ভাল লাগে ফুল, কিছু কিছু ভুল
গল্পটা আমাদের অঞ্চলের। প্রথমে জায়গাটার একটা বর্ণনা দিয়ে নেয়া প্রয়োজন। এটা শহরতলী, সামনেই ঢাকা বরিশাল হাইওয়ে। ঠিক আমাদের বাড়িটা যেখানে সেখানে হাইওয়ের উপরে একটা ব্রিজ। খুব বড় নয় আবার একেবারে ছোটও নয়।
ব্রিজের উত্তর দিকের ঢালটা ধরে একটু এগোলেই বরিশাল এয়ারপোর্ট। ঢালটা ব্রিজের যেখানটায় মিলেছে সেখান থেকে নীচের জায়গাটা বেশ নীচু। সেখান থেকে পূর্ব বা পশ্চিম ঢাল প্রায় খাড়া নেমে গেছে। বেশী মারাত্মক পূবের ঢালটা। তো এই অংশটায় পর পর তিন বছর তিনটা অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে গেল।
এমন অবস্থা হল যে আমরা ভয় পেয়ে গেলাম- প্রতি বছরই এখানে একটা করে অ্যাক্সিডেন্ট হতে থাকবে।
প্রথম বছর যে অ্যাক্সিডেন্ট হল সেই গাড়িটা একটা লোকাল গাড়ি। গাড়িটা যখন ঢাকার দিক থেকে আসছিল তখন এয়ারপোর্টের মোড়ের কাছে এক গ্রাম্য মহিলা একটা বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করল। পোশাকের দৈন্য দেখে হয়ত গাড়ির হেল্পারের সন্দেহ হল যে সে ভাড়া ঠিকমত দিতে পারবে না তাই মহিলাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। গাড়িতে উঠতে দিল না।
সেখান থেকে ব্রিজটা খুব বেশী দূরে না। আগেই বলেছি ঠিক ব্রিজে ওঠার আগের ঢালটাতেই অ্যাক্সিডেন্ট করেছিল গাড়িটা। এবার অ্যাক্সিডেন্টের পরবর্তী ফলাফল শোনাচ্ছি। সেই হেল্পার ঘটনাস্থলেই নিহত। পুরো গাড়ির সব ক’জন প্যাসেঞ্জারই কম-বেশী আহত।
শুধু একজন মহিলা এবং তার সংগের একটা বাচ্চা ছেলে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় গাড়ি থেকে বের হল- সামান্য আচরটুকুও লাগেনি তাদের গায়ে।
পর পর তিন বছর অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার পরে যখন সবাই আতঙ্কিত হয়ে উঠল যে এখানে প্রতি বছরে একটা অ্যাক্সিডেন্ট বাধ্যতামূলক; তখন বিগত অ্যাক্সিডেন্টগুলোর হতাহতের তালিকা মেলাতে গিয়ে একটা অদ্ভুত কো-ইন্সিডেন্স আবিস্কৃত হল। প্রতিটা অ্যাক্সিডেন্টেই একজন করে মানুষ নিহত। প্রতিটা অ্যাক্সিডেন্টেই গাড়ি ভর্তি প্যাসেঞ্জার সবাই কম বেশী আহত এবং প্রতিবারই একজন মহিলা এবং একটি শিশু সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ছিল। ঘটনাগুলো মেলাবার পরে উপস্থিত সবার গায়ে কাঁটা দিল এবং হঠাত্ করেই প্রথম গাড়িটার অ্যাক্সিডেন্টের আগের ঘটনাটাও যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে লাইম লাইটে চলে আসল।
এরপর প্রচন্ড আতংক নিয়ে আমরা অমোঘ নিয়তির মত পরবর্তী বছরের অ্যাক্সিডেন্টের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সেই সংগে আগামী বছরের সেই দুর্ভাগা মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তিটির জন্য কিংবা সেই অসম্ভব সৌভাগ্যবান মহিলা এবং শিশুটির জন্য। যারা মারা গেছেন তাদের বায়োডাটা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি কিংবা সৌভাগ্যবানদেরও। যদি করা যেত তাহলে হয়ত আরো কোন অদ্ভুত কো-ইন্সিডেন্সের মুখোমুখি হতে পারতাম।
সৌভাগ্য আমরা যখন এই কাকতালীয় ঘটনাটি আবিস্কার করে ফেললাম, তারপর থেকে সেখানে আর কোন অ্যাক্সিডেন্ট হয়নি- অদ্যাবধি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।