গুণীজন
ছোট বেলা থেকেই খুব গাছপালা ভালবাসতেন৷ কিন্তু তারপরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় উদ্ভিদবিদ্যাকে পাঠ্যবিষয় হিসেবে বেছে নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন ড. ফ্লোরা৷ মাত্র দেড় বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত এই কৃতি ছাত্রী বুঝতে পারছিলেন না, ফিল্ডওয়ার্ক নির্ভর এই বিষয়ে পড়াশোনাটা তিনি শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারবেন কিনা৷ উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ে পড়াশোনা করা মানেই হলো অনেক ঝক্কি-ঝামেলা; নানা জায়গা থেকে নানা ধরনের গাছপালা সংগ্রহ করা অথবা গাছ পালা দেখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো৷ অভয় দিলেন তাঁর মা 'তোর বোটানিতে এত আগ্রহ তুই বোটানিতেই ভর্তি হ্; গাছপালা, লতাপাতা যা যা সংগ্রহ করার আমিই করে দেব'৷ ফ্লোরা সাহস পেলেন, ভর্তি হয়ে গেলেন বোটানিতে৷ মা তাঁর জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে নিয়ে আসেন মাশরুম, বিভিন্ন রোগাক্রান্ত গাছ৷ একবার করাচি থেকে নিয়ে এলেন সামুদ্রিক শ্যাওলা৷ মায়ের কালেকশন দিয়েই সর্বোচ্চ মার্কস পেয়ে গেলেন ড. ফ্লোরা জাইবুন মাজিদ৷
http://www.gunijan.org.bd
http://www.biplobiderkotha.com
মা নাজমান্নেছা মাজিদ যদি তাঁর পোলিও আক্রান্ত মেয়ের জন্য এই ত্যাগটুকু স্বীকার না করতেন, তাহলে ফ্লোরা হয়তোবা আজকের কৃতী বিজ্ঞানী ড.এফ জেড মাজিদ নাও হতে পারতেন৷ বাংলাদেশে হয়তো তৈরি হতো না প্রকৃতির এক বিস্ময়কর খাদ্য 'স্পিরুলিনা'। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় স্পিরুলিনার সফল চাষে নেতৃত্ব দিয়ে ড. ফ্লোরা হয়ে উঠেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক বিজ্ঞানী৷ গবেষণা কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ চার চারবার স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছেন৷ দেশের অন্যতম প্রধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে'র চেয়ারম্যানের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন৷ এই পদে সব সময় বাইরে থেকে চুক্তিভিত্তিক চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হতো৷ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে ড. ফ্লোরা প্রথম বারের মতো ঐ প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের মধ্য থেকে পদোন্নতি পেয়েছিলেন৷ মহিলাদের মধ্যে তিনিই প্রথম এ প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদে আসীন হয়েছেন৷ শৈশবে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর ডান পা দুর্বল হয়ে পড়ে, তিনবার দুর্ঘটনায় পতিত হন ৷ সর্বশেষ ১৯৮৯ সালের দুর্ঘটনার পর দুটি ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে৷ এই অবস্থাতেও তিনি দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে বিদেশে গেছেন৷ শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও বিজ্ঞানী হিসেবে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন বলেই ১৯৯৫ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত 'বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ সফলতার সাথে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি হিসেবে চাকরির মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে তাঁকে চেয়ারম্যান পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়৷
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।