সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে,
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বাঙালির স্বভাবটাই এমন। কোনও কিছু একটা পেলেই হল, সেটা নিয়ে এমন মাতা-মাতবে যে, শেষে মাতলামি, পাগলামি, ছাগলামির পর্যায়ে যাবে। আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই শুরু হচ্ছেÑ বিশ্বকাপ ফুটবল। এবারের আসর বসছেÑ সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায়। তবে বাংলার আকাশে-বাতাসে তাকালে মনে তো হয়, নতুন ৩২টি দেশের দূতাবাস খুলেছে এদেশে।
না হয় দুটি দেশ দখল করে নিয়েছে, এ দেশ। আমি ভাই ফুটবলের শত্র“ নই। তবুও বুকে আমার ব্যথা বাজে। চমকে উঠছি এই কয়দিনে।
ফার্মগেট হয়ে ফিরছি।
এক পতাকা বিক্রেতার কাছে লাল সবুজ পতাকাটা খুঁজে পেলাম না। অন্য আর একজনের কাছে পেলাম। তাও সবচেয়ে ক্ষুদ্র আকৃতির পতাকাটা। যেটার রঙ লাল ও সবুজ।
লেগুনায় করে ফিরছি।
পাশ দিয়ে এক সাইকেল আরোহীকে ক্রস করল গাড়িটা। চোখ গেল আবার, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র পতাকাটা সরু ছোট এক কাঠিতে লাগানো। পতাকাটা হল, বাংলাদেশের। ব্রাজিল নামক দেশটার বিশাল পতাকা সাইকেলে। আরোহীকে ব্রাজিলের নাগরিকই মনে হল।
হলুদ-সবুজ রঙে সেজেছে আরোহী ও তার সাইকেলখানা।
বাসার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে যতগুলো বাড়ির দিকে চোখ গেল, দেখি বিশাল আকৃতির ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা। পতপত করে উড়ছে। হঠাৎ একটি পতাকা আটকে গেল মিনিট খানেকও হয়নি। কেউ একজন এসে, খুব যতেœ বন্ধন মুক্ত করে উড়তে সাহায্য করল।
আবার একটা ব্রাজিলের পতাকার সঙ্গে সোনার বাংলার পতাকাটাও উড়ছে দেখলাম। কিন্তু চোখে ভালোভাবে পড়ছে না। পড়বে কী করে এত ছোট যে, কী বলব! হে বাংলার দরদি। তোমার হƒদয়ে দেশের পতাকার জন্য টান দেখে তোমাকে ধন্যবাদ। তা বাবা, কী দরকার ছিল এত কষ্ট করার? ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে থাকলেই তো পারত।
এত ছোট দেশটার, ছোট পতাকা নিয়ে টানাটানি না হয় এই সময় নাইবা করলে। অত সব বিশাল পতাকার পাশে কী এত ছোট পতাকাটা মানায়। নাহ্ তোমাকে আমরা ভুল বুঝবো না। বুঝে নেব, তুমি বাংলাদেশকে ভালবাসো। পতাকাকে ভালবাসো।
তাই এটা তোমাকে না বোঝালেও চলবে।
ফুটবল বিশ্বকাপের সময়টা না হয় বাদই দিলাম। দেশে তো আর পতাকা উত্তোলনের উপলক্ষের অভাব নেই। হ্যাঁ সে সময় বাংলার পতাকাটা দেখা যায়। দেখা যায় দেশকে ভালবাসার, পতাকাকে ভালবাসার মানুষদের।
কিন্তু সে পতাকার সাইজের কোনও ঠিক নেই। কোনটার রঙ হচ্ছে হলুদ, সবুজ মিশে যাওয়ার পর যে রঙটা হয় সেটা। কোনও কোনও পতাকাটা থাকে কুঁচকানো, ছেঁড়া-ফাটা। পাবলিকের কথা না হয় বাদ দিলাম। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শত বছরের পুরনো পতাকা উড়ানো হয়।
সময় নেই, চোখ নেই কারও। কিন্তু দেখ, এই ফুটবল বিশ্বকাপের সময় বাংলার আকাশের দিকে চেয়ে।
আচ্ছা, বাংলাদেশ যদি ফুটবলের বিশ্বকাপে খেলত। তখনও কি এমন অবস্থা হতো? সন্দেহ জাগে মনে। হায়, যদি একবার, শুধু একবার বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলতে পারত।
যদি এই জীবন থাকতে দেখতে পারতাম। ভেবে পাই না, ক্রিকেট বিশ্বকাপে তো বাংলাদেশ খেলে। তখন তো এমন হয় না। কেউ বাংলার পতাকাটা উড়ায় না এমন করে।
প্রশ্ন রাখি, এই যে সবাই ভিন দেশী পতাকা বুকে জড়ায়, শরীরে জড়ায়, বাড়ির ছাদে উড়ায়, মারামারি-হাতাহাতি পর্যন্ত হয়, তার খোঁজ কি সে সব দেশগুলো জানে? তারা কী সবাই বাংলাদেশের নাম জানে, আমাদের জন্য এমন করে?
শেষ একটা দৃশ্যের কথা বলি, যেতে পথে দেখলামÑ এক তরুণ আর্জেন্টিনার বিশাল এক পতাকা গায়ে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে!
তবে আশার কথা এই, ‘সবেমাত্র স্কুলে ভর্তি হওয়া রিয়ানা নামের মেয়েটা, সে তার বাবাকে বলছেÑ বাবা আমি আর্জেন্টিনাও না, ব্রাজিলও না।
আমি বাংলাদেশী। বাংলাদেশের সাপোর্ট করি।
মাসুম বিল্লাহ (যুগান্তর)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।