আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেন আর টিপাইমুখের বিরোধিতা করি না!

ইমরোজ

একটা সময় ছিলো যখন আমি টিপাইমুখ বাঁধের বিষয়ে সক্রিয় প্রতিবাদ করেছি। টিপাইমুখ নিয়ে অনেক সেমিনারে গেছি। অনেক বিশেষজ্ঞ মতামত শুনেছি। নিজের মনে ভারতের এহেন পদক্ষেপকে ঘৃণা করতে শুরু করেছি। কিন্তু আজ আমি ভারতের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করি না।

কেন জানেন? কারণ একদিন হঠাৎ করে আমার বন্ধুরা বেড়াইতে চাইলো। গন্তব্য বুড়িগঙ্গা নদীর তীর। আমি খুশি হয়ে ওদের সাথে রওনা দিলাম। তবে বুড়িগঙ্গায় পৌছে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। আমার কন্ঠস্বর ক্ষিণ থেকে ক্ষিণ হলো।

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। নৌকায় উঠেছিলাম। বুড়িগঙ্গায় বন্ধুদের সাথে। আমার শুধু মনে হচ্ছিল একটা বিশালাকার ড্রেনের মধ্য দিয়ে নৌকা চলছে। নৌকা চলছে, এমন সময় আমার এক বন্ধু বমি করে ফেলল।

অসম্ভব রকমের অবস্থা হলো তার। দুর্গন্ধে আমরা সবাই নাকে কাপড় দিয়ে রেখেছিলাম। বন্ধুটি যখন নৌকায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল, আমরা মাঝিকে বললাম, নৌকা তীরে ভিড়াও। মাঝি কর্কশ কন্ঠে বলল, এক ঘন্টার টাকা দিয়ে হবে। আমি বললাম, দিবো।

তবুও তীরে ভিড়াও। বুড়িগঙ্গার যে পাড় দিয়ে নৌকায় উঠেছিলাম, আর যে পাড় দিয়ে নৌকা থেকে নামলাম, সেটার অবস্থা অবর্ণনীয়। পাড়ের পাড়ে, নানারকমের ফলের পঁচা অংশ। নানা রকমের আবর্জনা। পাড় থেকে কিছুটা দূরে চোখ মেললে দেখা যায় আসানমঞ্জিল, নবাব বাড়ি, যেটা সগৌরবে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।

আমার ধারণা পাল্টাতে শুরু করলো। এই কিছুদিন আগেই আবার গেলাম তুরাগ নদীতে। অবাক হয়ে দেখলাম বিশ্বইজতেমা ময়দানের উপকন্ঠে অবস্থিত তুরাগের প্রায় ৮০ ভাগ ভরাট হয়ে গেছে। এবং নদী বলতে যা দেখা যায় তাকে একটা খাল বললেও যেন খালের অপমান হয়। আমাদের দেশের নদীগুলো কে নষ্ট করছে? এই প্রশ্নের কি জবাব হবে? ভারত? যদি তাই হয় তাহলে আমরা কেন আমাদের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যার এ অবস্থা করেছি? এর জন্য দায়ী কি ভারত? একবার ভেবে দেখুন।

নদী ড্রেজিং বলে একটা শব্দ আমরা প্রায়ই শুনি। সেই ড্রেজিং কোনদিন হবে কিনা সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে একটি সংগঠন বুড়িগঙ্গা ড্রেজিং করার আগে একটা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে অতিরিক্ত খরচের কারণ জানানো হয় এইভাবে, নদীর গভীরে ত্রিশফুট পুরো পলিথিনের আস্তরণ সরাতে এই ব্যয় হবে। আমেরিকার আছে মিসিসিপি, ইংল্যান্ডের আছে থেমস।

কোনদিন সেগুলো দেখা হয়নি। তবে টিভিতে যখন দেখি সেই নদীগুলোর পাড় কি চমৎকার ভাবে বাঁধাই করা, নদীর টলটলে পানি ঘুরে ফিরছে, তখন আমার বুড়ি গঙ্গার কথা মনে পড়ে যায়। তখন প্রচন্ড কষ্ট হয়। আমরা কেন নিজেদের কর্মকান্ডের দিকে আজও তাকাই না। অন্যদেশ আমাদের সাথে কি করছে, তার ২০% সত্য হলে আমরা টেনে সেটাকে ৮০% করতে ব্যস্ত।

অথচ নিজেদের হঠকারীতা, নদীগুলোর সাথে চরম খারাপ আচরণ আড়ালেই থেকে যায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।