আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১০০% নিশ্চয়তার গায়েবি চিকিৎসা। এখবরটা পড়তে ভুলবেন না।

সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে,

১০০% নিশ্চয়তার গায়েবি চিকিৎসা! শতভাগ গ্যারান্টির এই চিকিৎসায় রোগীকে চিকিৎসকের মুখোমুখি হতে হয় না। করতে হয় না কোনও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাও। প্রয়োজন কেবল সঠিক সিদ্ধান্তের। কী চাই আপনার? স্লিম হবেন? নাকি বানাতে চান সুন্দর স্বাস্থ্য? চান কি হতে নায়িকা ঐশ্বরিয়ার মতো অপরূপ সুন্দরী! অথবা হতে চান সালমানের মতো হ্যন্ডসাম পুরুষ। অথবা চাইকি খানিকটা লম্বা হতে।

সব কিছু করে দিতে পারে এই ১০০ ভাগ গ্যারান্টির অব্যর্থ চিকিৎসা। রাতারাতি টাক মাথায় গজিয়ে যেতে পারে ঘন কালো চুল। পেতে পারেন সব রকম জটিল শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি। উপায়, জলবৎ তরলংÑ নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে ১০০ টাকার ফ্লেক্সিলোড করে রেজিস্ট্রেশন করলেই নির্ধারিত নম্বরে বা জায়গায় যোগাযোগ সরাসরি বা ডাকযোগে হাতের নাগালে পৌঁছে যাবে ওষুধ। নির্ধারিত ফি’র টাকা হাতবদল মানেই সব সমাধান।

এসব গায়েবী নয়তো কীঃ সরেজমিন রিপোর্টে জানাচ্ছেন কাওসার সোহেলী ও সাদিকুল নিয়োগী পন্নী মডেল হওয়ার জন্য মাস্ল চাই। সম্পূর্ণ সুস্থ ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার হাসান প্রথমে মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে থাকে ৩ মাস। কিন্তু হাসানের চাই চটজলদি পেশীবহুল শরীর। রাতারাতি ‘হি ম্যান’ হওয়া। পথ দেখালো মতিঝিল শাপলা চত্বরের মোড়ে সিটি বাসে ছুড়ে মারা মহিলার কাগজের ঠিকানাÑ মেরুল বাড্ডার নূরী ইউনানী দাওয়াখানা।

ঠিক যেন হাসানের মনের কথাই লেখা সেখানে, ‘আপনি কি স্থায়ী মোটা বা স্বাস্থ্যবান হতে চান। গালমুখ কঙ্কালের মতো ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে? মনে করেন কোনও দিন স্বাস্থ্যবান হতে পারবেন না তারা ১০০% ভেষজ মেডিসিন সেবনে দ্রুত মোটা ও স্থায়ী স্বাস্থ্যবান হউন। পার্শ^ প্রতিক্রিয়ামুক্ত ইউনানী চিকিৎসা। ’ দাওয়াখানার ডাক্তার হাকীম মোঃ শহীদুল্লাহ ৭শ’ টাকার বিনিময়ে একটি ফাইল ধরিয়ে দিলেন। যদিও বিজ্ঞাপনের চিরকুটে মূল্য লেখা ছিল ‘বড় ফাইল-৫৫০ টাকা, ছোট ফাইল-৩০০ টাকা।

’ ২৫০ টাকা বেশি রাখার কারণ হিসেবে বললেন, ‘এইটা মাশাল্লাহ ১৫ দিনেই ডাইরেক্ট অ্যাকশন। বডি একেবারে কুস্তিগীর হবে ইনশাল্লাহ। ’ হাকিমের নির্দেশমতো ‘বডি কুস্তিগীর বানানোর বিশেষ ইউনানী ওষুধ’ খাওয়া শেষ পর ১৫ দিন পর আবার গেল দাওয়াখানায়। হাকিম সাহেবের উত্তর ওষুধ সেবনে কোনও গড়মিল হয়েছিল। যেহেতু একটা ডোজ নিয়েছে কিন্তু ভুল পন্থায় খাওয়ায় ‘অষুধ মিসটেক’ হয়ে গেছে।

তাই নতুন প্রেসক্রিপশনে হাকীম সাহেব ১২শ’ টাকার আরেকটি ‘স্পেশাল বড় ফাইল’ ধরিয়ে দিলেন। একমাস ওষুধ সেবন শেষ না হতেই দেখা দিল নতুন বিপত্তি। প্রথমদিকে হাসানের খাদ্যে রুচি ও ক্ষুধা বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুণ বেশি। পরের ফাইল খাওয়ার পর থেকে শুরু হল পেটের গণ্ডগোল। একপর্যায়ে ক্ষুধামন্দা ও অস্বাভাবিক দ্রুত হল শ্বাসপ্রশাস।

গায়ে কিছুটা মাংস লাগলেও পেশির কোনও দেখা মিলল না শরীরে। হাসান আবার মেডিসিন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলে তিনি বললেন, এসব ওষুধ সেবনের ফলে তার পাকস্থলিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সুস্থ হতে হাসানের গচ্চা গেল কয়েক হাজার টাকা। চোয়াল ভেঙে বসে গেছে চাপা। চোখে পড়েছে কালসিটে।

লাভের মধ্যে সঙ্গী হয়েছে ছোটখাটো একটি ভুঁড়িঃ তিতুমীর কলেজশিক্ষার্থী মিরপুর শ্যাওড়াপাড়ার শিমুলীরও নেশা অভিনেত্রী হওয়ার। বাধ সাধছে ৪ ফুট ৬ ইঞ্চির উচ্চতা। কলেজ যাতায়াতের পথেই চোখ আটকালো ঝলমলে বিজ্ঞাপনে লম্বা হউন। মাত্র ৩ সপ্তাহেঃ! নিয়মিত জিমে গিয়ে ৬ মাসেও আধা ইঞ্চি লম্বা হতে পারেনি সে। আর এখানে মাত্র ৩ সপ্তাহে! সাইনবোর্ডের থেকে নেয়া যোগাযোগের নম্বরÑ ০১৭২০৪৫৬৭৭১-য় ফোন করে এবার যেন হাতে চাঁদ পেল শিমুলী।

চিকিৎসক তাকে না দেখে ‘স্রেফ লম্বা হতে চাই’ শুনেই বলে দিলেন শিমুলীর দরকার তিনটি ফাইল ওষুধ খেলেই লম্বা হবে সে। তাছাড়া রঙ ফর্সা করে এমন একটি বিশেষ ফাইল আছে, যা সরাসরি জার্মান থেকে আনা হারবাল উপাদানে তৈরি। মাত্র কয়েক দিনে আরও ফর্সা হয়ে যাবে শিমুলী। এজন্য কষ্ট করে শিমুলীকে শনিরআখড়ায় তাদের অফিস অ্যারাবিয়ান হারবালে আসতে হবে না, ওষুধই চলে যাবে শিমুলীর কাছে। মোবাইলে ১০০ টাকা ফ্লেক্সিলোড করে রেজিস্ট্রেশন করার ৩ দিনের মাথায় পার্সেলযোগে ওষুধ এল।

হাতে হাতে প্রথম শিমুলী দিয়ে দিলেন ওষুধের প্রথম ২ ফাইলের দাম-২৪শ’ টাকা। ক্রিমের দাম দিলেন সাড়ে ৮শ’ টাকা। মহা উৎসাহে ক্রীম ব্যবহারের ৩ তিন দিনের মাথায় মুখে কালো কালো ছোপ পড়ল বেচারির। এর মধ্যে শুরু হল তীব্র ক্ষুধামন্দা ও পেটের গণ্ডগোল, ভালো জায়গাগুলো চুলকিয়ে ফুলে ওঠা শুরু করলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেল সে। চিকিৎসক জানালেন, ওই ফর্সাকারী ক্রীম ব্যবহারের ফলে ফাঙ্গাস অ্যাটাক হয়েছে ত্বকে।

অ্যারাবিয়ান হারবাল থেকে বলা হল, ওষুধ ব্যবহারে গরমিল করায় এটা হয়েছে। আর শিমুলীর নিশ্চয়ই অ্যালার্জি আছে, যা তাদের না বলায় তারা অ্যালার্জি ফ্রি ওষুধ দেয়নি। চাইলে তারা সে ওষুধও দিতে পারে। তবে রেটটা একটু বেশি পড়বে। মালিবাগ রেলগেটের পাশেই হার্বাল সেবা কেন্দ্রে লম্বা হতে চাইলে দিচ্ছে অভিনব এক ওষুধÑ একটি লোশন যা তাকে প্রতিদিন পায়ের পাতায় দিতে হবে।

ট্যাবলেটের পাতা। এজন্য খরচ করতে হবে ২ হাজার টাকা। নিয়মিত এ চিকিৎসা চালিয়ে গেলে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি লম্বা ‘হতেই হবে’। ফর্সা হওয়ার জন্য ৩৩, কাওরান বাজার, হাফিজিয়া ম্যানশনের জেনুইন হার্বাল বেশ সচেতন। মাত্র ১০০ টাকায় রোগীর ত্বক পরীক্ষা করে তবেই তারা ফর্সা হওয়ার ওষুধ দেন।

প্রথম ফাইল ১২শ’ টাকা। প্রয়োজনে সঙ্গে দেন বিশেষ ক্রিম। চিটাগাংয়ের দেওয়ানহাট মোড়ের আজমা কমপ্লেক্সের ইবনেসিনা হার্বাল সেন্টার লিমিটেড লম্বা, মোটা, ফর্সা যাই হতে চান তার ওষুধ আছে। নিয়মনীতিও খুবই সরল। বাংলাদের যে কোনও প্রান্ত থেকে তাদের ওষুধ পাওয়া সম্ভব।

এজন্য প্রথমে বিজ্ঞাপনে দেওয়া ৩২০৮০৩২৫ নম্বরে টাকার ফ্লেক্সিলোড করতে হবে। পরে ফোন করে ঠিকানা জানালে সে অনুযায়ী এসএ পরিবহনের মাধ্যমে ওষুধ পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সার্ভিস চার্জসহ প্রতি কোর্সের দাম পড়বে মাত্র ১ হাজার টাকা। ০১৭৩২০৮০৩২৫ নম্বরে রোববার সাড়ে ৩টার দিকে ফোন করলে এর পরিচালক জানান, কোনও অভিযোগ থাকলে বা ভুয়া হলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কি ব্যবসা করা যেত? ফ্লেক্সিলোড কেন করতে হয় কারণ এসএ পরিবহনে পার্সেল করার টাকাটা কে দেবে?’ এছাড়াও ফার্মগেটের ৪০, কমিশনার মার্কেটের দেশ হার্বাল, তাঁতীবাজার মোড়ের মাদ্রাজ হারবাল, উত্তর জুরাইন পাইপ রাস্তার বিজয় ইউনানী দাওয়াখানা মেদভুঁড়ি কমানোর জন্য বিশেষ ওষুধ দিয়ে থাকে। দরদাম প্রতিফাইল হাজার ১২শ’ থেকে শুরু হবেঃ গায়েবি চিকিৎসার রমরমা বাণিজ্য মাথায় চুল গজাতে গিয়ে বা ফর্সা হতে গিয়ে অনেকেই ত্বক ক্যান্সারের মুখোমখিও হতে পারেন আশংকা করে বাংলাদেশ মেডিকেলের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সিরাজুল হক বললেন, ‘চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমন কোনও মেডিসিন নেই।

এসবই প্রতারণার জন্য প্রচারনা। ’ জাতীয় হƒদরোগ ইন্সটিটিউটের মেডিসিন ও হƒদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রহমাতুল বারী জানান, ‘এসব চিকিৎসা আদৌ কতটুকু চিকিৎসার পর্যায়ে পরে তা বিবেচ্য সবার আগে। কেননা কাউকে ডায়াগনসিস না করে মুখে শুনে চিকিৎসা করা চিকিৎসা বিজ্ঞান বহির্ভূত আচরণ। তাছাড়া যে কোনও ওষুধেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে। হারবাল বলছে কিভাবে নিশ্চিত হবে রোগী এটা হারবাল উপাদানে তৈরি।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগী যে কোনও সমস্যা থেকে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ’ আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এমন চিকিৎসার নামে প্রতিদিনই ঘটছে বিভিন্ন প্রতারণার ঘটনা। বিভিন্ন পত্রিকায় তাদের বিজ্ঞাপন দেয়ার পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার ও ফেস্টুন টানিয়ে রেখেছে। প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা বাসে নিয়মিত তাদের লিফলেটও বিতরণ করছে। সবই চলছে চোখের সামনে।

প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। হয়তো সবাই প্রতারণার ঘটনা ঘটাচ্ছে না। কিন্তু প্রচারণা ও বিজ্ঞাপনের ভাষা যখন একই হচ্ছে, প্রতারক চক্রের কারণে আদৌ যদি এটি একটি শিল্প হয়ে থাকে তবে পুরো শিল্পটির ওপরই হুমকি আসছে। কিন্তু এসব কোনও কিছুই যেন চোখে পড়ছে না প্রশাসনের। যদিও রীতিমতো ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চিকিৎসার নামে ব্যবসা চলছে, তথাপি প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, এসব দেখার এখতিয়ার তাদের নয়।

তাহলে প্রশ্ন রাষ্ট্র ও প্রশাসনের মধ্য থেকে যখন এই প্রতারণা ঘটছে তাহলে এদের দেখতে কী পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের আইন প্রশাসন আসবে? ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকটির দায় কে নেবে? যুগান্তর)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।