আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাউ আই লস্ট মাই ভার্জিনিটি

ক্লিন'স অল্টারনেটিভ ওয়ার্ল্ড

রাস্তায় প্রচন্ড রোদ ছিল একটু আগেও। আমি ফুলহাতা শার্টে ঘেমে একাকার। ঘামের সাথে কামের একটা সম্পর্ক আছে। একজন ঘর্মাক্ত মানুষ সহজেই কামার্ত হয়। এখন রোদ একটু কম।

বাতাস শুরু হয়েছে। আমি ঘুরছি একটু প্রটেকশন জোগাড় করার জন্য। প্রটেকশন কথাটি মনে হলে আমার ‘ট্রোজান ওয়্যার’ ছবিটার কথা মনে হয়। প্রটেকশন মানে এইচআইভির হাত থেকে বেঁচে থাকার উপায়। আমার কাছে একটি আছে।

কিন্তু আরো একটি লাগবে। আমি অনেক্ষণ ধরে ঘোরাঘুরি করেও এমন দোকান খুঁজে পাচ্ছিনা, যেখানে আমি একটি কে দুটি করে নিতে পারি। দুপুর থেকে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত আমি। এখন এই কাজের সময়ে এসে সেই ক্লান্তি অনেকখানি নিস্তেজ করে দিচ্ছে আমাকে। এগারোটার দিকে গিয়েছিলাম নিউমার্কেট।

আমার নতুন বইটি কোন বইয়ের দোকানের রাখা যায় কি-না তাদেখাই ছিল উদ্দেশ্য। প্রথম চারটি দোকান-ই আমাকে তাচ্ছিল্য করে অগ্রাহ্য করল। শুধু ফেয়ার ডিল নামে একটি বইয়ের দোকান বলল, ঠিক আছে ভাই বই দেন। তাদের নাকি মোহাম্মদপুর আরেকটি বড় বইয়ের দোকান আছে। সেখানেও সে বই রাখবে।

খারাপ না রেসপন্স। আপাতত কোনরকম একটু জায়গা করে নিতে পারলেই হল। পরে একটা পাকাপাকিব্যবস্থা হয়ে যাবে। আমার নিজের লেখক সত্তার ওপর আস্থা আছে। নিউমার্কেট থেকে আসলাম আমার বধ্যভূমি- গুলিস্তান।

ওসমানী উদ্যান ভেদ করে এসেছি। অনেক গৃহহীন মানুষ ওসমানী উদ্যানের নগ্ন বুকে শুয়ে আছে। কয়েক বছর আগেও এখানে অনেক গাছ ছিল। আজ সে জায়গা শূন্য। গাছের গোড়াও নেই।

তুলে নিয়ে গেছে লোকজন। এখন বোধ হয় পরিকল্পিত বাগানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনেকগুলো ছোট ছোট গাছ লাগানো হয়েছে। এরা যে কবে বড় হবে!!!! একটা গাছের ওপর তার চারপাশের বেড়াটি ঢলে পড়েছে। গাছটা বেড়ার ভারে মাটিতে লুটিয়ে আছে।

আমি দূর থেকে দেখে গাছটির কাছে গেলাম। বেড়াটিকে তুলে গাছটিকে সোজা করে দিলাম। পৃথিবীতে সোজা হয়ে না বাঁচতে পারলে বেঁচে থাকা মূল্যহীণ। আমি অনেকখানি ঘুরে গুলিস্তানের বিখ্যাত কামানটির কাছ দিয়ে পার্ক থেকে বের হওয়ার রাস্তা দিয়ে বের হলাম। এই কামান দেখলে আমার গা গুলায়।

একটি বিশ্রী চিত্র চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এই ছবির উৎস কবি আল মাহমুদের বিখ্যাত কবিতা “মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো। " এই কবিতায় কবি গুলিস্তানের এই কামানটিকে পুরুত্বষের চিহ্ন হিসেবে বিবৃত করেছেন। আর এই কামানের গোলাকে তুলনা করেছেন...থাক্ আর বলা দরকার নেই। আমার খুব অস্বস্তি লাগে সে কথা চিন্তা করতে।

আমি পার্ক থেকে বেরিয়ে গেলাম আমার জন্য নির্ধারিত জায়াগায়। অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে আমাকে সময় দেয়ার সময় হলো। আমার সব কিছু দেখে বলল, একটা প্রটেকশনে হবে না। আরো একটা লাগবে। তাই আমি রাস্তায় বের হয়ে এসেছি আরেকটি প্রটেকশনের খোঁজে।

সেটা খুঁজতেই গলদঘর্ম আমি। অনেক ঘোরাঘুরির পর একটার জায়াগয় দুটো প্রটেকশন জোগার হল। আমি এবার দুটো নিয়ে গেলাম। ভিতরে ভিতরে অনেকখানি কুকড়ে যাচ্ছি আমি। কেবলই মনে হচ্ছে, আক্ষেপ হচ্ছে- আজ আমি ভার্জিনিটি লুজ করতে যাচ্ছি।

একবার লাগাম ছাড়া হয়ে গেলে আবার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারব কি? কিন্তু আজ আর নিস্তার নেই বলেই মনে হচ্ছে। ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেলাম। অনেকক্ষণ লাগল আমার কাজটি হতে। আমার বিরক্তি লাগছিল। অথচ কাজটা বিরক্তিকর হওয়ার কথা নয়।

আমার মনে তখন অন্তর্জালা বেড়ে ওঠছে। নিজেকে হারিয়ে ফেলার জ্বালা। এতটা বছর ধরে নিজের মধ্যে যে উন্নত বোধ আর আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে পেরেছি আজ বুঝি তার অহংকার চূর্ণ হয়ে গেল। কাজ শেষ। আমাকে বলা হল- কাজ তো হলো এবার কত দিবা? আমি এই মুহূর্তের জন্য এতক্ষণে নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়েছি।

আস্তে করে পকেট থেকে ১০০ টাকার একটা নোট বের করে দিলাম। কিন্তু আমাকে বলা হল- এতজন মিলে তোমার কাজ করতে হেল্প করেছে, ১০০ তে হবে না। আমি সলজ্জ মুখে আরো ৫০ টাকা দিয়ে বললাম- আমার তো পূর্বের কোন অভিজ্ঞতা নেই, তাই বুঝতে পারছি না- কিসের রেট কত। যাই হোক, ১৫০ টাকায় রফা হল। এবার আমি বের হব ।

নিজের ভেতর একটা বিরাট শূণ্যতা তৈরী হয়েছে। এতদিনকার লালিত শক্তি হারিয়ে ফেলেছি আমি। আমার আত্মার সম্ভ্রম হারিয়ে রিক্ত মনে বের হয়ে এলাম। পাসপোর্ট অফিস থেকে সসম্ভ্রমে বের হয়ে আসতে পেরেছিলাম। টেলিফোন অফিস থেকে পারলাম না।

জীবনের প্রথম ঘুষ হিসেবে ১৫০ টাকা দিতেই হল। এখন আর ঘুষের ক্ষেত্রে ভার্জিন নই আমি। আই হ্যাভ লস্ট মাই ভার্জিনিটি। ক্লিন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।