আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবি মোস্তাক আহমাদ দীনের কবিতা

এ-মন একবারই ছুঁয়ে যেতে পারে কেউ...

‘দীন কাব্যভাষা নিয়ে অন্তহীন নিরীক্ষায় বিশ্বাসী অর্থাৎ কোনো স্থিরবিন্দুতে প্রত্যয় নেই তাঁর। কখনো কাব্যিকতার প্রচলিত ধরনকে আপাত-ভাবে মান্যতা দিয়েছেন কখনো বা তাকে বিনির্মাণ করছেন। এই বিনির্মাণও কোনো নির্দিষ্ট আকল্পের আভাস দেয় না। এছাড়া রয়েছে গদ্যভাষার স্বাধীন প্রয়োগ, ছন্দ-নির্মিতির অরৈখিকতা। এভাবে দীন সময় ও পরিসরের উচ্চাবচতাকে কবিতার নিজস্ব বাচনে ব্যক্ত করতে চেয়েছেন।

কিছু কিছু বিশেষ পঙক্তির প্রতি পাঠকের পক্ষপাতিত্ব অনিবার্যভাবে তৈরি হয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু এদেরও বুঝতে হয় অনস্বীকার্য সামগ্রিকতার নিরিখে। ’ ‘...মোস্তাকের প্রবণতা নয় শব্দক্রীড়া। তবু কখনো কখনো আপাতসাধারণ কোনো শব্দকেও তিনি বিশেষ অনুরণনময় অনুভব পরম্পরার উৎসে রূপান্তরিত করেছেন। এই প্রক্রিয়ায় সমস্ত পূর্বধার্য আকরণ ধ্বস্ত করে দিতে চান তিনি। ফলে অভ্যস্ত শব্দসম্বন্ধ চৌচির হয়ে গিয়ে কবির বিপুল চারণভূমি জেগে ওঠে।

’ ...‘নৈশব্দ্য মন্থন করতে-করতে যে-কবি নিয়ত শব্দকাঙাল হয়ে প্রতীক্ষারত, তাঁর চেতনায়-অধিচেতনায় আলোছায়ার সঞ্চরণ এভাবেই কবিতার নিজস্ব বাচনে ব্যক্ত হয়। লক্ষ করি, যৌথনিশ্চেতনার কত গহনে প্রচ্ছন্ন প্রতিষ্ঠিত থাকে আদিকল্প কিংবা কবিপ্রসিদ্ধি। সেইসব কত সাবলীলভাবে বিনির্মিত হয়ে যায়। আমাদের স্মৃতিসত্তার সামাজিক স্বভাব স্বীকৃত হয় এভাবে। ’ তপোধীর ভট্টাচার্য, কবিতার বহুস্বর, (সংকেতের লিপিমালা যখন অফুরান ঝরনা), প্রতিভাস, কলকাতা, জানুয়ারি, ২০০৯, পৃ. ২০০, ২০৩, ২০৬।

_____________________________________________ হ্যাঁ, মোস্তাক আহমাদ দীন আমার প্রথম পছন্দের কবি, প্রিয়কবিও। তাঁর প্রতিটি কবিতাই আমার ভালোলাগে, নতুন করে ঘোর-ভাবনায়, ভাবাতে প্ররোচিত করে, চমৎকার তাঁর ভাষাশৈলী, শব্দবুনন ও নির্মাণ। প্রিয়কবি মোস্তাক আহমাদ দীনের অপকাশিত কাব্যগ্রন্থ থেকে আমার ভালো লাগা কিছু কবিতা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে ভালো লাগছে। (@ লেখক সংরক্ষিত) কবি মোস্তাক আহমাদ দীনের কবিতা রাধা ১. কখনো রাধিকা নই, তবু কৃষ্ণ-আয়নার সামনে দাঁড়ালে খোলা রূপ ফেটে যায়, আর সেই ভাঙাচোরা পরিবেশে, অতি ব্যক্তিগত হাওয়া এসে পড়ে আপাতত ঠোঁটেই পড়ায়, জানি ধীরে ধীরে স্তনেও পড়াবে; এইবার, বেআক্কেল দাঁতে ছুঁতে পেয়ে মশক করি জিভে-আলজিভে, হৃদয়ের চারপাশ অন্ধকারে গাঢ় করে নিয়ে ২. প্রাণের অধিক তুমি ভালোবাসো নিদারুণ শ্যাম; বংশী বাজায় ঠিকই, চক্ষে যার ডাকাইতি লহু, হৃদয় ছুঁবার নামে যার সুর নখে ছিঁড়ে ঘাগড়া ও চোলি গাথার কাছিম যেমন শখবশে নৃত্য করে ধুলোর ডাঙায় সেইরূপ তির তির করে দেখি তীরবর্তী শরীর তোমার; ‘জলে নামিও না’, তোমাকেই লক্ষ্য করে কথা বলে অথির বাতাস; জারুলের ছন্দ নিয়ে কাগজের নৌকা ভাসে আর কৃষ্ণ কৃষ্ণ ডাকে ভারী হয় রাতের আকাশ ‘জলে নামিও না', বলছে বন্ধু, বলছে, ‘জলে চুপে ডুবে আছে নিথর কুমির’ একতারা একটাই তার, তা-ও ছিঁড়ে গেছে রাত পোহাবার আগে, এখন কী রূপে তার মন যে যোগাই ঘূণে যে ধরেছে দেহ, সেই কথা জেনেছিল আগে, সেই তত্ত্ব পড়শিরাও জেনে গেছে আজ, এবার কলঙ্কবার্তা দেখো ধীরে ধীরে নগরেও যাবে যেখানে রটনা-ভয়, পুর্বপুরুষেরা সেই দেশে কী কারণে পুঁতে যায় বীজ, তেমন ধুলার দেশে কেনই বা ঘুরতে আসে রসের নিমাই-আমি তা বুঝি না; কেবল জেনেছি. ভোর আসে না তো ছেঁড়াতার-দেহখানি বেয়ে, রাত্রি সুদূর হলে বে-তারেতে তনুমন কোনোদিনই যায় নাই বাঁধা বাঘ কারও ছাপ খুঁজতে গিয়েছি আমি নালিতা বাগানে, ছড়িয়ে পড়তে দেখেছি বহুরোম ছায়া, তারও নিচে, কত মৃত্যু ছাপা হতে দেখি আমি ছাইরঙা গাছের পাতায় মধ্যাহ্ন যাপন করতে এইখানে এসেছিল লালডোরা বাঘ, রক্ত-বিরচনের গুপ্ত ইচ্ছা রাতে সম্পাদিত হওয়ার খবর আমরা জেনেছি সেই কিশোরবেলায়, যখন নিবেদনে এসেছিল সহজ আর হলুদিয়া পাতা, রক্ত ও চন্দনে মিশে একাকার হয়েছিল প্রিয় থানমাটি জন্ম ঠোঁট দেখে মনে হয়, কথা বলছে এক মুক্ত বনহাঁস, চুল আর বাহু দেখে যে-কোনো দরবেশেরও মনে হবে-শহরের শেষপ্রান্তে উড়ে যেতে পুরোটা প্রস্তুত, যেখানে পাখিও নীরব আর ধোঁয়া-মেশা ওরসের ধ্বনিও যাবে না অথচ তোমার অনুগমনের আগেই দেখো ভেঙে গেছে শরীরের দশখানা ডাল, ধীরে ধীরে পাতা ও বাকল; তথাপি ইচ্ছে জাগে, প্রান্তে ও প্রান্তরে গিয়ে সবার অলক্ষে গিয়ে গ্রহণ করি পথে-পড়া সবুজ পালক তরী এমন সাহস তোমার, শেষপর্যন্ত তুমি ছেড়ে দিলে তরী আমার আঙুল দেখো ক্ষয়ে গেছে সেই তিরিশেরও আগে, ভাটির সন্তান আমি, যে-কোনো বাইচে গেলে কাড়াল ধরেছি আর জিত ও হারের মর্ম না-বুঝেই গলা ছেড়ে গেয়ে গেছি শা’নূরের সারি; নৌকা দূরের কথা, এখন জলেতেও দেখি দূর-অন্ত ভয়; উড়াল-জালের মোহ এসে গিয়েছিল জাল-ফেলা-বয়সেরও আগে, এখন উড়াল নয়, টানা-জালেতেও দেখে ফেলি নিষাধ কুম্ভির শেষপর্যন্ত তুমি ছেড়ে দিলে তরী, বৈঠা ছুঁবার আগেই আজ ঝরো-ঝরো কব্জি-কনুই নীরব লালজামা-পরা কৃষ্ণ নৌকার নিকটে গিয়েছি, সঙ্গে শত দাসী, গহনা আর জাহাজপীড়িত কেরোসিন গাছের গন্ধে বাহু নৃত্যময়, জানি না এই পরাকাহিনীতে কয় জোড়া কবুতর কাঁপে লোকপরিবাদে যারা ছায়াময়, তাদের নিকট থেকে আমি নানাবিধ ব্যথা নিয়ে সরে এসে বাজপাখির চঞ্চুলাগা টুপি পড়ে আছি তাঁদের ঘরের রঙ সাদা, লোককলাভেদে নজিরবিহীন, ধুলো ও রহস্যে একাকার, কণ্ঠ মুক্ত তবু তারা ভেতরে ভেতরে নীরব নিদান কিছু না পেলেও আমি ভুখা নই তোমার হাওরে, এখানে যে বাতাস তার সব আকুলতাসহ হয়েছে হাজির, তবু আমি পানার্থী নই এই মজলিসে, দেখেছি ভুখার রাজ্যে কী নির্বিরোধে লাল পায়জামা ওড়ে এ-খেলায় কোন শক্তি তার সহস্র হাত নিয়ে ভীষণ দাপায়, তা না জেনেও আমি তামাশায় লিপ্ত হই বেশ; জলে ও ডাঙায় কারা দাঁত দিয়ে হাসে; আমি মত্ত, জলপাখির অস্বচ্ছ মুদ্রায় সুতো ছিঁড়ছে, এমন নিদানেও কামরূপ হাওয়া উড়ে যায় বৃষ্টিস্মৃতি দূর-থেকে-আসা (ঝলোমলো বৃষ্টির রাতে) ধ্বস্ত পাহাড়ের মৃত্যুগানে কেঁপে ওঠে ক্ষেত; জানি না, চাষ ও বাসের মর্মে আদি গন্দমের স্মৃতিশ্রুতি গাঢ় হলো কি না; আখরোট ও তরমুজ. সে-তো দূরবর্তী বেশ, বেগুন ও টমেটোর তাৎপর্যে এই মাটি ক্রমে নিকট বেদনা গিয়ে ঘন, তার অস্তে-অস্তে গোধূলি-ঝড়ের বিগার দেখতে-দেখতে আমি ম্রিয়মান, লালে-লালে মৃতপায়। আদর, অনাদর নাচ দেখে অনেকেই বলছে করতাল, কেউ কেউ সর্বজয়া রণপাবিশেষ, কেউ কেউ একটুকরো ডানাভাঙা তৃণ, জিকিরে ডুবেও যার এতটুকু মুজেযা ফোটে না ভরসা একটাই-অনাদরে-জাগা এক উজ্জ্বলন্ত লাউডগার স্পর্শস্মৃতি নিয়ে হয়েছিল আগন-ফকির আমি তার গোপন লাভাস্রোত কখনো দেখিনি যদিও, তবু, কেন যে জানি না, পাতাল সাঁতরাতে এসে, দশাগ্রস্ত মনে তার পাত্র ছুঁতে যাই


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।