এক অসাম্প্রদায়িক উজ্জল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি
আমি কোনকিছুতেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারি না। তবে এই লেখাটার অবশ্যই একটা ধারাবাহিক রূপ দিতে চাই। নইলে তা অপূর্ন থেকে যাবে।
মানুষটা আমি খুব ই সামান্য। শিক্ষা দীক্ষা জ্ঞান বুদ্ধীতে খুব ই ছোট।
কিছুই নেই বিশেষ নিজেকে নিয়ে গর্ব করার মত। তবে বলার মত আছে শুধু ১টা বিষয়;আর তা হল আমার সমৃদ্ধ শৈশব। এই সিরিজটা লেখা হবে আমার শৈশবের বিভিন্য স্মৃতি নিয়ে।
শৈশবে একাধারে যেমন আবুল ছিলাম আবার আরেকদিকে প্রচন্ড ডানপিটেও ছিলাম। এখনো রেশ তার খানিকটা রয়ে গেছে।
যে স্মৃতিগুলো এখনো মনে আছে এক্কেবারে ছোট্টবেলার,সেটা দিয়ে ই শুরু করি....।
বয়স তখন ৪ কী ৫। ১টা টাকা দেখিয়ে আমার বান্ধবী রিক্তা খুবই গর্ব সহকারে বলল ''হোন,কাইল আব্বায় মোরে ২টাহা দেলহে। আইজ ১টাহা খাইছি,"
আমি বললাম,"মোরে দিবি?"
সে বলল,"এহ্ ক্যা?মোর টাহা তোরে দিমু ক্যা?
সভাবতই আমি অবাক ও মনখুন্ন। জীবনে প্রথম বুঝলাম কারো জিনিস অন্য কাউকে চাইতে হয়না,বা পেতে নেই।
ঠিক করলাম আমিও বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে খাবো ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে। বাবার কাছে টাকা চাইতেই প্রচন্ড ধমক। কোন মেহমান এসে আদর করে টাকা দিতে চাইলে মা রে রে করে ওঠে,"দাদা টাকা দেবেননা ছোট বাচ্চাদের হাতে। "
মনের দুঃখে আমি সুযোগের অপেক্ষায় থাকি।
আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছেন আমার মেশো(খালু),মা যখন রান্নাঘরে ব্যাস্ত হলুদ টুকটুকে জামা পড়া আমাকে ১টাকার ২টো নোট দিয়ে বললেন,"এই টাকাটা খেয়ো।
"
আমিতো খুশিতে লাফিয়ে টাকা নিয়ে ১ছুটে রিক্তাদের বাসায়। ওকে ডেকে বললাম,"রিক্তা দ্যাখ দ্যাখ আমার টাকা,হা হা। "
রিক্তা লোভী হয়ে বলল,"ল খাই। "
আমি বললাম,''এহ,মোর টাহা তোরে দিমু ক্যা?মুই একলাই খামু"বলেই ১টাকার ১টা নোট চিবিয়ে খেতে শুরু করলাম। রিক্তা কিছু বলার আগে টাকা চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া শেষ।
ও খানিকটা হেসে হেসে আংগুল উচিয়ে বলল,"ওরে কী বলদা,টাহা খায়। হা হা হি হি....এ বলদ টাহা খাইতে অয় দোকানে যাইয়া চকলেট কিননা। ল যাই। "
আমিতো তাজ্জব। এবার বুঝলাম দোকানে সবাই কেন যায়।
গেলাম দোকানে। আমাদের বাসা থেকে একমাত্র দোকানটা ছিল ম্যালা দূর। পথে অনেক আমগাছ পড়ত। তখন ছিল বৈশাখ বা জৈষ্ঠ মাস। আমের দিন।
তো যেতে যেতে আমার হলুদ জামা আস্তে আস্তে কাল হয়ে যেতে লাগল। আমিতো বুঝলাম না,কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।
রিক্তা বলল,"এ তড়তড়ি ল,তোর গায় পোক পড়ছে,দৌড়া দৌড়া। "উল্লেখ্য,তখন এক ধরনের মশার মত কালো পোকা ছিল যা ঐ সময়টায় হলুদ জিনিস দেখলেই ঘিরে ধরতো। দোকানে যেতে যেতে আমার সারা গা প্রায় পোকায় কালো হয়ে গেল।
যাহোক দোকানে গিয়ে চকলেট ভুনভুনি কিনলাম,দোকানদার কাকু ঝেড়ে টেরে পোকা ছাড়ালো।
ফেরার পথে আবার পোকা। এবার ভয়াবহ অবস্থা। যতই দৌড়াই আর কাজ হয় না। আরো বেশি পোকায় ভরে গেল সারা গা।
এবার আমরা দুজনেই ভয় পেয়ে গেলাম। আমি চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম,রিক্তা আরও জোড়ে দৌড়াতে লাগল। গাছপালার ভিতর দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে আর পোকার ভয়ে কাদঁতে কাঁদতে রিক্তার সাথে তাল মেলাতে পারলাম না। ও আমার চেয়ে অনেক আগে দৌড়ে চলে গেল। ওকে আর খুঁজে পেলাম না।
আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম। পথও হারালাম। আবার ঘুরে ফিরে সেই দোকানেই ফিরে এলাম। আমার অবস্থা দেখে দোকানদার কাকু তার ছেলেকে আমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসতে বললেন।
অগত্যা বাসায়।
এবং এহেন অবস্থায় মায়ের কাছে বকুনি,তারপর টাকার কথা শুনে উঠলেন তেলে বেগুনে রেগে। অতপর ছ্যাচা। বলেন আমার কী দোষ আছে কোন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।