CONNECTION FAILED
- সলিম , ও সলিম , উঠ বাজান কামে যাবি না ?
মায়ের ডাক শুনে ঘুম থেকে উঠে সলিম , মাজন দিয়ে দাঁত মাজে , টিনের ভেতর থেকে দুটুকরা টোস্ট বিস্কুট আর পানি খেয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে আসে । সূর্যের আলো পুরোপুরি ফোটে নি এখনও কিন্তু সলিমের সারাদিনের ব্যস্ততা ফুটে উঠছে তার দ্রুত সাইকেল চালানোতে । চলে আসে বাসস্ট্যান্ডে ।
- কিরে , আইজ এত দেরি করলি ক্যা ? কিছুটা ঝাঁজ নিয়ে বলে সোলেমান ।
- চাচা , রাতে পড়তে গিয়ে ঘুমাতে দেরি হইছিলো তাই .... কাঁচুমাচু করে উত্তর দেয় সলিম ।
- অ , ধর ধর , তাড়াতাড়ি পেপার গুলো বুঝে নে , মেলা দেরি হইছে ।
সোলেমান এই এলাকার পত্রিকার এজেন্ট , বদরাগী হিসেবে পরিচিত হলেও সলিমের সাথে খুব বেশি রাগ করেন না । ছেলেটাকে স্নেহের চোখেই দেখেন ।
সলিম পেপার গুলো বুঝে নিয়ে বেরিয়ে পরে অলিগলি ঘুরে বাসাবাড়িতে পত্রিকা পৌঁছে দেয়ার কাজ । খুব দ্রুত কাজ শেষ করতে হয় তাকে ।
তারপর বাড়ি এসে মায়ের হাতে বানানো সামান্য কিছু খাবার মুখে দিয়েই ছুটে যায় স্কুলের উদ্দেশ্যে । স্কুলে সলিমকে ভালো ছাত্র হিসেবেই সবাই জানে । স্যারেরাও তাকে ভালো জানে । সেও পড়াশোনায় খুব মনোযোগী । বিকেল পর্যন্ত স্কুলের পাঠ চুকিয়ে বাসায় আসে ।
পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে একটা গোসল সেরে ফেলে । তারপর ভাত খায় , কোনদিন হয়তো ভাত থাকে না ! এরপর রিক্সাভ্যানের গ্যারেজে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভ্যানমিস্ত্রী বাবাকে সাহায্য করে । বাবা অসুস্থ একা একা কাজ করতে পারেন না । তাই সলিমকেও হাত লাগাতে হয় । দুজনের সামান্য আয়ে অভাবী সংসার চলে না , তবু চালাতে হয় ।
মা ঝিয়ের কাজ করতে চেয়েও পারেন না কারণ বাবা পছন্দ করেন না ।
রাত হলে পড়তে বসে সলিম , কোনদিন হারিকেন আবার কোনদিন মোমের আলোয় নিবিষ্ট মনে পড়ে যায় সলিম । ছোট ভাইকেও পড়াশোনা করায় সে । ভাইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে । ছোট ভাই বেশি রাত পড়তে পারে না , ঘুমিয়ে পড়ে তাড়াতাড়ি , কিন্তু সলিম পড়ে যায় একমনে,সামনে বার্ষিক পরীক্ষা ।
এইবার নিয়ত করেছে যেভাবেই হোক প্রথম স্থান অধিকার করতেই হবে । নইলে নবম শ্রেণীতে উঠে ভালো ফল করতে হলে প্রাইভেট পড়তে হবে । আর প্রাইভেট পড়া আবার স্কুলের বেতন এত টাকা কোথায় পাবে সে ? প্রথম স্থান লাভ করলে স্কুলে তাকে বিনা বেতনে পড়তে দেয়া হবে বলে হেডমাস্টার আশ্বাস দিয়েছেন , আবার প্রাইভেট পড়ার ব্যবস্থাও করে দেবেন বলেছেন ।
ওদিকে ছোট ভাইটিও পড়াশোনা করছে , ওকেও শিক্ষিত করে তুলতে হবে । এর জন্য কয়েকদিন ধরে আরো একটি কাজ খোঁজার চেষ্টা করছে সলিম , পেয়ে যাবে আশা করছে ।
রাত গভীর হতে থাকে , সলিমের পড়ার গুনগুন শোনা যায় , এত অভাবের ভেতরেও চোখে স্বপ্ন দেখে ইঞ্জিনিয়ার হবে , ছোট ভাইকে ডাক্তার বানাবে । অভাবের সংসারে সুখ আসবে । ভোর হয়ে আসে , আর সলিমের স্বপ্ন পূরণের সংগ্রামী জীবনের আর একটি দিন শুরু হয় ।
পথ অনেক বাকি। এখনও বহুদুর যেতে হবে তাকে ।
জীবন যুদ্ধে অপরাজেয় হতে হবে তাকে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।