বিশ্বটাকে সুন্দর করে সাজানোর জন্যই এত কথা বলি.. । বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ছুটলাম সীমান্তের পাহাড় নদীর টানে নেত্রকোণা ভ্রমনে।
ছবিটি সেই বিখ্যাত বাস থেকেই তোলা।
নেত্রকোণার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বিরিশিরি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি। সেই সৌন্দর্য্যের খুজে বন্ধুরা বৃষ্টি মাথায় করে বাসে উঠলাম ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোণা।
খানিকটা পথ। ঘন্টা খানিকের মাঝেই পৌছে গেলাম।
যারা ভ্রমণ পিয়াসি বা ওই দিকে যাতায়াত আছে তাদের নেত্রকোণার রাস্তাঘাট সর্ম্পকে জানা থাকার কথা। সাথে সেদিকের 'মুড়ির টিন' বাসের কথাও! এখানে নাকি ড্রাইভাররা চোখ বন্ধ করে গাড়ি টানে রাস্তা খারাপের কারনে। এত সরু রোড যে এক সাথে দুটি পার হতে পারে না গাড়ি।
আগে থেকে এই সব জানা থাকাই কলমাকান্দা বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির এসিসট্যান্টকে জিজ্ঞাস করলাম-
ভাই গাড়ির সব ঠিক আছে তো? এই দিকে নাকি চোখ বন্ধ করে গাড়ি চালায় !
আমাকে আশ্বস্ত করে বললো, 'এই গাড়ি দেখতে শুধু পুরান, ইন্জিন এক্কেরে নতুন। উঠেন। '
যাক, আশার কথা শুনে আশ্বস্ত হলাম আমরা ৬ জন। তখন সন্ধা হয়ে আসছে। মুড়ির টিনের ভিতরে যাত্রীর বাজার! এত টুকু বাস অথচ যাত্রীর মাথা দেখা যায় শুধু !
রাস্তার দুইদিকে যতটুকু চোখ যায় শুধু হাওর।
নেত্রকোণার এই দিকটাতে নাকি জিন, ভুতের প্রকট বেশি ছিল একসময়। চমৎকার প্রকৃতিক দৃশ্য সাজিয়ে রেখেছে প্রকৃতি, জিন ভুত থাকতেই পারে ! দুই দিকে পানির মাঝ দিয়ে সরু ভাঙা রাস্তায় গাড়ি চলছে।
হঠাৎ করে খেয়াল হল, ব্যপার কি !
চারদিকে অন্ধকার. রাস্তায়ও কোন আলো নেই, কিন্তু বাসের ভিতর ও সামনে হেডলাইটের আলো নেই কেন ?
ড্রাইভার যা বললো আঙ্কেল গুড়ুম !
নিলিপ্ত জবাব, বড় ভাই, হেড লাইটটা কাজ করতাছে না। গতকাইলো ঠিক ছিল। সমস্যা নাই।
আমরার অভ্যাস আছে চইল্যা যামু কোন বা।
বলে কি এই লোক, এই্ অন্ধকারের মাঝে সমস্যা নাই ! তার উপর রাস্তার তিন অবস্থা। একেকবার গর্তে পরে আর বাস ভু ভু করে উঠে কেঁপে কেঁপে চলে যেতে চায় অন্ধকার হাওরের দিকে।
যাত্রীরা ড্রাইভারকে বকা-ঝকা দিতে থাকলো। তাতে তাদের কানে গেল বলে মনে হয় না।
অন্ধকারে একেকবার বাস একেক দিকে বাঁক নেয় আর আমাদের আত্বা খাচাঁ ছাড়া হওয়ার অবস্থা। আরেকটু অন্ধকার হয়ে আসলে দেখি ড্রাইভার নিজের দুর্বল ! গাড়ি একটু এগোয় তো আবার পিছায়, একেকবার গর্ত থেকে উঠতে গিয়ে পানির দিকে ছুট !
এই ড্রাইভারকে ফরমুলা ১ এ নামালে নিশ্চিন্তে জিতবে তা ঘোষণা দিয়ে দিলো আমাদের এক বন্ধু !
বন্ধু বাবু এসিসট্যান্টের দিকে বাড়িয়ে দিল তার মোবাইল টর্চটি।
অতি অল্প আলো সামনে ধরে রেখে এসিসট্যান্টের নির্দেশমত বাস চলতে লাগলো। বাসের মহিলা যাত্রীরা আল্লাহ আল্লাগ বলে চিৎকার করতে লাগলো দেখে নিজেদের বুকের ভিতর হু হু করে উঠলো!
এসিসটেন্ট মোবাইলের টর্চ নিয়ে রাস্তায় নেমে ইশারা দেয় আর তার ইশারামত ড়্রাইভার গাড়ি চালাতে লাগলো, গাড়ির গতি দাড়াল মানুষের হাঁটার সমান!
হুমায়ুন আহামেদ সাহেব নেত্রকোণার যে রুপ বর্ণনা করেছেন তার থেকেও অবস্থা খারাপ বলেই মনে হচ্ছে। হাওর, বিল এর মাঝ খানে হঠাৎ হঠাৎ খুপি বাতির আলো চোখে পরে।
অনেক দুরে দুরে একেকটা গ্রাম বা বাড়ি। হাওরে গাড়ি পরলে উদ্ধার করতে করতেই মরে ভূত হয়ে যাবো! আত্বারাম খাঁচা ছাড়া হওয়ার জোগাড় সবার। ভয়ে বেশির ভাগ যাত্রী নেমে গেল, রয়ে গেলাম আমরা ১০ জন অকুতোভয় বীর!
গন্তব্যের কিছুটা কাছেই এক হোন্ডারওয়ালা পাওয়া গেল, তাকে অনুরোধ করা হল তার হোন্ডারটা আস্তে আস্তে নিয়ে আমাদের গাড়িকে আলো ও পথ দেখিয়ে নিতে। হোন্ডারওয়ালার সহৃদতার কারণে গন্তব্যে পৌছে হাফছেড়ে বাচঁলাম।
আর যামু না ভাই এই নরকে রাতের বেলা।
মাফ চাই দোয়াও চাই।
তবে তারপর সত্যিই আমরা অভিভূত নেত্রকোণার রুপ, সুর্ন্দয্য দেখে। আবার যাবো, তবে মুড়ির টিন থেকে অবশ্যই সাবধান। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।