যোদ্ধা
রাজশাহী মহানগরীর শাহ মখদুম থানার পাকুরিয়া এলাকায় বাস করতো সে। নাম তার স্বপ্না। বয়স মাত্র ৯ বছর। হয়তো তার অনেক স্বপ্ন ছিলো। যদিও প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় গরীব মানুষদের স্বপ্ন দেখা অবৈধ।
গরীব হলেও কিন্তু সে ছিলো রক্ত মাংসেই গড়া একজন ছোট্ট মানুষ। এই শিশুটি গতকালের আগের দিন শুক্রবার তার ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো। সম্ভাব্য রাত ৯টার দিকে ফুফুর বাড়ি থেকে বিদায় নিলেও, সে আর বাসায় ফিরে আসেনি। ঘটনাটি অন্যরকমও হতে পারতো, শিশুটি একদিন নিঁখোজ থাকার পর মায়ের কোলে ফিরতেও পারতো। কিন্তু বাস্তবতা যে আইনের মতই প্রতিবন্ধী।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে স্বপ্না নামের এ শিশুটির বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করা হয় স্থানীয় গোরস্থান থেকে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্যে মর্গে পাঠানো হয়। ধারনা করা হচ্ছে, ধর্ষনের পর স্বপ্নাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আসামী সন্দেহে স্থানীয় এলাকার সাইদুর ওরফে জ্যাক (৩০) কে আটক করা হয়েছে। তার সহযোগী রানাকে আটকের চেষ্টা চলছে।
বলা হয়ে থাকে, আইন অন্ধ হলেও নাকি আইনের হাত খুউব লম্বা। তবে আইনের পা ছোট বিধায় পৌছুতে দেরি হয় আরকি।
খুউব করুনা হচ্ছে। না, স্বপ্নার জন্যে না। তাদের জন্যে করুনা হচ্ছে যারা কোনো মেয়ে ধর্ষিত হলে সেটার দায়ভার সেই মেয়েটির চালচলন/জামা কাপড়ের উপর বর্তান।
অথচ কোনো শিশু ধর্ষিত হলে আবার ধর্ষন নিয়ে দর্শন কপচান।
সাধরনত মানুষ মারা গেলে তাকে গোরস্থান পাঠানো হয়, অথচ স্বপ্নাকে গোরস্থান নিয়ে গিয়েই মৃত্যুর কাছে পাঠানো হয়েছে। ৯ বছর বয়সি ঐ ছোট্ট শিশুটির শরীর প্রথমে হয়েছে ধর্ষিত, এরপর সেই ধর্ষিত শরীরে কাটাকুটির মাধ্যমে পোষ্টমর্টেম করে তাকে ধর্ষিতার বিশেষনে বিশেষায়িত করা হয়েছে। শেষ নিশ্বাস ত্যাগের আগ পর্যন্ত স্বপ্না হয়তো একটু হলেও মানবতা খুঁজেছিলো, না পেয়ে সবাইকে জানোয়ার ভেবে হয়তো চলে গেছে না ফেরার গন্তব্যে। হয়তো মরে গিয়েই বেঁচে গিয়েছে বাকী জানোয়ারদের কাছ থেকে।
এখানেই শেষ নয়, স্বপ্না আবারো ধর্ষিত হবে। সংবাদ মাধ্যমগুলো যদি মুনাফার গন্ধ পায় তবে স্বপ্নার লাশের গন্ধ ভুলে যাবে। স্বপ্নার ধর্ষিত হবার সংবাদ বেঁচে স্বপ্নাকে আবারো ধর্ষন করা হবে। ফেসবুকের কুল জেনারেশনও হয়তো স্বপ্নাকে ছাড়বে না। দায় এড়ানোর জন্যে 'Rip' বলে বলে আবারো 'Rape' করে দিবে একদম।
এ ঘটনায় অনেকেই বলবেন, আমি এই নষ্ট সমাজে বাঁচতে চাইনা। আমি বলি কি, আমি এই বেহুদা সমাজে মরতেই চাই না; যেখানে কেউ মারা গেলে, দায় এড়ানোর জন্যে শুধু 'Rip' বলে বলে 'Rape' করে দেয়া হয়। এর চেয়ে গুহবাসী মানুষেরাও ভালো ছিলো, যা বর্বতা সব জীবিতদের সাথেই করতো। অন্তত মৃতদের নিয়ে রঙঢঙ এর ব্যবসা করতো না গুহবাসীরা।
ভাবছেন, আমি এখন সুশীলতা দেখাতে স্বপ্নার জন্যে বিচার চাইবো? না জনাব! আমি এখন আর কোনো কিছুরই বিচার চাই না।
আমিও স্বপ্নার মত করে দু পেয়ে জানোয়ারদের মাঝে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে মানুষ খুঁজি, মানবতা খুঁজি..
#কার্টেসিঃ কাগু #
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।