গোধুলি ভালবাসায় ভিজে একসারা একাকী একজন।
প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে। শরীর যেন আর চলছে না। খুব কষ্ট করে বসে আছি স্টেশনে। চারিদিকের হৈ হট্টগোল কিছুই স্পর্শ করছে না আমাকে।
কখন যে আসবে ট্রেন? আর ভাল লাগছে না। ইচ্ছে করছে বেঞ্চের উপর শুয়ে পরতে। কে যেন এসে বসল পাশেই। অনুভব করলাম একদম গা ঘেঁসে বসেছে। বিরক্ত চোখে পাশের লোকটার দিকে তাকাই।
দেখি ছেঁড়া ময়লা চাদর জড়িয়ে বসে আছে মধ্য বয়স্ক এক লোক। গা থেকে বোঁটকা একটা গন্ধ বেরুচ্ছে। গা গুলিয়ে বমি আসছে। কিছু না বলে দ্রুত সরে যাই ওখান থেকে।
আজ কদিন ধরে এত খাঁটুনি গেছে! কারখানার মালিক তাও অখুশী।
শরীরের শেষ বিন্দু শুষে নিতে পারেনি বলেই হয়ত পুরো বেতনটা দিল না। সব কর্মচারীর নয় কারো কারো। আমি সেই হতভাগাদের মাঝেই একজন। আজ দেড়টা বছর ধরে এই অন্যায় সহ্য করছি। কিন্তু আর না।
একটা নতুন কাজের সন্ধানে যাচ্ছি। যদি পেয়ে যাই এই নরকে আর ফিরছি না। দেড় বছরের হাড়ভাঙ্গা খাঁটুনি জানান দিচ্ছে শরীর। কোনরকমে ঝুলে আছে যেন প্রাণটা আমার সাথে।
ট্রেন এসেছে।
আচ্ছন্নের মত বসে আছি ২য় শ্রেণীর এক কামরায়। হঠাৎ সেই বোঁটকা গন্ধটা আবার পেলাম। মাথা তুলতেই দেখি সেই লোকটা বসে আছে একদম আমার সামনে। আমাকেই দেখছে তীব্র চোখে। কেমন জানি শীত শীত করছে।
এই লোকটা পিছ ছাড়ছে না কেন? টেনশন লাগছে। চোর ডাকাত না তো? তাই যদি হয়ে থাকে তো ভয় পাবার তেমন কিছু নেই। আমার কাছে যে যৎসামান্য টাকা আছে এতে কোনরকমে টেনে টুনে সাত দিন চলবে । চোরের তাতে পোষাবে না। হাসি পেল নিজের দৈনতার উপকারীতা দেখে।
কিন্তু এই অসুস্থ শরীর নোংরা ঐ লোকটার গায়ের বোঁটকা গন্ধ যেন আর নিতে পারছে না। হড়হড় করে বমি করে ফেললাম। লোকটা আগ্রহ নিয়ে আমাকে দেখছে। একটু যেন এগিয়ে আসছে কাছে। কেমন যেন আতংকগ্রস্থ হয়ে গেলাম।
দৌঁড়ে সরে এলাম ওখান থেকে। পেছন থেকে ভেসে এলো ভয়ংকর অট্টহাসির শব্দ। গায়ে কাঁটা দিল আমার।
ট্রেনের গেটের কাছে যেয়ে দাঁড়াই। খোলা হাওয়ায় একটু ভাল লাগছে শরীরটা।
মাথা ব্যাথাটাও কমেছে। ভাবছি এখানে দাঁড়িয়েই চলে যাই। কিন্তু ব্যাগ?! তাড়াতাড়ি ফিরে আসি বগিতে। আশেপাশের সীটে বসা মানুষ জন খুব বিরক্ত চোখে দেখছে আমাকে।
লোকটা বসে বসে ঝিমোচ্ছে।
জানি না কেন এত ভয় পেয়েছি! এই লোকের সাথে সারা রাত একই কম্পার্টমেন্টে যাওয়া সম্ভব না। কি যে করি? ব্যাগটা নিয়ে ফিরে আসি আগের জায়গায়। কে যেন দাঁড়িয়ে দরজায়। একটি মেয়ে। সংকুচিত হলাম।
কি করি এখন? ফিরে যেতে মন চাইছে না আবার এখানে দাঁড়িয়ে থাকব তাও বোধ হয় সম্ভব হবে না। মেয়েটা আমাকে দেখে একটু এগিয়ে এলো ,এখন তার মুখ দেখতে পাচ্ছি। কি মায়া! এমন মায়াকাড়া মুখ অনেক দিন দেখিনি। আমার পোড়া চোখে যেন শান্তির পরশ বুলিয়ে গেল। "আচ্ছা এটা কত নম্বর কম্পার্টমেন্ট? আমি ভুল করে এটাতে উঠে পড়েছি।
কি ঝামেলা দেখুন এখন সামনের স্টেশন না আসা পর্যন্ত এখানেই থাকতে হবে। আচ্ছা এর পরের স্টপেজে যেতে কতক্ষণ লাগবে?" এক সাথে এতগুলো কথা বলে তারপর মেয়েটা থামল। আমি বললাম ' এই তো ঘন্টাখানেক। আপনি চাইলে আমার সীটে...বলতে যেয়েও কথাটা গিলে ফেললাম ওই বিশ্রী লোকটা আর বমির কথা ভেবে। আপনি কি দাঁড়িয়েই যাবেন? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলি, বলি 'হুমম'।
'আমি চন্দ্র' আর আপনি? আমার বলতে ইচ্ছে করছিল যে আমি মেঘ। যদিও আমার নামটাও কম কাব্যিক না। হেসে বলি আমি অরণ্য আপনার নামটা খুব সুন্দর চন্দ্র। মেয়েটা হাসল। আমার বুকের ভেতর যেন ঝড় বয়ে গেল সেই হাসিতে।
চন্দ্র কি এক অচেনা চোখে দেখছে আমায়। যেন সে পড়তে পারছে আমার মন। অসস্তি লাগছে।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।