হাম হাম সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কমলগঞ্জ থানার এক পাহাড়ি আকাবাকা নদী পেরিয়ে এক অপরুপ ঝরনা । । ।
যতটা অপরুপ তার থেকেও কয়েক হাজার গুন কঠিন সেখানে যাওয়া। ।
। আপনার মস্তিষ্ক যতটা কঠিন ভাবতে পারে এটা তার থেকেও অনেক অনেক কঠিন । আপনি যদি ভেবে থাকেন জীবনে অনেক কিছু দেখে ফেলেছেন অথবা জীবন কি তা খুব ভালো ভাবে জানেন বা ডিসকভারীর ম্যান ভারসেস ওয়াইল্ড দেখে অনেক কিছু শিখে ফেলেছেন তবে বলবো একবার হাম হাম ঘুরে আসুন বুজতে পারবেন আপনার জানা ও বোঝার সবে শুরু । । হাম হাম নিয়ে আমার এবং আমার বন্ধুদের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি ।
হাম হাম যাবার জন্য আমরা সাত বন্ধু সিলেট থেকে খুব ভোরে শ্রীমঙ্গলের ট্রেনে উঠে রওনা দিই। এবং যথারীতি সেই বৃষ্টির শহরে তুমূল বৃষ্টির মধ্যে পৌছে যায় । ।
তারপর লোকজনের কাছে শুনে একটি সি এন জি ৬০০ টাকায় ঠিক করে ফেলি । ।
। তখনও কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি যে আমরা জীবনের কতটা ঝুকি নিচ্ছি ???????
আড্ডা গল্প করতে করতে পাহাড়ী রাস্তায় আকা বাকা পথে সি এন জি নিয়ে আগাচ্ছিলাম আর বার বার ড্রাইভার মামাকে বলছিলাম মামা কত কত দুর????উনি সামনে সামনে বলতে বলতে প্রাই ২ ঘন্টার ও পরে যতদূর সি এন জি যায় তত দূর পৌছে দিলেন । ।
নেমে দেখি তুমূল বর্ষন। ।
শুরুতে ভেবেছিলাম কোন গাইড লাগবে না , , , তবুও মামা একজন গাইড দিয়ে দিলেন । । ।
৪০০ টাকার বিনিময়ে যিনি যেতে রাজি হয়েছিলেন, , ,
মোবাইল মানিব্যাগ যা ছিল সব পলিথিনে মুড়ে ব্যাগে রেখে হাটা ধরলাম । ।
। । মাথায় পলিথিন ও বেধে নিয়েছিলাম । । ।
। শুরুতে পাহাড়ি চা বাগানের ভিতর দিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে হাটছিলাম আর মানুষ জন আমাদের অবাক হয়ে দেখছিল হয়তবা পাগল ভাবছিল কারন এরকম প্রতিকূল পরিবেশে বৃষ্টির ভেতর কেউ যায় নাকি???????
শীঘই চা বাগান শেষ হয়ে গিয়েছিল তারপর শুরু হয়েছিল দুরগম পথ । । । বুনো গাছপালা আর শরু রাস্তা পিচ্ছিল কাদা মাখা ।
। । । । অল্প আলো আর ভেজা রাস্তা।
। । ।
এভাবেই চললো কিছু সময় । ।
। ততক্ষনে সবাই আমরা একটা করে বাশের খুটি ম্যানেজ করে নিয়েছিলাম । । । খুব তাড়াতাড়ি একটা নদী অথাবা পাহাড়ি খাল ও নদীও হতে পারে এসে গিয়েছিল ।
। । পার হলাম । । ।
এই এক নদী যে আমরা কতবার পার হয়েছি জানি না । । পার হয়ে একবার এপারে আরেকবার অপারে কোথাও বুক পানি কোথ কোমর কোথাও গলা পানি। । ।
। দ্বিতীয়বার পানি থেকে উঠে হঠাত আমার পায়ে চোখ যায় আমার দেখি । । । আগে থেকেই জেনেছিলাম এখানে প্রচুর জোক আছে , , , , ভালো করে দেখি পায়ে কাল কি যেন লেগে আছে নিচু হয়ে দেখি জোক ।
। । সবাই দাঁড়ায় গেল। । ।
জোক কি ভায়ানক কামড়ে আছে তো আছেই । । কিছুইতেই সরানো যায় না । । অনেক কষ্টে ছাড়ালাম ততক্ষনে পিছনে তাকায় দেখি আমার বাকি বন্ধুরাও জোক ছাড়াতে ব্যাস্ত , , , কেঊ ভয়ে চিৎকার ও করেছিল ।
। । মুহূর্তে জোকের প্যানিক ছড়িয়ে গেল সবার মাঝে । । ।
। শরু পথ ধরে আবারো হাটা শুরু করলাম । । । দশ সেকেন্ড পর পর পায়ে খেয়াল করছিলাম আর জোক সরাচ্ছিলাম ।
। । বার বার বার অই একি নদীতে নামছিলাম উঠে জোক পরীক্ষা করছিলাম । । ।
আর ক্লান্তিহীন ভাবে হাটছিলাম । । । কোথাও বড় বড় পাথরের মাঝ দিয়ে তীব্র নদীর স্রোতে কোথাও পাহাড় ধরে শরু বাশের উপর দিয়ে হাটছিলাম। ।
। একটু পিছলে গেলে মরার ভয় ছিল। । । ।
মামা বার বার সামনে সামনে বলে নিয়ে যাচ্ছিল । । । । কোথাও ঘন জঙ্গল ।
। এভাবে নদী জঙ্গল জোক বৃষ্টি পেরিয়ে আগাচ্ছিলাম , , , ,আর জোক মজা করে রক্ত নিচ্ছিল । । । ।
বার বার মনে হচ্ছিল । ফিরে যায় কিন্তু অনযদের দিকে তাকিয়ে আমি তা বলতে পারিনি । । । খুব ভয় হচ্ছিল মনে হচ্ছিল বেচে ফিরে আসতে পারবো না ।
। । নিরজন নদী ধরে হাটতে হাটতে প্রায় তিন ঘন্টা পর হাম হাম নামক অই ঝরনা দেখে । । ।
সবাই জামা কাপর খুলে দেখে নিচ্ছিল জোক আচে কিনা। । । হাম হাম ঝরনা এত সুন্দর আমি লিখে বোঝাতে পারব না । ।
। । পানির পতনের শব্দ । । ।
। কয়েক বন্ধু নেমে গেল পানিতে গসলের উদ্দেশ্যে । । । একজ শুধু উঠেছিল প্রায় ২০০ ফুট উপরে যেখান থেকে পানি পড়ে।
। । । কিছু ফটো তুলেছিলাম। ।
। মাত্র ১০ - ১৫ মিনিট ছিলাম । । । ।
তারপর ফেরার পালা অই পথে আর না এবার আমরা ফিরে ছিলাম পাহাড় হয়ে। । । । কি খাড়া আর উচু পাহাড় ।
। । আর কদায় ভেজা । । ।
। উঠতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। । । ।
বার বার মনে হচ্ছিল ফিরে আসতে পারব না। । । শুধু হাটছিলাম আর ভাবছিলাম । ।
। । কখন ফিরবো। । ।
আমার এক বন্ধু খুব খুব বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম তাকে নিয়ে আমরা অনেক ভয় অএয়ে গিয়ে ছিলাম। । । । তার হার্ট বিট অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
। । ।
আর একটু পর পর জোক ছারানো। ।
। উচু পাহাড়ে উঠতে থাকি ত থকি শেষ আর হয় না । । । ।
। । উঠি নামি আর উঠি নামি । । ।
। মামা বার বার তাগেদা দিচ্ছিল , , একবার যদি অখনে অন্ধকার হয় বিপদের শেষ থাকবে না, , , , আর আমরা ভয় পাচ্ছিলাম যদি মামার কিছু হয় বা পথ ভুল করে তাইলে ত আমরা সব গুলা শেষ । । । ।
এভাবে যে কত গুলা পাহাড় পেরিয়েছি মনে নেই। । । । তারপ্র আবারো সেই নদী তবে এবার নদীর উপর সাকো ছিল।
। । কিন্তু তার অবস্থা বিশেষ ভালো ছিল না । । ।
একটু ভুল হলেই জকের নদীতে। । এভাবে ৬ থেকে ৭ টা ব্রীজ পার হলাম। । ।
তবে আসার সময় তুলনা মূলক ভাবে কম জোকে কেটেছে। । । একসময় কয়েকজন মানুষ কে দেখলাম, , ,তাদের দেখে এতটাই ভালো লেগেছিল । ।
। । মনে হচ্ছিল এই তো ফিরে যেতে পারব। । ।
। একসময় পাহাড় শেষ হল। । । এবার এক লকালয়ে এক চায়ের দোকানে এসে আমরা সবাই খুব ভালো করে জক পরীক্ষা করলাম।
। । লজ্জ্বা খানিকটা বিসর্জন দিয়ে। । ।
তারপর চা খেয়ে আবার রওনা হলাম। । । থখন দেখি আমার এক বন্ধুরে একটা জোক তখন ও কামড়ে আছে সুতার মত জোক রক্ত খেয়ে আঙ্গুলের মত মোটা হয়েছিল। ।
। । মেরে ফ্রেশ কোনরকম হয়ে আবার হাটতে শুরু করেছিলাম। । ।
তখন একদমই ভয় করছিল না , , কেননা লোকালয়ে পৌছে গিয়েছিলাম । । । । এভাবেই আর দেড় ঘন্টা হাটার পর সেই বাজারে আসলাম যেখান থেকে রওনা হয়েছিলাম।
। । দেখি আমাদের সি এন জির মামা আছেন। । তিনি সহ পুরো গ্রামের মানুষ ভয় পেয়েছিল কারন এমন পরিবেশে কেউ তো যায় না আর সেখান থেকে ফিরে আসা টাও খুব কঠিন ছিল ।
। । বাজারে এসে কোনরকম খেয়ে সি এন জিতে রওনা হলাম শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে আসার আগে অই গাইড মামা কে ৪০০ টাকার জায়গায় ৫০০ দিয়েছিলাম। । ।
তারপ্র চলতে শুরু করছিল সি এন জি একদম ফাকা গ্রামের রাস্তা ধরে । । । মামা বার বার বলছিল যায়গাটা ভালো না খুব ডাকাতি হয়। ।
। আমার খুব ভয় করছিল। । । ।
। প্রায় ২ ঘন্টারও পর পৌছালাম শ্রীমঙ্গল । । । মাঝখানে অন্তত ১০০ বার সি এন জির স্টাট বন্ধ হয়েছিল।
। । তখনও খুব জোকের ভয় করছিল। । ।
। আমাদের সিলেট ফিরতে হবে। । । ।
পুরা শরীর কাপড় ভেজা ছিল । । । ভেজা কাপর শুকিয়ে আবার ভিজেছিল। ।
। সিলেট যাওয়ার কোনকিছু পাচ্ছিলাম না । । তাই বাস ধরে গেলাম মৌলভীবাজার। ।
। সেখানে গিয়েও সিলেট যাবার মত কিছু পেলাম না রাত অনেক হয়ে যাচ্ছিল। । । এর মধ্যে আমার এক বন্ধু দেখে তার হাতে একটা জোক।
। খুব ভয় লাগছিল। । । শুধু মনে হচ্ছি ব্যাগের মদ্ধে জোক আছে।
। । তারপর আবার সি এন জি নিয়ে গেলাম শেরপুর শুনলাম অখানে সিলেটের বাস পাব । । ।
। ভেজা কাপড়ে গেলাম শেরপুর। । । বাস পেলাম না ভাগ্য ভালো ছিল , , , একটা ট্রাক কে হাত দেখাতেই থামল কথা বলে উঠলাম।
। । বাতাসে ভেজা কাপড়ে ট্রাকের ডালায় প্রায় জমে যাচ্ছিলাম। । ।
আমাদের কে খুব পাট নিয়ে একটা বাস ওভারটেক কএছিল কিছু সময় পর দেখলাম এক্সিডেন্ট করে পড়ে আছে। । । যাক ট্রাক আমাদের সিলেট বাইপাসে নামায়ে দিল। ।
। ।
অখান থেকে আবারো সি এন জি নিয়ে সরাসরি মদিনা মারকেট । । ।
সি এন জি তো যাবেই না , , উনাকে রক্ত দেখাই রাজি করাইছিলাম। । । । রাত ২ টা বাজে মদিনা মারকেটে নেমে খাওয়া দাওয়া করে বাসায় ফিরে গরম পানি দিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়েছিলাম, , , , ,আর বার জোক চেক করছিলাম।
। । । ।
জীবন কি জিনিষ সেইদিন বুঝেছিলাম।
। । আজো ভাবি কই গিয়েছিলাম। । ।
পরে জানতে পারি অইখানে নাকি প্রচুর ভল্লুক ছিল। । । মামা আমদের বলে নি বললে হয়তবা অনেক ভয় পেতাম। ।
। প্রায় ৭ ঘন্টা হেটে জীবনে যা অরজন করেছি তা সত্যিই অনেক কিছু। । । ।
হয়তবা আর কোন্দিন সেখানে যাব না । । । । কিন্তু এই চোখ যা দেখেছে কোন দিনই সে তা ভুলবে না।
। । । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।