আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার দেশ বন্ধ : পাঁচটি দৈনিকের সাদামাটা খবর

বেহুদা প‌্যাচাল

ভোরে আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমান গ্রেফতারের খবরটি টিভিতে দেখতে দেখতে মনে হয়েছিলো, সংবাদপত্রগুলো নিশ্চয়ই আজ খুব সিরিয়াস নিউজ করবে, প্রত্যেক সম্পাদক মন্তব্য প্রতিবেদন লিখবেন ( মতিউর রহমান-আবেদ খান তো অবশ্যই), সংবাদপত্রের উপর হস্তক্ষেপ করায় সরকারের নিন্দা করবেন, কিন্তু দেখা গেলো তেমন কিছুই তারা করলেন না, নিউজ হলো সাদামাটা ( নয়া দিগন্ত ছাড়া)। যেনো এটা একটা ঘটনার ঘটনা, তেমন কিছু না! প্রশ্ন হলো, এ ক্ষেত্রে তাদেরকে অনুভূতিশীল দেখা গেলো না কেনো? তারা কি তবে খুশি হলেন সরকারের এই সিদ্ধান্তে? সাংবাদিকরাও কি তবে সংকীর্ণ দলীয় চিন্তায় আটকে গেলেন শেষ পর্যন্ত? ব্যক্তিগতভাবে একেকজন একেক আদর্শ লালন করতেই পরেন, কিন্তু সাংবাদিকতা প্রশ্নে সবাই এক, এটাই তো সাধারণ কথা। কিন্তু এ কী দেখছি আমরা? দৈনিকগুলোর এ সম্পর্কিত আজকের নিউজগুলো একবার পড়া যাক। প্রথম আলো মাহমুদুর রহমান আদালতে নিজস্ব প্রতিবেদক সদ্য বন্ধ করে দেওয়া আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আজ বুধবার বিকেলে আদালতে নিয়ে আসা হয়েছে। পুলিশকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় তাঁকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

আজ ভোর চারটার দিকে কারওয়ান বাজারে আমার দেশ পত্রিকার কার্যালয় থেকে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ‘প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাক্টের’ ৭ ধারা অনুযায়ী পত্রিকাটির প্রকাশনা (ডিক্লারেশন) বাতিল করা হয়। প্রকাশনা বাতিল হওয়ার পরপরই পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে পুলিশ কারওয়ান বাজারে আমার দেশ পত্রিকার কার্যালয়ে অভিযান চালায়। কিন্তু পত্রিকার সংবাদকর্মীরা তাঁদের সম্পাদককে গ্রেপ্তারে পুলিশকে বাধা দেন। রাত দুইটা পর্যন্ত কয়েক দফা পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হলেও কর্মীদের অনড় অবস্থানের কারণে পুলিশ ভেতরে ঢুকতে পারেনি।

এর আগে আমার দেশ পত্রিকার কর্মীরা এর কার্যালয়ে ওঠার লিফট বন্ধ করে দেন। অবশেষে ভোর চারটার দিকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। মাহমুদুর রহমান ২০০৮ সালে আমার দেশ পত্রিকার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। ওই সময় থেকেই তিনি পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। প্রথম আলো, ২ জুন, ২০১০ কালের কণ্ঠ : আমার দেশ বন্ধপ্রকাশকের মামলার পর ডিক্লারেশন বাতিল, প্রেস সিলগালা নিজস্ব প্রতিবেদক দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা (ডিক্লারেশন) বাতিল করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তেজগাঁওয়ের লাভ রোডে অবস্থিত পত্রিকাটির ছাপাখানা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এর আগে রাত ১০টায় প্রকাশনা বাতিল-সংক্রান্ত আদেশে ঢাকার জেলা প্রশাসক স্বাক্ষর করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ আমার দেশ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় এবং ভবনে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে। রাজধানীর তেজগাঁও শিলাঞ্চল থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, আমার দেশ-এর প্রকাশক হাসমত আলী হাসু গতকাল রাতে পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে 'প্রতারণা'র মামলা করেন। মামলার এজাহারে হাসমত আলী উল্লেখ করেন, '২০০৮ সালে ২১ আগস্ট আমার দেশ পত্রিকার সব শেয়ার মাহমুদুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জুন মাসে জয়েন্ট স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে মালিকানা থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা ছিল। ওই বছর ১১ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা মেজিস্টেটের কার্যালয়ে গিয়ে ফরম সি পূরণ করে প্রকাশক ও পরিচালক হিসেবে নাম প্রত্যাহারের আবেদন জানাই। ২০০৯ সালে ১৯ নভেম্বর সহকারি কমিশনার জাকিয়া সুলতানা আমার দেশ পত্রিকায় আলহাজ্ব হাসমত আলীর নাম ব্যবহার না করার জন্য মাহমুদুর রহমানকে চিঠি দেন। কিন্তু এর পরও আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশক হিসেবে আমার নাম ছাপা হওয়ায় বিভিন্ন আদালতে প্রায় ৩০টি ফৌজদারি মামলা করা হয়। এ ঘটনায় আমি চরমভাবে অপমানিত, হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছি।

' এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হাসমত আলী পুলিশের কাছে আবেদন জানান। এর আগে গতকাল সকালে হাসমত আলীকে তাঁর শাহজাহানপুরের বাড়ি থেকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তুলে নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন তাঁর পরিবারের লোকজন। বিকেলে হাসুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মাহমুদুর রহমানকে রাতে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ আমার দেশ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে চাইলে পত্রিকার কর্মীরা বাধা দেয়। তারা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া কোনভাবেই মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে দেবে না বলে জানিয়ে দেয়।

রাত ১১টার পর থেকেই আমার দেশ কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতা-কর্মী ও উৎসুক জনতা জড়ো হতে থাকে। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুকসহ দলের বেশ কিছু সংখ্যক নেতা-কর্মী অবস্থান নেন। রাত ১টার দিকে তারা সেখানে বিক্ষোভ মিছিল করে আমার দেশ পত্রিকা বন্ধের প্রতিবাদ জানায়। রাত পৌনে দুইটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ সেখানে অবস্থান করছিল। রাত ১২টায় পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কারওয়ানবাজারে তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, পুলিশ কাগজপত্র না দেখিয়েই আমার দেশ-এর প্রেস বন্ধ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, 'এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার তার ফ্যাসিবাদী চরিত্রকেই প্রকাশ করেছে। আমার দেশ বন্ধের মধ্য দিয়ে শুধু এ পত্রিকা নয়, মুক্ত সাংবাদিকতার ওপর একটি বড় ধরনের আঘাত হানল সরকার। ' আমার দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি জাহেদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রাত ১১টার মধ্যে পত্রিকার বুধবারের প্রথম সংস্করণ ছাপার কাজ শেষ হয়। দ্বিতীয় সংস্করণ প্রেসে যাওয়ার আগেই পুলিশ ছাপাখানা বন্ধ করে দেয়। তবে পুলিশ ওই সময় ছাপাখানা বন্ধ করার সরকারি কোনো আদেশপত্র বা নির্দেশনামা দেখাতে পারেনি বলে ছাপাখানাটির ব্যবস্থাপক আমাদের নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ পত্রিকার কপিও সরবরাহ করতে দেয়নি। ' এর আগে গতকাল বিকেল ৫টায় মাহমুদুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, এনএসআইয়ের (জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা) সদস্যরা হাসমত আলীকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে 'মিথ্যা' অভিযোগনামায় স্বাক্ষর করিয়ে ছেড়ে দেন। সরকার দৈনিক আমার দেশ বন্ধ করে দেওয়ার 'পাঁয়তারা' করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। হাসমত আলীর পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন, সকাল ৯টার দিকে একটি সংস্থার তিন-চারজন সদস্য জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে শাহজাহানপুরের বাসা থেকে তাঁকে নিয়ে যান। বেলা ৩টার দিকে তিনি বাসায় ফিরলেও কিছুক্ষণ পরই আবার বেরিয়ে যান।

সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান অভিযোগ করেন, এনএসআইয়ের কর্মকর্তারা হাসমত আলীকে জোর করে তাঁদের কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এরপর ঢাকার জেলা প্রশাসক ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি বরাবর একটি অভিযোগনামায় সই রেখে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁকে ঢাকার বাইরে না যেতে এবং এ ব্যাপারে মুখ না খুলতে সতর্ক করে দেওয়া হয়। তা না হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলেও দাবি করেন মাহমুদুর রহমান। মাহমুদুর রহমান বলেন, হাসমত আলীর সই করা কাগজে লেখা ছিল, 'আমি ওই পত্রিকার প্রকাশক নই।

সেখানে আমার নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ' আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বলেন, সারা দেশে আমার দেশের বিরুদ্ধে ৩১টি মামলা দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির খবর, মানবাধিকার লঙ্ঘন, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন এবং ক্রসফায়ারের খবর প্রকাশ করায় সরকার অস্বস্তিতে আছে। এ জন্যই সরকার আমার দেশ-এর কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে চাইছে।

মাহমুদুর রহমান বলেন, 'আমার ভয়-ডর কম। সাহস আছে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করার। ১/১১-এর কঠিন সময়ে কলম নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। লড়াই চালিয়ে যাব। ' সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০০৮ সালে মাহমুদুর রহমান আমার দেশ-এর দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকাশক এবং সম্পাদক পরিবর্তনের জন্য যথাযথ নিয়ম মেনে জেলা প্রশাসক অফিসে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু পৌনে দুই বছর ধরে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ জেলা প্রকাশকের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আছে। প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। কালের কণ্ঠ, ২ জুন, ২০১০ আমার দেশ আমার দেশ বন্ধের পাঁয়তারা : মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া : বাকশালী কায়দায় পত্রিকা বন্ধ করা হচ্ছেস্টাফ রিপোর্টার দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ ও পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের পাঁয়তারা চালাচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে পত্রিকার প্রকাশক আলহাজ হাসমত আলীকে গতকাল সকালে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে প্রায় ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে তাকে দুটি দরখাস্ত স্বাক্ষরে বাধ্য করা হয়। এর একটি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে এবং অপরটি ঢাকার জেলা প্রশাসক বরাবরে লেখা। এরপর বিকালের দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হলেও ঢাকার বাইরে যেতে বারণ করা হয়েছে এবং প্রয়োজনে আবারও ডেকে নেয়া হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলাটি দায়ের হয়। সিআরপিসি’র ৪১৯, ৪২০ ও ৫০০ ধারায় মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতারণার ও প্রকাশনা জোর করে অব্যাহত রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রায় একই সময়ে মাহমুদুর রহমানের গুলশানের বাসায় গিয়ে পুলিশ তাকে খোঁজাখুঁজি করে। আমার দেশ কার্যালয়ে সন্ধ্যার পর একদল সাদা পোশাকধারী পুলিশ মাহমুদুর রহমানের গাড়ি ঘিরে রাখে। এ সময় মাহমুদুর রহমান অফিসে তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে সরকারের ষড়যন্ত্রের খবর মিডিয়ার মাধ্যমে দ্রুত দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমার দেশ-এর সম্পাদক ও সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে বিকাল থেকেই পেশাজীবী, রাজনৈতিক কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ আমার দেশ অফিসে আসতে শুরু করেন।

রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাংবাদিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ আমার দেশ কার্যালয়ে এসে পত্রিকার পাশে থাকার ব্যাপারে তাদের সংহতি প্রকাশ করেন। এর আগে বিকালে আমার দেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান বলেছেন, বর্তমান সরকার তার ফ্যাসিবাদী আচরণের মাধ্যমে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করতে চায়। ইতোমধ্যে তারা দুটি টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করেছে। এখন দৈনিক পত্রিকা আমার দেশ বন্ধ এবং আমাকে গ্রেফতার করার ষড়যন্ত্র করছে। এই অবস্থায় তিনি দলমত নির্বিশেষে সংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের এই হীন চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, জরুরি সরকারের সময়ে যেভাবে বিভিন্ন জনকে উঠিয়ে নিয়ে কাগজে সই করতে বাধ্য করা হতো গতকাল সকালে আমাদের প্রকাশক আলহাজ্ব হাসমত আলীকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নূর আলী, আজম জে চৌধুরীরা মামলা করেছিলেন। সেনা সমর্থিত মইনুদ্দীন-ফখরুদ্দীনের ১/১১-এর সরকারের কথা মনে করিয়ে দেয়। ওই সরকার যে পদ্ধতি শিখিয়েছে বর্তমান সরকার তা-ই অনুসরণ করছে। ওই সময়ের মতোই তারাও হাসমত আলী সাহেবকে ধরে নিয়ে কাগজে সই করে আমার বিরুদ্ধে মামলা দিতে চাইছে।

হাসমত আলীর কাছ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে লিখিত নেয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, এই সরকার কোন আইনের তোয়াক্কা করে না। তারা আইন মানে না। রিমান্ড, ক্রসফায়ার, নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক নিপীড়ন, গুপ্তহত্যাসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে আমার দেশ শক্ত অবস্থান নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ছেলেসহ সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী এমপিদের দুর্নীতির খবর আমার দেশ-এ প্রকাশিত হচ্ছে। এ কারণে বর্তমান সরকার আমার দেশের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে।

তারা চাইছে আমার দেশের কণ্ঠ রোধ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে। হাসমত আলীকে কেন ধরা নেয়া হবে প্রয়োজনে মাহমুদুর রহমানকে ধরে নিয়ে যাক, হাসমত আলী সেটা জানতে চেয়েছেন কিনা এই প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান বলেন, তিনি এতটাই ভীত হয়েছিলেন যে তিনি কোন প্রশ্ন করতে পারেননি। মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি অতি দুর্দিনে এই পত্রিকার দায়িত্বভার গ্রহণ করি। এই পত্রিকার দায়িত্বভার গ্রহণের সময় ৪০০ সংবাদকর্মী প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে বেতনভাতা পাচ্ছিল না। তখন সাংবাদিকদের অনুরোধেই আমি এই পত্রিকার দায়িত্ব নেই।

এর আগে সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসেবে আমার কোন পরিচয় ছিল না। আমি ছিলাম একজন কলাম লেখক। এই পত্রিকার একটি ধারা আছে। তাহলো স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলা। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরা।

কিন্তু এই পত্রিকার অনেক সংবাদই সরকারের অনুকূলে যাচ্ছে না এবং তাদের জন্য সুখকর হচ্ছে না। তাই আমি এখন ৩১টি মামলায় আসামি হয়ে গ্রেফতারের জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি বলেন, আজকের যে ন্যক্কারজনক ঘটনা কোনো গণতন্ত্রের নাম আছে এমন কোনো দেশেও এটা ঘটতে পারে না। এই সরকার বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে। আমার দেশকে কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র করছে।

মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সকাল ৯টার দিকে আমাদের প্রকাশক আলহাজ্ব হাসমত আলীকে এনএসআই ধরে নিয়ে যায়। এ খবর শুনে আমার দেশ-এর সিনিয়র সাংবাদিক তার ফোনে কয়েক দফায় যোগাযোগের পর এক পর্যায়ে তিনি জানান, তিনি বিপদে আছেন, এনএসআই অফিসে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে। আমার দেশ-এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দুটি দরখাস্তে স্বাক্ষর করার জন্য তাকে আটকে রাখা হয়েছে। ঘন্টা দুয়েক পর তিনি জানান, তার কাছ থেকে দুটি কাগজে সই নেয়া হয়েছে।

তার একটি ঢাকার জেলা প্রশাসককে ও অপরটি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে লেখা। মাহমুদুর রহমান জানান, এনএসআই অফিস থেকে বের হওয়ার পর হাসমত আলীর সঙ্গে তিনি আমার দেশ পত্রিকা অফিস থেকে ফোনে কথা বলেছেন। তিনিও তার কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। মাহমুদুর রহমান বলেন, হাসমত আলী সাহেব জানিয়েছেন তিনি যতটুকু দেখতে পেরেছেন তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়া দুটি কাগজে লেখা রয়েছে, তিনি আমার দেশের প্রকাশক নন। জোর করে তার নাম ছাপা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয় আবেদনে। মাহমুদুর রহমান জানান, সরকারের এসবি ও ডিএফপির ক্লিয়ারেন্স সত্ত্বেও দীর্ঘদিন থেকে আমার দেশ-এর প্রকাশক পরিবর্তন হয়নি। অন্যদিকে উল্টো এখন বিদায়ী প্রকাশক দিয়ে ন্যক্কারজনক পথে এগুচ্ছে সরকার। সংবাদ সম্মেলনে আমার দেশ সম্পাদক বিভিন্ন নথিপত্র তুলে ধরে বলেন, গত ২৬ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে ঢাকার জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘আমি মাহমুদুর রহমান, চেয়ারম্যান আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেড কোম্পানির বোর্ড অব ডাইরেক্টরস-এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক নিযুক্ত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।

উপরোক্ত বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে বাধিত করবেন। ’ ১৬ জুন ২০০৯ তারিখে বিশেষ পুলিশ সুপার আমাদেরকে অনাপত্তি পত্র দেন। এতে লেখা হয়, সংশ্লিষ্ট থানা, নগর বিশেষ শাখা, ঢাকা ও অত্র অফিসের রেকর্ডে তার বিরুদ্ধে কোনো বিরূপ তথ্য পাওয়া যায়নি। ’ গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে ছাপাখানার রক্ষক ও মুদ্রাকরের নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা হয়। এতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে জানানো হয়, ‘আমি মাহমুদুর রহমান আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেড নামক ছাপাখানার রক্ষক ও মুদ্রাকর নিযুক্ত হয়েছি; এ বিষযে ব্যবস্থা নিয়ে বাধিত করবেন।

’ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঢাকার ১৯৭৩ সালের ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ডিক্লারেশন ও রেজিস্ট্রেশন) আইনের ৪(২) মোতাবেক ছাপাখানার ঘোষণাপত্র দেয়া হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ আমার দেশের প্রকাশকের নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা হয়। এতে বলা হয়, ‘আমি মাহমুদুর রহমান, চেয়ারম্যান আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেড কোম্পানীর বোর্ড অব ডাইরেক্টরস-এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রকাশক নিযুক্ত হয়েছি। ’ গত ৫ নভেম্বর ২০০৯ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেয়া হয়। উপ-পরিচালক মাসুদা খাতুন স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বলা হয়, ‘আমারদেশ পত্রিকার প্রকাশক আলহাজ্ব মোঃ হাসমত আলীর পরিবর্তে জনাব মাহমুদুর রহমানের নাম প্রতিস্থাপন করার অনুমোদন যেতে পারে।

এরপরও জেলাপ্রশাসকের কার্যালয় থেকে অনুমোদন দেয়া হয়নি। আমরা বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেও সেটা নিতেপারিনি। বলা হয়েছে ফাইলটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছে। মাহমুদুর রহমান বলেন, আজ জুন মাসের ১ তারিখ। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৪টি সংবাদপত্র রেখে সবগুলো সংবাদপত্র বন্ধ করে দেন।

তখন সাংবাদিকরা অনেকেই আত্মহত্যা করেছিলেন, অনেকে মুদি দোকান দেন, কেউ কেউ হকারি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই সেই তথ্য জানেন না। আমি আপনাদের মাধ্যমে সেই তথ্য তরুণপ্রজন্মকে জানাতে চাই। এই সরকার ক্ষমতায় এসে ২টি টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দিয়ে ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছে।

এখন তারা জাতীয় দৈনিক বন্ধের চক্রান্ত শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে আমার দেশের প্রকাশককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সকল সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের উচিত এর বিরুদ্ধে এগিয়ে আসা। আমরা আইনের মধ্যে থেকে বস্তুনিষ্ঠভাবে আমাদের মত প্রকাশ করবো। সরকার এখন আমার দেশ বন্ধের চেষ্টা করছে, কাল অন্য পত্রিকা বন্ধের ষড়যন্ত্র করবে এটাই স্বাভাবিক।

আমাদের দিয়ে শুরু, আপনাদের দিয়ে শেষ হবে। তাই সকলের উচিত সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে এর প্রতিবাদ জানানো। মাহমুদুর রহমান একটি গোয়েন্দা সংস্থার নাম উল্লেখ করে বলেন, সোমবার রাতে আমি শুনেছি একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক বৈঠকে ১০ দিনের মধ্যে আমার দেশ বন্ধ করে আমাকে এ্যারেস্ট করার নিয়ে আলোচনা হয়েছে হবে। কিন্তু আমি একে গুজব বলে এড়িয়ে যাই। কিন্তু আজ সকালে দেখছি সেটা গুজব নয়।

সেই খবরের সত্যতা আছে। তিনি বলেন, আপনারা হয়তো জানেন ভয়-ডর আমার একটু কম। আমি কাউকে ভয় পাইনা। সরকারের সমালোচনা ও ফ্যাসিবাদী চক্রান্তের বুিরুদ্ধে আমার লড়াই অব্যহত থাকবে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মাহমুদুর রহমান বলেন, এনএসআইয়ের কর্মকর্তা শফিকুল্লাহ জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন আলহাজ্ব হাসমত আলীকে।

অথচ বিডি নিউজকে তিনি বলেছেন, তিনি বাসায় আছেন। মাহমুদুর রহমান বলেন, বিশেষ কোন সংস্থাগুলোকে এখন রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এই গণতন্ত্রের জন্য একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দেয়নি। দেশের মানুষ লড়াই সংগ্রাম করেনি। আমার দেশ কার্যালয়ে রাজনীতিক ও পেশাজীবী নেতারা : দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশক আলহাজ হাসমত আলীকে ধরে নিয়ে গিয়ে জোর করে স্বাক্ষর রেখে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করানোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী নেতারা।

গতকাল বিকাল থেকে তারা আমার দেশ কার্যালয়ে এসে সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহমর্মিতা জানান। হয়রানির খবর পেয়ে আমার দেশ কার্যালয়ে ছুটে আসেন প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, দিনকাল সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস শহিদ, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, সংসদ সদস্য প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, জাগপা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুত্ফর রহমান, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আবু নাসের মোঃ রহমাতুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক আমিনুর রহমান মজুমদার, ড. মামুন আহমেদ, ইস্রাফিল রতন, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেন, শিক্ষক নেতা মো. কামরুজ্জামান, আ. মফিজ, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, মোরতাজুল করিম বাদরু, মামুন হাসান, মাহবুবুল আলম, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, সাবেক ছাত্রদল নেতা রফিক আহমেদ ডলার প্রমুখ। আমার দেশ, ২ জুন, ২০১০ যুগান্তর আমার দেশ পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল যুগান্তর রিপোর্ট দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে রাত সাড়ে ১১টায় পুলিশ তার অফিসে গেছে। তাকে যে কোন সময় গ্রেফতার করা হতে পারে। তার আগে পুলিশ পত্রিকাটির তেজগাঁওয়ের প্রেস সিলগালা করে দেয়।

মঙ্গলবার রাত ৯টায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশক আলহাজ হাসমত আলী ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা ও মানহানির অভিযোগ এনে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা দায়েরের পর থেকেই প্রশাসন থেকে এসব প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাত সাড়ে ১১টায় ডিসি ডিবি (উত্তর) মাহবুবুর রহমান ও এডিসি (তেজগাঁও) মোল্লা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে শতাধিক সাদা পোশাক ও অস্ত্রধারী পুলিশ কারওয়ানবাজারের বিএসইসি ভবনের ১১ তলায় দৈনিক আমার দেশ কার্যালয়ে যান। এ সময় পত্রিকাটির শতাধিক সাংবাদিক-কর্মচারী পুলিশকে ভেতরে প্রবেশে বাধা দিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। রাত সাড়ে ১১টা থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত দেড়টা) চলে এ বাধা প্রদান, স্লোগান, তর্কবিতর্ক ও মিছিল। তবে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, রাতে যে কোন সময় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হবে।

এদিকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা, দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হচ্ছেÑ এ সংবাদ শুনে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান খান দুদু, খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, গোলাম মোস্তফা এমপি ও শাম্মী আখতার এমপিসহ বহু নেতাকর্মী উপস্থিত হন। তারাও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের জন্য আসার কারণ জানতে চান এবং নানা যুক্তিতর্কে লিপ্ত হন। খবর নিয়ে জানা গেছে, দৈনিক আমার দেশ-এর প্রকাশক আলহাজ হাসমত আলী তেজগাঁও থানায় মামলা ও ডিসির কাছে আবেদন জানানোর পর থেকেই দ্রুততার সঙ্গে শুরু হয় পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল, প্রেসে তালা ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টায় ঢাকা জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে বিশেষ বাহকের মাধ্যমে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিলের আদেশটি আমার দেশ পত্রিকা অফিসে পৌঁছে দেয়া হয়। এ আদেশে বলা হয়, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশক আলহাজ হাসমত আলীর আবেদন ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিল করা হয় (স্মারক নম্বর-জেপ্রঢা/প্রকা/২০১০/৩৯৬/তাং ১/৬/২০১০)।

দৈনিক আমার দেশ ২০০৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়। প্রকাশনার শুরু থেকেই আলহাজ হাসমত আলী পত্রিকাটির প্রকাশক এবং আতাউস সামাদ সম্পাদক ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৬ এপ্রিল পত্রিকাটির নতুন পরিচালনা পরিষদ গঠন করে মাহমুদুর রহমান এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন এবং একই সঙ্গে তিনি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্বভারও গ্রহণ করেন। মামলার বাদী আলহাজ হাসমত আলী উল্লেখ করেন, পত্রিকাটির মালিকানা পরিবর্তন হলেও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সম্পূর্ণ অবৈধ ও প্রতারণামূলকভাবে প্রকাশক হিসেবে প্রিন্টার্স লাইনে তার নাম ব্যবহার করে আসছিল। ঢাকার জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধের চিঠি ইস্যুর পরই রাত ১১টায় শতাধিক পুলিশ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রেস ৪৪৬/সি এবং ৪৪৬/ডি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা ঘিরে ফেলে।

তারা প্রেসের লোকজনকে বের করে দিয়ে মূল দরজায় তালা লাগিয়ে সিলগালা করে দেয়। এ প্রসঙ্গে ঢাকার জেলা প্রশাসক মোঃ মুহিবুল হক যুগান্তরকে বলেন, দৈনিক আমার দেশ বন্ধের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র চাপ বা নির্দেশ ছিল না। পত্রিকাটির প্রকাশক নিজেই চিঠি দিয়ে জানান যে, তিনি প্রকাশকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। প্রকাশনা আইন অনুযায়ী কোন পত্রিকার প্রকাশক ইস্তফা দিলে সেই পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখা যায় না। তারপরও পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রকাশক হওয়ার জন্য একটি আবেদন করেন।

তার এ আবেদনটি বিধি অনুযায়ী ডিএসবির কাছে পাঠানো হয় ছাড়পত্রের জন্য। কিন্তু মঙ্গলবার ডিএসবি থেকে জানানো হয়, মাহমুদুর রহমানের নামে প্রকাশকের ছাড়পত্র দেয়া যাবে না। ডিএসবির এ রিপোর্ট এবং প্রকাশকের ইস্তফার ভিত্তিতেই প্রকাশনা আইন অনুযায়ী দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করা হয়েছে। সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রকাশকের মামলা : দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাত ৯টায় আমার দেশ-এর প্রকাশক আলহাজ হাসমত আলী তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। দণ্ডবিধির ৪১৯/৪২০/৫০০ ধারায় বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা ও মানহানির অভিযোগে মামলাটি (নম্বর ১(০৬)১০) দায়ের করা হয়।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার অফিসার ইনচার্জ ওমর ফারুক জানান, পত্রিকার মালিকানা ও প্রকাশনা বিষয়টি বুঝিয়ে দেয়া সত্ত্বেও মাহমুদুর রহমান প্রিন্টার্স লাইনে আলহাজ হাসমত আলীর নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করেছেন বলে মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়েছে। দায়িত্ব হস্তান্তর ও আপত্তি জানানো সত্ত্বেও প্রকাশক হিসেবে তার নাম ব্যবহার করায় তিনি নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কারণে তিনি ইতিমধ্যে অনেক মামলার আসামিও হয়েছেন। এসব করে তার সঙ্গে মাহমুদুর রহমান বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। প্রতারণামূলকভাবে তার নাম ব্যবহার করায় তার মানহানিও ঘটছে। মাহমুদুর রহমানের সংবাদ সম্মেলন : দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বর্তমান সরকার তার ফ্যাসিবাদী আচরণের মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করছে।

ইতিমধ্যে তারা দুটি টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে। এখন দৈনিক আমার দেশ বন্ধের পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৪টি সংবাদপত্র রেখে বাকি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তখন সাংবাদিকরা অনেকেই আÍহত্যা করেছিলেন। অনেকে মুদি দোকান দেন, কেউ কেউ হকারি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার দেশ পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধের উদ্দেশেই প্রকাশককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি দলমত নির্বিশেষে সব সংবাদ মাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের এই হীন চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনের সময় পত্রিকাটির সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। মাহমুদুর রহমান বলেন, তাকে গ্রেফতারের ষড়যন্ত্র চলছে। মঙ্গলবার আমার দেশের প্রকাশক আলহাজ হাসমত আলীকে এনএসআই গোয়েন্দারা বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত ৫ ঘণ্টা তাকে এনএসআই অফিসে বসিয়ে রাখে।

গোয়েন্দারা তাকে দুটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে চাপ দেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি স্বাক্ষর করেননি, ততক্ষণ তাকে বসিয়ে রাখা হয়। পরে হাসমত আলী দুটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান। আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বলেন, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার অনেক সংবাদই সরকারের অনুকূলে যাচ্ছে না এবং তাদের জন্য সুখকর হচ্ছে না। তাই আমি এখন ৩১টি মামলায় আসামি।

তার জের ধরে গ্রেফতারের জন্য অপেক্ষা করছি। ১/১১-এর জরুরি সরকারের সময় যেভাবে বিভিন্ন জনকে উঠিয়ে নিয়ে কাগজে সই করতে বাধ্য করা হতো, এখনও ঠিক তাই করা হয়েছে। আটক অবস্থায় তিনি আমার দেশের একজন সিনিয়র সাংবাদিককে স্বাক্ষর নেয়ার কথা জানিয়েছেন। স্বাক্ষরিত কাগজের একটি ঢাকার জেলা প্রশাসককে ও অপরটি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসিকে সম্বোধন করা। ওই কাগজে লেখা রয়েছে, ‘তিনি আমার দেশের প্রকাশক নন।

তার নাম ছাপা হওয়ায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ’ তিনি অতি দুর্দিনে এ পত্রিকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এ পত্রিকার দায়িত্বভার গ্রহণের সময় ৪০০ সংবাদকর্মী প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছিলেন না। তখন সাংবাদিকদের অনুরোধেই তিনি এ পত্রিকার দায়িত্ব নেন। এর আগে সম্পাদক হিসেবে তার কোন পরিচয় ছিল না।

তিনি ছিলেন একজন কলাম লেখক। তিনি বলেন, রাতে ডিজিএফআই বৈঠক করেছে। দিনের বেলায় এনএসআই প্রকাশককে তুলে নিয়েছে। আমার ভয়-ডর একটু কম। আমি কাউকে ভয় পাই না।

মাহমুদুর রহমান নথিপত্র তুলে ধরে জানান, ২০০৯ সালের ২৬ এপ্রিল ঢাকার জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়ে আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেড কোম্পানির বোর্ড অব ডাইরেক্টরসের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক নিযুক্ত হয়ে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৬ জুন বিশেষ পুলিশ সুপার অনাপত্তি পত্র দেন। ৩ সেপ্টেম্বর ছাপাখানার রক্ষক ও মুদ্রাকরের নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা হয়। এতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে জানানো হয়, ‘আমি মাহমুদুর রহমান আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেড নামক ছাপাখানার রক্ষক ও মুদ্রাকর নিযুক্ত হয়েছি। ’ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঢাকার ১৯৭৩ সালের ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ডিক্লারেশন ও রেজিস্ট্রেশন) আইনের ৪(২) মোতাবেক ছাপাখানার ঘোষণাপত্র দেয়া হয়।

৩ সেপ্টেম্বর আমার দেশের প্রকাশকের নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা হয়। ৫ নভেম্বর দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের ছাড়পত্র দেয়া হয়। এরপরও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অনুমোদন দেয়া হয়নি। বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেও সেটা নিতে পারিনি। বলা হয়েছে ফাইলটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছে।

দেলোয়ারের নিন্দা : দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশক হাসমত আলীকে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা ধরে নিয়ে নানারকম ভয়ভীতি দেখানোর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, আমার দেশ পত্রিকা বন্ধে সরকার নানা চক্রান্ত চালাচ্ছে। হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সরকার এসব করছে। তিনি বলেন, ভিন্নমতাবলম্বী যেকোন ব্যবসায়ী, রাজনৈত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।