সৌম্য আবাক হয়ে প্রায় এক মিনিট চেয়ে থাকে দশ বছর পর বসুন্ধরা সিটির সামনে দেখা হওয়া নীলিমার দিকে। চিনতে কষ্টই হয়না সামনে দাড়িয়ে স্বয়ং নীলিমা। পুরনো অভিমানে ভরে ওঠে বুক। কেন সে আগে কথা বলবে ? তাইতো অবারও হাটতে শুরু করে সৌম্য। নিজেকে সামলে নিয়ে পেছন থেকে ডাকতে থাকে নীলিমা
সৌম্য যেওনা দাড়াও
তাহলে চিনতে পেরেছ?
এভাবে কথা বলোনা সৌম্য, পি¬জ।
নীলিমার অধিকার মিশ্রিত এহেন অনুরোধে অভিমান তুচ্ছ হয়। আবেগ প্রবন হয়ে সৌম্য জিজ্ঞাসা করে।
কেমন আছ নীলিমা ?
ভাল। সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয় নীলিমা।
সেরকমইতো কথা ছিলো তাইনা? তো বলো ঢাকা কবে আসলে ?
আজই, উত্তর দেয় নীলিমা।
চলো কোথাও গিয়ে বসে কথা বলি।
নীলিমার প্রস্তাবের মৌন সম্মতি দেয় সৌম্য। টেক্সিতে করে তারা সোজা চলে যায় টি এস সি তে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যেটি ছিলো দু‘জনেরই সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। অনেকক্ষন চুপ থাকার পর নিরবতা ভাঙ্গে নীলিমা।
কিছু বলছনা যে ?
কি বলব ?
তুমি কি করছ আর তোমার পরিবারের কথা বলো ।
আমি একটি সরকারী কলেজে অধ্যাপনা সহ ছোট একটা ব্যবসা দাড় করিয়েছি, যা নিয়ে আমার সময় কাটে। আর পরিবার বলতে তো এখনো মা-বাবা আর ভাই-বোন কেই বুঝি। তবে তার কেউই বেঁচে নেই। আছে কেবল আমার একমাত্র সন্তান নীলয়।
নীলয় নামটি শোনার সাথে সাথে বুকটা কেঁপে ওঠে নীলিমার। নীলিমার মনে পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় একদিন এই টি.এস.সিতে বসেই ঠিক করেছিল ঘর বাঁধবে, সন্তান ছেলে হলে নাম রাখবে নীলয়। আর মেয়ে হলে নাম রাখবে সুস্মিতা।
নীলিমা আবার বলে, তোমার বৌ এর খবর বলো।
আমিতো আগেই বলেছি, পরিবার বলতে এখনো মা-বাব,ভাই-বোনকেই বুঝি।
তার মানে, তুমি বিয়ে করনি ? তবে যে নীলয়ের কথা বললে।
ওকে দত্তক নিয়েছি। আমার কথাতো সবই শুনলে, এবার তোমার কথা বলো। তোমার শাহেদের খবর কি ?
ওই লোফারটার কথা আর বলো না। ও আমাকে ঠকিয়েছে, ব্যবসার নামে সারাদিন বাইরে থাকে, রাতে ক্লাবে যায়, পরনারী ছাড়া ওর ঘুম হয়না।
জানো, আমাদের বিয়ের পর মাত্র কয়েকটি দিন আমরা এক সাথে ছিলাম। এখন ও আমার পাশের রুমে বাইরের মেয়ে এনে ফুর্তি করে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখি। আম্মু কতোবার বলেছে ওকে ডিভোর্সদে, কিন্তু কার কাছে গিয়ে দাড়াব ? বিয়েতো করেছি নিজের ইচ্ছায়। ওকে কতোবার বলেছি আমাকে এড়িয়ে চলছো তাতে কোন দুঃখ নেই, অন্তত একটি সন্তান উপহার দাও আমাকে। তাহলে কিছুটা শান্তিতে থাকতে পারি আমি।
ও তাতেও রাজি হয়না বরং এসব নিয়ে কথা বললেই আমাকে মারধর করে। মাঝে মাঝে মনে হয় আত্মহত্যা করি।
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে নীলিমা। ওর দু’গন্ড বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ে, এই সন্ধ্যার অন্ধকারেও তা স্পষ্ট দেখতে পাই সৌম্য। সৌম্যর ইচ্ছে হয় বলতে, তুমি সেই নীলিমা যে একদিন যে কোন কিছুর বিনিময়ে যে কোন অবস্থায় আমার সাথে থাকতে রাজি ছিলে।
অথচ কিছুদিন না যেতেই তোমার চাহুনি গেলো পাল্টে। তুমি নজর দিলে উপরতলার মানুষের দিকে। প্রত্যাখ্যান করলে আমাকে, সুখী হতে চেয়েছিলে টাকাওয়ালা মানুষের হাত ধরে, এখন দেখেছো কতো সুখ ? কিন্তু নীলিমার চোখের পানি সৌম্যর কণ্ঠ চেপে ধরে। এমন সময় নীলিমার মোবাইল বেজে ওঠে। কথা শেষে নীলিমা বলে
আম্মু ফোন করেছে কালই আমাকে চট্টগ্রাম যেতে হবে।
জানিনা জীবনে আর কোন দিন আর দেখা হবে কিনা, এই আমার কার্ডটা রাখ। যদি কখনও সময় হয়, আমাকে মনে পড়ে তবে যোগাযোগ করো।
এ কথা বলেই নীলিমা হাটতে শুরু করে। নীলিমার চলে যাওয়া অন্ধকারচ্ছন্ন পথের দিকে চেয়ে থাকে সৌম্য। সৌম্যর ইচ্ছা হয় দৌড়ে গিয়ে নীলিমার হাত দুটি ধরে বলতে, “ঐ পাষান্ডের ঘরে আর ফিরে যেওনা।
আমার হাত ধর, আমি সব অন্ধকারচ্ছন্ন অতীতকে মুছে দেব। ” কিন্তু নীলিমা ততক্ষনে অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।