লড়াই করে জিততে চাই
(তিন)
লোকে লোকে লোকারণ্য মাঠ। হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশেই বসে গেছে মাঠে। বেলা একটু পশ্চিমে ঢলে পড়ায় মাঠের বেশিরভাগটা এখন ছায়ায় ঢেকে আছে। সূর্যকে আড়াল করে স্কুলটা দাঁড়িয়ে আছে পশ্চিম দিকে। কিছুক্ষণ পরে হয়তো পুরো মাঠই রোদ্দুরশূন্য হয়ে যাবে।
কিন্তু রোদ-গরম এত কিছু ভাবার সময় নেই মানুষের। সবাই খুবই এক্সাইটেড। কি হয়! কি হয়! চিন্তা। ফুটবল খেলার মাঠ। মাঠের মধ্যিখানে একটুও ঘাস নেই, শুধুই বালি।
কিন্তু তাতে কি! মানুষে ঠাসা। বালির উপর আসন গেড় বসে গেছে সব। শুধু তালগাছটার কোনায় কিছু ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে। যাতে হরষিত আর রমজান লাফিয়ে মানুষের ঘাড়ে না পড়ে। তালগাছের বেশ কাছাকাছি ভিড় সরিয়ে চারটি চেয়ার বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
এলাকার বিশিষ্ট চারজন মাতবর বসবে ওখানে। বড় বড় দুইটা আইকা ওয়ালা বাঁশ বেঁধে দেয়া হয়েছে তালগাছটার সাথে। যাতে হরষিত আর রমজান উঠতে পারে সহজেই। অতিরিক্ত মোটা হওয়ায় তালগাছে ওঠা খুবই কঠিন। তাছাড়া রমজান ও হরষিত গাছে ওঠার ক্ষেত্রে কেউই তেমন পারদর্শী নয়।
ইতিমধ্যে একটা মাইকও লাগানো হয়েছে। হর্ণৃটা রাখা হয়েছে স্কুলের ছাদে যাতে আওয়াজটা আরো দুরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বিপিন মাতবর আরো তিনগ্রামের তিনজন মাতবরকে সাথে নিয়ে সোজা গিয়ে বসলেন চেয়ারে। মাতবরদের চেয়ারে বসার সাথে সাথে মাঠের পরিবেশ অন্যরকম হয়ে গেলো। কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ একেবারে শান্ত পরিবেশে রূপ নিলো।
অনেকের বুক ধুক ধুক করে কাঁপছে। ধর্মের ব্যাপার! জেতাটা জরুরী।
গ্রামেরেই এক তরুণ মাইক্রোফোনটা নিয়ে বিপিন মাতবরের হাতে তুলে দিলেন। মাইক্রোফোন পেয়েই বিপিন মাতবর কথা শুরু করলেন। ...
না! আর দেরি করা ঠিক হবে না! কি বলেন আপনারা?? উপস্থিত জনতার মতামত জানতে চাইলেন বিপিন মাতবর।
বিপিনের এটা নিজস্ব কৌশল। বরাবরই বিচার করার সময় তিনি উপস্থিত মানুষের মতামত, ইচ্ছা-অনিচ্ছার গুরুত্ব দেন। তাই তার বিচার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জননন্দিত।
উপস্থিত জনতা অনেকেই হাত উচিয়ে বললেন, শুরু করেন! শুরু করেন! কেউ একজন বলে উঠলেন, বেলা যায়! গোয়ালে গরু তুলতে হবে! ইত্যাদি...
বিপিন মাতবর মাইকে নাম ঘোষণা করলেন হরষিত ভট্টাচার্য ও রমজান আলীর এবং তাদেরকে মাইকের সামনে আসতে বললেন। বিপিন মাতবর আরো তিন জন মাতবরকে তার পাশে চেয়ারে বসালেও সমস্ত সিদ্ধান্ত তিনিই নিচ্ছেন।
অন্যরা উপলক্ষ্য মাত্র। বিপিন এব্যাপারে কৌশল করেই তিনজন মুসলমান মাতবরকে বেছে নিয়েছেন চেয়ারে বসার জন্য। যাতে ধর্মের ধুয়া তুলে বিচারকে কেউ সমালোচনা না করতে পারে।
হরষিত ব্রাহ্মণ এবং রমজান আলী ঈমাম চলে আসলেন জনতার সামনে। মাতবরদের দুই পাশে দুইজন দাঁড়িয়ে গেলেন।
সঙ্গে সঙ্গে মাঠের পরিস্থিতি আবার পরিবর্তন হয়ে গেলো। হিন্দু মহিলারা উলুধ্বনি শুরু করলেন, পুরুষরা রাধাকৃষ্ণ ধ্বনি দিতে লাগলেন। আর মুসলমানরা নারায়ে তকবির! আল্লাহু আকবর! ধ্বনিতে মাঠ গরম করে ফেললেন।
বিপিন মাতবর আবার মাইক চালালেন, আচ্ছা কে আগে তালগাছে উঠবে! হরষিত? না রমজান? আপনারা উপস্থিত জনতা সিদ্ধান্ত দেন!
জনতার মধ্য থেকে অনেক রকম কথা বেরিয়ে আসলো। অসংখ্য মতামত ভালভাবে শোনাও গেলো না।
তবে বেশিরভাগের মতামত বোঝাগেলো। বললেন, আপনারা মাতবররাই সিদ্ধান্ত নেন।
সুযোগটা কাজে লাগালেন বিপিন মাতবর! বললেন, আচ্ছা হরষিত তো আগে পাখির ডাক শুনেছিলো! তাহলে সেই আগে তালগাছ থেকে লাফ দিক! অন্য তিন মাতবরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললেন, আপনারাই সিদ্ধান্ত দেন! অন্য তিনজন মাতবর বিপিনের কথাতেই সায় দিলেন। বললেন, হ্যা! আপনার সিদ্ধান্তই ঠিক। আগে হরষিত গাছে উঠুক!
হরষিতের পরণে গেরুয়া রংয়ের পাজামা-পাঞ্চাবি এবং নামাবলী আর রমজানের পরনে তার সহজাত ঈমামতী পোশাক।
দুজনই পোশাক বদলানোর সুযোগ পেয়েছে। সংশ্লিষ্ঠ লোকেরা তাদের পোশাক নিয়ে এসেছে বাড়ী থেকে।
হরষিত সোজা হয়ে দাঁড়ালেন এবার! চোখ বুজে কৃষ্ণ নাম জপলেন বার কয়েক! তারপর চিতকার দিয়ে বললেন, রাধাকৃষ্ণের জয় হোক!!
হরষিতের সাথে সাথে সমস্বরে উপস্থিত সমস্ত হিন্দুরা কন্ঠ মেলালেন। হিন্দু নারীরা আরেক দফা উলুধ্বনি দিলেন। একটা চাঁপা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে।
হরষিত সামনে এগিয়ে গেলেন তালগাছের দিকে। তালগাছ ছুঁয়ে প্রণাম করলেন! তারপর ওঠা শুরু করলেন বাঁশ বেয়ে। ইতিমধ্যে কাঁসর-ঘন্টা এবং ঢোলও এসে গিয়েছে মাঠে। সমানে বাজাচ্ছে তারা। কয়েকজন যুবক দাঁড়িয়ে ‘রাধা-কৃষ্ণের জয় হোক’ বলছে।
সাথে সাথে কন্ঠ মেলাচ্ছে হাজারো মানুষ।
তরতর করে তালগাছের মাথায় উঠে গেলেন হরষিত ব্রাহ্মণ। না তার কোন ভয় নেই আজ! দৃঢ চিত্তে বসে পড়লেন তালগাছের মাথায়। তারপর হাত জোড় করলেন! চোখ বুজলেন! মনে মনে কিছু বললেন! হয়তো মন্ত্র জপ করলেন।
একহাতে একটি তালপাতার ডাটা ধরে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালেন হরষিত।
হরষিতের উঠে দাঁড়ানো দেখে থেমে গেলো সব বাজনা-উলুধ্বনি! বন্ধ হয়ে গেলো উচ্চস্বরের কৃষ্ণনাম! নিষ্পলক চোখে উপরের দিকে তাঁকিয়ে আছে হাজারো চোখ। কেউ কেউ হাত জোড়করে ভগবানের কাছে হরষিতের জন্য মঙ্গল কামনা করছে। হাজার হাজার মানুষের সমাগম, অথচ এখন কোলাহলহীন।
শ্রী-কৃষ্ণ-রাধা! শ্রী-কৃষ্ণ-রাধা! বলতে বলতে লাফ দিয়ে পড়লেন হরষিত। নিচেয় পড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু পারেননি।
ছিটকে গিয়ে কাত হয়ে পড়তে যাচ্ছিলেন কিন্তু হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দিলেন নিজেকে। অনেকটা বিড়ালের মতো করে নিজেকে বাঁচালেন হরষিত ব্রাহ্মণ। হরষিত লাফ দিয়ে মাঠে পড়ার পরেও কয়েকটা মুহুর্ত মানুষ নিরবই ছিলো। কিন্তু ঘোরটা কাটতেই হিন্দুরা একেবারে উচ্ছাসে ফেটে পড়লেন। কাসর-ঘন্টা, উলুধ্বনি সব মিলেমিশে একাকার।
অনেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছেন আর বলছেন ‘রাধা-কৃষ্ণের জয়’ ‘রাধা-কৃষ্ণের জয়’।
আবারও উঠে দাঁড়ালেন হরষিত। তার বুকের দ্রুত ওঠানামা এখনও বোঝা যাচ্ছে। হাত উচুঁ করে বললেন ‘শ্রী-কৃষ্ণ-রাধা’। সমবেত হিন্দু জনতা গলা ফাঁটানো আওয়াজ তুললেন ‘শ্রী-কৃষ্ণ-রাধা’! বিপিন মাতবরের গলার আওয়াজও সেই সমুদ্রগর্জনের সাথে মিশে গেলো।
মুসলমানরা এখনও অনেকটা নিরব দর্শকের মতো ঘটনা দেখে যাচ্ছেন। চেয়ারে বসা তিন মুসলমান মাতবরেরও ভাবের তেমন কোন পরিবর্তন হলো না হরষিতের জয়ে।
মাইক্রোফোন হাতে আবারও বিপিন মাতবর আওয়াজ তুললেন, এবার রমজান আলীর পালা। যাও রমজান, প্রমাণ করো!
কপালে চিন্তার রেখা দেখা দিলো রমজানের। মাদ্রাসার হুজুরদের কাছ থেকে সে বহুবার শুনেছে, ইসলাম ধর্মই একমাত্র সত্য ধর্ম, শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
মনেপ্রাণে সে বিশ্বাসও করতো এটা। তাই সে ধরেই নিয়েছিলো, হরষিত নিশ্চয়ই শেষ পর্যন্ত লাফ দিবে না, এমনকি তালগাছের মাথায় ওঠার পরও। আর যদি লাফ দেয়ও! ও নিশ্চয়ই মরবে, অন্তত হাত-পা তো কিছু একটা ভাঙবে। তাহলেও মানুষের বুঝতে কষ্ট হবে না যে হিন্দু ধর্ম একটা মিথ্যা ধর্ম আর হরষিত ব্রাহ্মণও মিথ্যুক। কিন্তু এ কি হলো! ও তো লাফ দিলোই, আবার কোন সমস্যাও হয়নি ওর! তাহলে কি হিন্দু ধর্ম সত্য! মাদ্রাসার হুজুররা মিথ্যা শিখিয়েছিলো! যোগ-বিয়োগ ঠিকমতো মিলছে না রমজান আলী ঈমামের।
আস্তে আস্তে তালগাছের দিকে পা বাড়ালো রমজান। উপস্থিত মুসলমানরা ইতিমধ্যে তাদের উচ্চ কন্ঠস্বর প্রমাণ করেছে। হিন্দুদের গলা তেমন আর শোনা যাচ্ছে না এখন। চারিদিকে শুধু ‘নারায়ে তকবীর, আল্লাহু আকবর’ ধ্বনী। কেউ কেউ নিজের মতো করে সুরা-কালামও পড়ে নিচ্ছেন, আমিন বলে আল্লার শুকরিয়া আদায় করছেন।
আল্লা-রসুল-খোদা বলতে বলতে রমজান আলী গাছে ওঠা শুরু করলো।
কিন্তু কেন জানি মনে ঠিক জোর পাচ্ছে না রমজান। হরষিতের হিন্দু ধর্মই যদি ঠিক হয় তাহলে তার ইসলাম ধর্ম কি মিথ্যা! না! এ হতে পারে না! ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম। কিন্ত তাহলে হরষিত যে প্রমাণ করলো! মানষিকভাবে বেশ দুর্বল হয়ে পড়লো রমজান। কিন্তু লাফ তো দিতেই হবে।
তা না হলে এই হাজার হাজার মুসলমান! তার দিকেই তাঁকিয়ে আছে।
না! লাফ সে দিবেই! নিজের মনকে শক্ত করার চেষ্টা করলো রমজান আলী। তালগাছের মাথায় উঠে হরষিতের মতোই বসে পড়লো রমজান। নিজের মনে বলতে লাগলো আল্লা-রসুল-খোদা!
আবার সেই ভাবনা রমজানকে অন্যমনস্ক করে দিলো! না! হিন্দু ধর্মই যদি ঠিক হয় তাহলে তো সেও হরষিতের মতো শ্রী-কৃষ্ণ-রাধা বলতে পারে। মানসিক চাঁপ রমজানকে বিপর্যস্ত করে ফেললো।
সে একবার বলে- আল্লা-রসুল-খোদা, আর একবার বলে শ্রী-কৃষ্ণ-রাধা! অবিশ্বাস আর দুশ্চিন্তার দোলাচলে আল্লা-রসুল-খোদা-শ্রী-কৃষ্ণ-রাধা বলতে বলতে চোখ বুজেই লাফ দিলো রমজান আলী।
ঠিক লাফ বললে ভুল বলা হবে। অনেকটা নিজেকে ঠেলে ফেলার মতোই ঝাঁপ দিলো সে। যেমন কাজ, ফলও তেমন! নিচেয় এসে পড়লো অনেকটা বস্তার মতো। মুসলমানদের নারায়ে তকবীর মাতম তখনও চলছে।
কয়েকটা ছেলে দৌড়ে আসলো রমজানের কাছে। না কোন সাড়া শব্দ নেই রমজান আলীর। বুকে হাত দিয়ে একজন পরীক্ষা করলো! হ্যা! বুকের ধুক-ধুকানি ঠিকই চলছে। রমজানকে ধরাধরি করে খালের পাড়ের দিকে নিয়ে গেলো তারা। একজন বললো, দেখ নৌকা পাওয়া যায় কি না একটা, ডাক্তারের কাছে নিতে হবে ঈমাম সাবকে।
রমজান আলীর পরাজয়ই কি ইসলামের পরাজয়! না! নিশ্চয়ই না! অসংখ্য মুসলমান দাঁড়িয়ে গেলো হাত উঁচু করে। আমি লাফামু, আমি লাফামু! একটা শব্দ উঠে গেলো। উপস্থিত হিন্দুরা মনে মনে খুশি হলেও প্রকাশ করছে না। বরং বেশিরভাগ হিন্দুরা এখনও কৃষ্ণনাম জপ করছে। হরষিতও ঠাঁয় বসে আছে।
আবার মাইক্রোফোন ধরলেন পিবিন মাতবর। হ্যা! ভাই! আপনারা ঠিকই বলেছেন, রমজান আলীর জন্যই যে ইসলাম ধর্ম অসত্য হয়ে যাবে সেটা ঠিক না। কিন্তু এতজন একসঙ্গে কথা বললে তো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। বরং আপনাদের মধ্য থেকে একজন নির্বাচন করেন যে কিনা তালগাছের মাথা থেকে লাফ দিবে।
মধ্য বয়সী এক কৃষক হাত উঁচু করে সামনে এগিয়ে আসলেন।
মাতবরদের সামনে এসেই দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি। বুক ফুলিয়ে বললেন, আমি তালগাছ থেকে লাফ দিতে চাই। আপনারা সবাই অনুমতি দেন! আমি প্রমাণ করে দেই মুসলমান ধর্ম ঠিক, সত্য।
সাথে সাথে অসংখ্য কন্ঠে সমর্থন আসলো, যান, আপনিই যান! আমাদের দোয়া আপনার সাথে আছে! অসংখ্য মানুষের সমর্থন ও অনুপ্রেরণায় সিরাজ মোল্লার শক্তি যেন আরো বেড়ে গেলো।
পোশাক বদলানোর সময় পায়নি সিরাজ মোল্লা।
খবর শুনেই সোজা ক্ষেত থেকেই চলে এসেছে এই স্কুল মাঠে। তাই পরনে লুঙ্গি এবং ছেড়া গেঞ্জিটাই আছে তার। একজন একটা টুপি ছুড়ে মারলো সিরাজ মোল্লার দিকে। টুপিটার মধ্যে একটা ফুঁ দিয়েই মাথায় পরে নিলো সে। তারপর শক্ত করে আবারও লুঙ্গির গিটটা দিলো।
নিচের পাশ ধরে খুব টাইট করে কাছা দিয়ে নিলো লুঙ্গিটা। সর্বশক্তি দিয়ে শ্লোগান ধরলো- আল্লা-রসুল-খোদা! প্রচন্ড গর্জনে পাল্টা জবাব আসলো জনগণের কাছ থেকে- আল্লা-রসুল-খোদা।
বিপিন মাতবরের অনুমতির জন্য মোটেও অপেক্ষা করলো না সিরাজ মোল্লা। সোজা তালগাছের গোড়ায় গিয়ে বাঁশ বেয়ে ওঠা শুরু করলো সে। আল্লা-রসুল-খোদা শ্লোগানে তখন পুরো মাঠ মাতোয়ারা।
তরতর করে তালগাছের মাথায় উঠে গেলো সিরাজ। না! তালগাছের মাথায় বসলো না সে। এক হাতে একটা তালপাতার গোড়া ধরে অন্যহাত উঁচিয়ে আবারও আল্লা-রসুল-খোদা বলে জনগণের গলার সাথে গলা মেলালো।
কয়েক মুহুর্ত সময় নিলো সিরাজ মোল্লা। তারপর সোজা হয়েই দিলো লাফ।
ঠিক যেভাবে লাফ দিলো সেভা্বেই নিচেয় এসেও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সিরাজ মোল্লা। শরীরে প্রচন্ড ঝাঁকা লাগলেও পা তার একটুও টলেনি।
জনতার গর্জন যেন বেড়ে গেলো আরো। কেউ কেউ সিরাজ মোল্লার নামেও শ্লোগান দিচ্ছে এখন। সিরাজ মোল্লা খুবই স্বাভাবিক ভঙ্গীতে মাতবরদের সামনে এসে দাঁড়ালেন।
দেখে মনেই হচ্ছে না যে একটু আগেই সে এত উঁচু তালগাছ থেকে লাফিয়ে পড়েছে সে। বিপিন মাতবর চেয়ার থেকে উঠে পিঠ চাপড়ে দিলেন সিরাজ মোল্লার। বললেন, তুমিই বীর সিরাজ! তুমিই প্রমাণ করলে মুসলমান ধর্ম মিথ্যা নয়।
আবার মাইক্রোফোন হাতে নিলেন বিপিন মাতবর। তাহলে আজকে এখানেই সমাপ্তি টানা যায়! কি বলেন আপনারা? উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বললেন বিপিন মাতবর।
জনতার মধ্য থেকে একজন উঠে দাঁড়িয়ে বললো, মাতবর মশাই! আপনি আপনার শেষ সিদ্ধান্ত শুনায়ে দেন! আমরা বাড়ী যাই, কাম আছে।
বিপিন মাতবর সাবলিল ভঙ্গীতেই বললেন, ধর্মে কোন গলধ নাই। ইসলাম! হিন্দু! দুটো ধর্মই ঠিক। হরষিত আর সিরাজ সেটা আজ হাতে নাতে প্রমাণ করে দিলো।
আর একজন দাঁড়িয়ে বললো- কিন্তু পাখি টা তাহলে কি বললো?
বিপিন মাতবর নিজের বুদ্ধির উপর বিশ্বাস রেখেই বললো- পাখির ভাষা বোঝা তো মানুষের পক্ষে সম্ভব না।
তাই পাখি কি সুরে, কি স্বরে ডাকলো সেটা পাখির কাজ। মানুষ নিজের মনে পাখির ডাককে আপন করে নিতে পারে। কিন্তু আবারও বলছি, আজকে প্রমাণিত হলো, ধর্ম ঠিকই আছে।
জনতা ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেকেই বাড়ীতে কাজ ফেলে এখানে চলে এসেছে।
যত দ্রুত বাড়ী যাওয়া যায় ততই মঙ্গল। ভিড় ঠেলে অনেকে দ্রুত বাড়ীর দিকে পা বাড়ালো।
মোকসেদ ব্যাপারী তখন মাতবরদের দিকে হাত উঁচু করে বললো, আপনি যাই বলেন মাতবর মশাই! পাখিটা কিন্তু এই গরীব মোকসেদের কথাই বলেছে। পাখি বলেছিলো ‘পিয়াজ-রসুন-আদা’! এই মোকসেদ ব্যাপারী স্বাক্ষী।
মোকসেদের কথা শুনে মাতবর চারজন হেসে উঠলেন একস্বরে ।
=সমাপ্ত=
প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব পড়তে পর্যাক্রমে নিচের লিংকদুটিতে যান....
Click This Link
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।