক থেকে সাধারণ পথযাত্রীদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না।

বর্ষা মৌসুমে ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল নগরবাসীর আরেক যন্ত্রণা। রাস্তাগুলো ডুবে যাওয়ার আগেই উধাও হয়ে যায় ম্যানহোলের ঢাকনা। সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতার মাশুল দিতে হয় নগরবাসীকে। যে ময়লা পানি জমে, তাতে পথ চলার সময় ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল দেখার উপায় নেই। এসব ম্যানহোলে পা ঢুকে, রিকশা বা গাড়ির চাকা পড়ে অহরহ দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় পথচারী ও যাত্রীদের।

কখনো বিপন্ন হয়ে উঠে প্রাণ। বর্ষাকালে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি যেন নগর জীবনের যন্ত্রণাকে আরো এক ধাপ বাড়িয়ে দেয়। বর্ষা এলেই শুরু হয় গ্যাস লাইন, পানি লাইন, বিদ্যুৎ লাইন কিংবা টেলিফোন লাইনের কাজ। বছরের আরো পাঁচটি ঋতু রেখে কর্তৃপক্ষের খোঁড়াখুঁড়ির কাজ বর্ষা ঋতুতে এত পছন্দনীয় কেন তা নগরবাসীর বোধগম্য নয়। শুধু বাইরে নয়, ঘরেও সুখ নেই নাগরিক জীবনে।

বর্ষা আসলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতার কারণে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায় এবং সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় এডিশ জীবাণু বহনকারী মশা। আর ডেঙ্গুজ্বরে আতংকে ভুগে নগরবাসী। পানিবাহিত রোগের বিস্তার ঘটে এই ঋতুতে। গ্রামের মতো বৃষ্টিতে ভিজে আনন্দ পায় নগরের শিশুরাও। তবে মাঠের অভাবে তাদের শখ পূরণ করতে হয় বাড়ির ছাদে কিংবা খোলা বারান্দায়।

বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলা আর পুকুরে সাঁতার কাটার যে স্বর্গীয় সুখ তা থেকে বঞ্চিত হয় নগরের শিশুরা। নগরবাসী উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তরা ছুটির দিনে ঘর ছেড়ে বের হয় না। খাবার টেবিলে বৃষ্টির দিনে শোভা পায় সরষে ইলিশ আর ভুনা খিচুড়ি। কিন্তু ছিন্নমূল মানুষগুলোর দুর্ভোগ ওঠে চরমে। পলিথিন ভেদ করে পানি প্রবেশ করে ছোট্ট খুপড়ি ঘরের মধ্যে।

ছেলে-মেয়ে নিয়ে আশ্রয় নিতে হয় কোন স্কুলের আঙ্গিনায় কিংবা কোন দালানের পাশে। মাঝে-মধ্যে তাতেও তাদের ঠাঁই মিলে না। অনাহারে, অর্ধাহারে কাটাতে হয় দিন। বর্ষা ঋতুর আগমনের সঙ্গে সঙ্গে নগরবাসীও প্রস্তুতি নেয় বর্ষা ঋতুর প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে নগরবাসী মার্কেটে ভিড় জমায় ছাতা, রেইনকোট, বর্ষায় চলার উপযোগী স্যান্ডেল কিংবা জুতা কিনতে।

সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যেও থেমে থাকে না নগর জীবন। এত দুর্ভোগের পরেও বর্ষা বাঙালির প্রাণের ঋতু। মানুষের প্রাণে সঞ্চার করে অনন্ত বিরহ বেদনা। মনকে দেয় চির সৌন্দর্যলোকের আভাস।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।