বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
‘কারাতে’ শব্দটা জাপানি; এর অর্থ “খালি হাত”। কারাতে হল খালি হাতে একধরনের ‘মার্শাল আর্ট” বা মল্লযুদ্ধ - যে মল্লযুদ্ধের উদ্ভবের পিছনে একজন ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুর প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে ...বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কারাতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর বিচিত্র কলাকৌশলের কারণেই অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বোধিধর্ম ছিলেন খ্রিস্টীয় ৫ম শতকের একজন ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু।
মাঝে-মাঝে আমি ভাবি বোধিধর্ম বাঙালি ছিলেন কি না; কেননা ঐ সময়ে প্রাচীন বাংলায় বৌদ্ধধর্মের জয়জয়াকার। ৭ম শতকের চর্যাপদের কথা তো জানি। সম্ভবত বোধিধর্ম ছিলেন সেই চর্যাপদের রচয়িতাদের পূর্বসূরি। বোধিধর্ম চিনে গিয়েছিলেন এবং ইনিই বিশ্বের এক পরিশীলিত দর্শন-জেন বৌদ্ধদর্শনের জনক।
চিনের মানচিত্র।
পশ্চিমে ভারতবর্ষ, উত্তরে চিন এবং পুবে জাপান। কারাতের উদ্ভব ও বিকাশ স্থল।
কারাতের উদ্ভব সর্ম্পকে চিন ও জাপানে একটি উপকথা রয়েছে। বৌদ্ধধর্মে প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ। তো খ্রিস্টীয় ৫০০ শতকে বোধিধর্ম যখন বৌদ্ধধর্ম প্রচারের উদ্দেশে হিমালয় অতিক্রম করে ভারত থেকে চিন গেলেন, সে সময় শ্বাপদসঙ্কুল যাত্রাপথে বন্যপ্রাণী ও দস্যুতস্করের হাত থেকে রক্ষার জন্য আত্মরক্ষার যে কৌশল অবলম্বন করেন পরবর্তীকালে সে পদ্ধতিই চিন ও জাপানে খালিহাতে আত্মরক্ষা বা কারাতে হয়ে ওঠে।
বোধিধর্ম। অহিংস বলেই বোধিধর্ম চিন যাওয়ার সময় অস্ত্রশস্ত্র বহন করেন নি। এই নিরস্ত্র ভাবই কারাতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। চিনে পৌঁছলেন বোধিধর্ম । স্থানীয় চৈনিক মল্লযুদ্ধের কলাকৌশল লক্ষ করলেন।
সেই কৌশলের সঙ্গে নিজস্ব কৌশল মিশিয়ে এক ধরনের ধ্যানের পদ্ধতি আবিস্কার করেন। যে ধ্যানের অর্ন্তগত গভীর নিঃশ্বাস আর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রসারণ বা ষ্ট্রেসিং। যে ধ্যানের নাম পরবর্তীকালে হয়ে উঠবে কুংফু।
চিন, জাপন ও ওকিনাওয়া।
ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কালক্রমে বোধিধর্ম প্রবর্তিত এই খালিহাতে আত্মরক্ষার কৌশলটি আশেপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশেষ করে রাইইউকিউ রাজ্যে। জাপান থেকে তাইওয়ান অবধি রাইইউকিউ দ্বীপ রাজ্যটি ছড়িয়ে ছিল। দীর্ঘকাল এটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। ১৯ শতকে রাইইউকিউ জাপানের অঙ্গীভূত হয়ে যায়।
ওকিনাওয়ার মানচিত্র।
ওকিনাওয়া দ্বীপটি ছিল রাইইউকিউ রাজ্যেই। চিনের মূলভূমির ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ওকিনাওয়া দ্বীপটি ৬ মাইল চওড়া ও ৭০ মাইল দীর্ঘ। ওকিনাওয়া প্রবাল দ্বীপ। গুরুত্বপূর্ন নৌ-বানিজ্য পথের মাঝখানে দ্বীপরটির অবস্থান। জাপানিরাই প্রথম দ্বীপটি আবিস্কার করে।
ইতিহাসের নানা সময়ে অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের ওপর ওকিনাওয়ায় অবরোধ আরোপ করা হয়েছিল। প্রতিরক্ষার তাগিদেই ওকিনাওয়ায় এক ধরনের বক্সিং বা মুষ্টিযুদ্ধের উদ্ভব ঘটেছিল, যার নাম ছিল ‘তে’। ‘তে’ মানে হাত। আর, ‘কারা’ মানে শূন্য। এ থেকেই উদ্ভব হল কারাতে।
খালি হাতে আত্মরক্ষাই হল কারাতে।
ওকিনাওয়া।
একটা সময়ে অভিজাত এবং ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চিন থেকে এল বোধিধর্ম প্রদর্শিত অভিনব খালিহাতে আত্মরক্ষার কৌশল। এতে করে ওকিনাওয়ায় কারাতের আমূল পরিবর্ত ঘটে।
ওকিনাওয়ায় রাজধানী নাহা।
যা হোক। ওকিনাওয়ায় তিনটি নগরের নাম শুরি, নাহা ও তোমারি। এ তিনটে নগরেই প্রচুর সংখ্যক কারাতে চর্চাকারীরা ছিল। অনেকে গুপ্তচক্রও গড়ে তুলেছিল। ( এরকম গুপ্তচক্র ঢাকাতেও আছে।
ঢাকাইয়া ফিলমের ভিলেনের আন্ডারে কাজ করে!) ... এই চক্রের সদস্য ছিল রাজা অভিজাত বণিক ব্যবসায়ী কৃষক জেলে- এক কথায় সবাই।
এখন আমরা দেখব কি ভাবে ওকিনাওয়া দ্বীপের মার্শাল আর্ট কারাতে বিশ্বময় ছড়িয়ে গেল।
রাইইউকিউ রাজ্যের মানচিত্র।
মনে থাকার কথা ওকিনাওয়া দ্বীপটি ছিল রাইইউকিউ রাজ্যে। দীর্ঘকাল রাইইউকিউ রাজ্যটি স্বাধীন ছিল।
১৯ শতকে রাইইউকিউ রাজ্যটি জাপানের অঙ্গীভূত হয়ে যায়। কুড়ি শতকে রাইইউকিউ রাজ্যের সঙ্গে জাপানের সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি হয় । এই প্রথম কারাতে এল জাপানে । ওকিনাওয়ার কারাতেগুরুদের জাপান সরকার জাপানে আমন্ত্রন জানিয়ে কারাতে শেখার ব্যবস্থা করে। ১৯২৪ সালের পর থেকে জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ে কারাতে ক্লাব গড়ে ওঠে।
তখন থেকেই কারাতে তে জাপানি ষ্টাইল এর ছোঁওয়া লাগে।
কারাতে। হংকং ভিত্তিক প্রচুর অ্যাকশন মুভি কারাতেকে যত বিকৃত উপস্থাপনা করেছে তত হিংস্র এ নয়!
এদিকে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ওকিনাওয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থাপিত হয়। ওখানকার অফিসারদের মধ্যে কারাতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কাজেই কারাতে পৌঁছে যায় ইউরোপ-আমেরিকায়।
ষাট ও সত্তর দশকে ‘ওরিয়েন্টার মার্শাল আর্ট ’ হিসেবে কারাতে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কারাতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর অভিনব বৈশিষ্ট্যের কারণেই অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মার্জাররাও এই খেলায় অংশ নেয়।
কারাতেরত মার্জার।
ভাবলে অবাক লাগে কারাতের মূলে একজন ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু বোধিধর্ম।
তাঁর প্রদশির্ত পথেই তো রাইইউকিউ রাজ্যের ওকিনাওয়া দ্বীপের স্থানীয় মুষ্টিযুদ্ধের আমূল পরিবর্তন ঘটেছিল ।
মেয়েটি কাঠ ভাঙছে। আজকাল যে হারে মেয়েরা বখাটেদের আক্রমনের শিকার হচ্ছে ...মেয়েরা এখন কারাটে শিখলে কেমন হয়?
কারাতে প্রসঙ্গে দুটো প্রশ্ন উঠতে পারে।
আমাদের পরিচিত জুডো ও কুংফু-র সঙ্গে কারাতের কি পার্থক্য?
কুংফু হলো চৈনিক মার্শাল আর্ট বা মল্লযুদ্ধ যার উদ্ভব খ্রিষ্টীয় ৫ম শতকে চিনের জেন উপাসনালয় শাওলিন টেম্পলে। মনে থাকার কথা।
চিনের শাওলিন টেম্পলের আদি প্রতিষ্ঠাতা ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু বোধিধর্ম। তাঁর প্রশিক্ষিত মার্শাল আর্টই কালের পরিক্রমায় কুংফু-র রূপ নিয়েছে।
‘শাওলিন টেম্পল’ ছবির পোস্টার। কারাতে আর কুংফু-র ওপর হংকং ভিত্তিক প্রচুর অ্যাকশন মুভি হয়েছে।
আর জুডো হল হালের জাপানি মল্লযুদ্ধ।
এর ইতিহাস অপেক্ষাকৃত নবীন। ১৮৮২ সালে ডক্টর কানো জিগোরো এই কমব্যাট ক্রীড়াটি উদ্ভাবন করেন। জুডো অর্থ ‘জেনটেল ওয়ে। ’
জুডো অর্থ ‘জেনটেল ওয়ে। ’
তথ্যসূত্র ও ছবির উৎস: কুংফু-কারাতে সংক্রান্ত বিভিন্ন ওয়েবসাইট।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।