আমাদের দুই নেত্রীকেই এই দেশের জনগন কতটা নি:স্বার্থভাবে একতরফাভাবে শুধু দিয়েই যাচ্ছে, - তা কি আমাদের নেত্রীগন কখনও ভেবে দেখেছে ? সেই ৯০এর গনঅভ্যুথানে স্বৈরাচারের পতনের পর থেকে আজ অবধি উনাদের দুইজনকেই এদেশের জনগন পালাক্রমে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ লোকই তাদের প্রতি অবিচল বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের সকল কর্মকান্ডকে বিনা বাক্যে মেনে নিচ্ছে। তারা যদি সঠিক কাজ করেন তাহলে যেমন জনগন তাদের প্রতি সমর্থনদান অব্যাহত রাখছে, তেমনি খারাপ কাজ করলেও জনগনের সমর্থন তাদের প্রতি অটুট থাকছে।
কিন্ত কি কারনে, কিসের আশায় তাদের প্রতি জনগনের এই নি:শর্ত সমর্থন, তা কি তারা কখনও জানার চেষ্টা করেছেন? কি উদ্দেশ্যে এই দেশের ৩০ লাখ লোক স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিল এবং সম্ভ্রম হারালো আমাদের দুই লক্ষ মা-বোন? জনগনের এই সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার কি শুধুই দুইনেত্রীকে ক্ষমতার মসনদে বসানোর জন্য? জনগনের এই ত্যাগ স্বীকারের পিছনে কি ছিল না কোন কিছু পাওয়ার আশা? একবারও কি তারা গভীরভাবে চিন্তা করে ভেবে দেখেছে যে, যেই জনগন এতো বড় ত্যাগের বিনিময়ে দেশটা স্বাধীন করলো, যারা দুইনেত্রীকে বার বার ক্ষমতার মসনদে বসালো, সেই জনগনের আশা-আকাংখ্যার কতটুকু তারা পূরণ করতে পেরেছে ? আদৌ কি পেরেছে এদেশের জনগনের নূ্ন্যতম আকাংখার প্রতিফলন ঘটাতে? কিন্ত কত দিন আর এইভাবে জনগন তাদের প্রতি এই অন্ধ সমর্থন, অকুন্ঠ ভালবাসা শুধু নি:স্বার্থভাবে বিলিয়ে যাবে? জনগনের এই নি:স্বার্থ ভালবাসার কোন প্রতিদান দেওয়ার কি কোন প্রয়োজনীয়তা তারা অনুভব করে না? এখনও কি সময় হয় নাই জনগনের ভালবাসার প্রতিদানে জনগনের জন্য এমন কিছু করার, যার প্রত্যাশায় এতোকাল যাবৎ তারা দুই নেত্রীর পানে চেয়ে আছে? দুই নেত্রীর প্রতি জনগনের একতরফা ভালবাসা কি আজীবনই তারা পাবেন বলে মনে করেন ?
জনগনের দীর্ঘকালের অকুন্ঠ সমর্থন পাবার পরও যদি নেত্রীগন তাদের প্রতিদানের চিন্তা না করেন, তাহলে তো তারা জনগনের ভালবাসাকে প্রত্যাখানই করলেন, তাই নয় কি ? দীর্ঘকাল যাদের ভালবাসায় নিজেরা ক্ষমতাভোগ করলেন, ধন-সম্পদ আহরন করলেন, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও দেশ-বিদেশে প্রচুর সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করলেন, অত:পর তাদেরকেই প্রত্যাখান করলেন। এখন ভাবুন তো প্রত্যাখ্যাত এই সকল জনগনের মনের অবস্থাটা এখন কেমন হতে পারে? একবার আন্দাজ করার চেষ্টা করে দেখুন তো, এই সকল জনগন যদি তাদের এই প্রত্যাখ্যাত হওয়ার প্রতিশোধের চিন্তা করে, তখন দুইনেত্রীর অবস্থা কি দাঁড়াবে? জনগনকে ঠকিয়ে তারা যে ধন-সম্পদ আর বিত্ত-ভৈববের মালিক হয়েছে, তা দিয়ে কি জনরোষ থেকে তারা বাঁচতে পারবে ? দুই, দুইবার করে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও কেমন তারা পুনরায় ক্ষমতা পাবার জন্য উম্মাদের মতো আচরন করছে ! জনগনকে তারা আর মানুষ মনে করছে বলে মনে হয়না ।
সরকার জনগনের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার শপথ করে ক্ষমতায় বসলেও, সেই জনগনকেই গুলি করে মারছে অনেকটা মশা মারার মতো । অনুরুপভাবে বিরোধীদলও সেই জনগনকেই জীবন দিয়ে তাদেরকে ক্ষমতায় আনয়নের জন্য একাধারে আহবান জানাচ্ছে, আবার তারাই হরতালের নামে জনগনকেই মেরে-কেটে, বোমা মেরে, জনগনের সম্পদ নষ্ট করে অনেকটা ঝিকে মেরে বউকে শিখানোর কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে । এই দেশের জনগন যেন রাজনীতির ব্যবসার মালামাল আর কি, যা সরকারে থাকলেও বেচা যায় এবং বিরোধী দলে থাকলেও বেচা যায় । কিন্ত জনগনকে নিয়ে এই ব্যবসা আর কত দিন ? শাহবাগ ও শাপলাচত্বরের বিশাল বিশাল গণসমাবেশ দেখেও কি রাজনীতিবিদেরা অনুমান করতে পারছে না যে, জনগনকে নিয়ে রাজনীতির ব্যবসার দিন শেষ । জনগন আর রাজনীতির পন্য হতে রাজি না ।
যেকোন মূল্যেই হোক, জনগন বর্তমান ধারার রাজনীতির পরিবর্তন চায় এবং জনগন চায় নূতন নেতা, যে মানুষের সুখ-দু:খ উপলব্ধি করতে সক্ষম। তাই আমার আশংকা, রাজনীতিবিদদের জন্য ভয়ংকর দিন অপেক্ষা করছে সামনে ? কারন, চালাকী করে, ভন্ডামি করে সব সময় কিন্ত পার পাওয়া যায় না। রাজনীতিবিদদের চালাকী ও ধূর্ততা এখন জনগনের কাছে পরিস্কার। সুতরাং বিগত বছরগুলির নেতানেত্রীদের ক্ষমতা আর জনগনের অর্থ লোপাটের হিসাব এবার কড়ায়-গন্ডায় বুঝাইয়া দিতে হবে জনগনকে । কারন,বর্তমানের সকল রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষ এখন চরম ত্যক্ত, বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ, যেন- সুপ্ত আগ্নেয়গিরি।
যে কোন সময় আবার জেগে ওঠতে পারে এই সুপ্ত আগ্নেয়গিরি, যার কিছুটা ঝাকুনি দিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে শাহবাগ ও শাপলাচত্বরের বিশাল গনজমায়েত । আর সুপ্ত আগ্নেয়গিরি যদি জেগে ওঠে তখন সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে গনবিস্ফোরনের লেলিহান আগুনে ।
আমাদের প্রধান দুই নেত্রী যদি এখনও তাদের ক্ষমতার লিপসা ছাড়তে না পারে, এখনও যদি জনগনের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা তীব্য ক্ষোভ আর ঘৃনা তারা টের না পান, তবে তাদের জন্য অত্যন্ত করুন পরিনতি অনিবার্য । কেউ রেহায় পাবে না তাদের কৃত অপরাধের শাস্তি ভোগ করা থেকে, যার বাস্তব উদাহরন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। তাদের দিকে ধেয়ে আসা এই সমূহ বিপদ থেকে বাঁচার একটাই পথ তাদের জন্য খোলা- আর তা হলো ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে জনগনের ইচ্ছানুযায়ী নিজেদের পরিচালিত করার উদ্যোগী হওয়া।
যদিও দীর্ঘদিনের বদ অভ্যাস এতো সহজে পরিবর্তন করা সহজ কাজ নয়, তবুও জান-মান বাচাঁতে মানুষ কি না করে ! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।