"বিশ্বজুড়ে পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"
আজ ২৭ জুন, ২০১০ রবিবার। মনে পরছে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারির কথা। দিনটি ছিল রবিবার। লন্ডনভেরিতে গণতান্ত্রিক আয়ারল্যান্ডের দাবিতে বিক্ষোভরত বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্রিটিশ নিরাপত্তা রক্ষীরা সেদিন নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল। এ ঘটনায় ১৩ জন নিহত হয়েছিল যার মধ্যে সাত জনেরই বয়স ১৯-এর নিচে।
'ব্লাডি সানডে'র ঘটনা আয়ারল্যান্ডে ব্রিটিশ আগ্রাসনের এক অনন্য নজির। দীর্ঘদিন ধরে সেই দেশটিতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে মুক্তির জন্য আইরিশরা মরণপণ লড়াই করে আসছে। দক্ষিণ আয়ারল্যান্ড স্বাধীনতা লাভ করলেও এখনো মুক্তির জন্য লড়াই অব্যাহত রেখেছে উত্তর আয়ারল্যান্ড। সেখানে এখনো ব্রিটিশদের দমন-পীড়ন আধুনিক সভ্যতাকে হতবাক করে দেয়। অবশ্য আইরিশদের দুর্বার প্রতিরোধ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে কিছুটা ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রাম অবিভক্ত আয়াল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রামেরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই 'ব্লাডি সানডে'র ইতিহাসের পেছনে লুকায়িত আছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলা আইরিশদের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস।
১৯৭১ সালের আগস্ট থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে 'স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট' জারি করা হয়। সামান্য সন্দেহের কারণে যে-কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে_এ রকম আইন জারি করা হয়েছিল ওই অ্যাক্টে। ফলে হাজার হাজার জনগণকে বিশেষ করে ক্যাথলিকদের গ্রেপ্তার এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের চাপে তা ১৯৭৫ সালে প্রত্যাহার করা হয়। এ সময়েই ঘটে 'ব্লাডি সানডের ঘটনা'। দ্য রয়্যালি উলস্টার কনস্টাবুলারি (আরআউসি) সিভিল রাইটস মুভমেন্টের অংশ হিসেবে একটি অহিংস মিছিলের আয়োজন করে ক্রিগ্যান থেকে ভেরি পর্যন্ত। সময়টা ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি। মিছিলটা ক্রিগ্যান থেকে শুরু হয়।
প্রায় ২০ হাজার লোকের মিছিল ফ্রি ডেরি কর্নারের কাছে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। একটি ছোট্ট দল মূল ভিড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উইলিয়াম স্ট্রিটে সেনা ব্যারিকেডের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে লিপ্ত হলো। তারা হয়তো-বা কিছু ইট-পাটকেল ছুড়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে প্রথম ব্যাটালিয়ন প্যারাসুট রেজিমেন্টের সেন্যরা তাদের রাইফেল উঁচু করল এবং জনগণের ভিড়ের দিকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। যখন গুলি থামল, তখন ১৩টি নিথর প্রাণ রাস্তায় পড়ে থাকল।
যার মধ্যে সাত জনেরই বয়স ১৯-এর নিচে।
আজ সারা দেশে হরতাল পালিত হচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আজ রবিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। মহাজোট সরকারের প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হবার পর এই প্রথম হরতাল ডাকল তারা। গত ১৯ মে পল্টন ময়দান থেকে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সমস্যার সমাধান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত, বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ ও দমন-নির্যাতন বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
চারদলীয় জোট ছাড়াও সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল হরতালে সমর্থন দেয়। দলীয় সূত্রে জানা যায়, হরতালে রাজধানীর ২৬টি স্পটে অবস্থান করবেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও থাকবেন। আর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তা মনিটরিং করবে দপ্তর বিভাগ। এছাড়াও চারদলীয় অন্যান্য দলসমূহ এবং সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দলও থাকবেন।
বিপরীতে,
'হরতালকারীদের সঙ্গে বাড়াবাড়ি বা অসদাচরণ নয়, তবে বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো ছাড় নয়। জোর করে হরতাল পালন করাতে চাইলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা। বিশৃঙ্খলাকারীদের রাস্তায় দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। ' (বলা হচ্ছে হরতাল কারীদের সঙ্গে বাড়াবাড়ি বা অসদাচরণ নয় কিন্তু একটু পরেই বলা হয়েছে জোর করে হরতাল পালন করাতে চাইলে অর্থাৎ হরতালকারীরা হরতাল পালন করালে তারা বিশৃঙ্খলাকারী হবেন!!!)
পুলিশ বাহিনীকে এ রকম নির্দেশনাই দিয়েছে সদর দপ্তর। হরতালের আগের দিন গতকাল শনিবার এ নির্দেশনা গেছে মাঠপর্যায়ের পুলিশের কাছে।
পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মাঠে থাকছেন। মাঠে থাকবে র্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। রাজধানীসহ দেশের সবখানে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় গত রাত থেকে অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মূলত পুলিশকে সহযোগিতা এবং দিনভর বিভিন্ন এলাকায় টহল দেবেন র্যাব সদস্যরা। পুলিশ জানায়, আজ হরতালের দিন ভোর ৪টা থেকে ঢাকা মহানগর এলাকাকে ৯টি সেক্টর বা এলাকায় ভাগ করে ৪৫১টি পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
এর মধ্যে ৭৪টি স্ট্রাইকিং মোবাইল, ১৩৫টি মোবাইল টহল, ১৫টি স্থানে স্ট্রাইকিং রিজার্ভ এবং ক্যামেরাসহ ইনসিডেন্স কাম এভিডেন্স টিম মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়াও পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে স্ট্রাইকিং, রিজার্ভ, সচিবালয় ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ দল ছাড়াও র্যাব সদস্যরা মাঠে থাকবেন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন মামলার আসামিসহ ২৪৬ জনকে আটক করেছে।
সারাদেশেই চলছে এই ধরপাকড়। মনে চিন্তা জাগে এ ধরনের দ্বিমুখী পজিশনিং কোন সহিসংতার জন্ম দেবেনাতো? আয়ারল্যান্ডের দাবিতে বিক্ষোভরত বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্রিটিশ নিরাপত্তা রক্ষীরা যে সেদিন নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল এমন কোন ঘটনা আমাদের আজ বাংলাদেশে দেখতে হবে নাতো?
যদিও অবশেষে ঔ ঘটনার ৩৮ বছর পর ব্রিটিশ সরকারের বোধোদয় ঘটেছে এবং তারা ব্লাডি সানডে হত্যাকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে।
প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন বলেছেন, 'ঘটনার দিন সেনারা কোনোপ্রকার সতর্ক বা সংকেত না দিয়েই আইরিশদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। সে সময় কিছু ব্রিটিশ সেনার আচরণ ভুল ছিল। ' কিন্তু এতে কি ফিরে আসবে স্বজনহারা স্বজনদের মুখের হাসি?
কোন ব্যক্তি কোন ভুল করলে তার তার ক্ষতির কারণ হয় এবং এ বিষয়ে ভুক্তভোগী হয় ব্যক্তি নিজে। কোন দলের প্রধান কোন ভুল করলে তার খেসারত শুধু ব্যক্তিকে দিতে হয় না গোটা দলকেই দিতে হয়।
কিন্তু যদি রাষ্টীয় নেতারা বা সরকার কোন বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয় তার ভোগ ভুগতে হয় গোটা দেশের অজস্র মানুষের।
ক্ষমা প্রর্থনা সেক্ষেত্রে কি তার ক্ষতি লোপ করতে পারে?
আমরা কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাত হোক তা চাইনা।
রাষ্ট দেশের মানুষের জন্য।
সরকার শুধু নির্বাচিত দলের এজেন্ডা বাস্তবায়িত করার জন্য নয়, এ বোধ আর কবে উদয় হবে আমাদের প্রিয় দেশের রাজনৈতিক নেতাদের?? আর জনগনের ঘুমইবা কবে ভাঙ্গবে????
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।