"সকল বস্তু তার বিপরীত বস্তুর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠে"
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউই ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয় এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল। উত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর বাণী, উত্তম পথ হচ্ছে রাসূল ﷺ এর পথ এবং নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে দ্বীন ইসলামের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়(বিদআহ), নিশ্চয়ই প্রত্যেক বিদআহ’ই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা আর পথভ্রষ্টতার গন্তব্যস্থল জাহান্নাম।
হিজবুত তাহরীর, এই নামটি মোটামুটি অনেকেই জানেন বিশেষ করে পাবলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এই নামটির সাথে বেশী পরিচিত। আলহামদুলিল্লাহ, হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়েছে।
এই দলটি যে পন্থা বা পদ্ধতীতে তাদের কথা প্রচার করে, তাদের যে আকীদা রয়েছে বা তারা যেগুলো তে বিশ্বাস করে তা মোটেই ইসলামী কাজ নয়, ইসলামী বিশ্বাস নয়। সত্য-সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত একটি দল। কাজেই তাদের প্রচারনা যেন মুসলিম ভাই-বোনদের বিভ্রান্ত করতে না পারে তা জন্যেই তাদের কিছু দিক তুলে ধরব।
হিজবুত তাহরীর এর আকীদা:
১. যে পর্যন্ত কোরআন তাদের আকলের বোধগম্য না হয় সে পর্যন্ত তারা কোরআনের আয়াত বিশ্বাস করে না। (এই বিষয়টি তাদের বই “The System of Islam বা Nidham ul Islam” এ রয়েছে)।
অথচ কোরআনের প্রত্যেকটি আয়াতকে শর্তহীনভাবে প্রত্যেক মুসলিমকে বিশ্বাস করতে হবে। কেউ যদি কোরআনের একটি মাত্র আয়াত অস্বীকার করে বা বিশ্বাস করবে না সে আর মুসলিম থাকবে না।
২. হিজবুত তাহরীর তাদের বই Nidham ul Islam এ ইসলামের বিশ্বাস করাকে Emotional বিশ্বাস বলে অভিহিত করে, এই বিশ্বাসকে তারা Idol Worshiper দের সাথে তুলনা করেছে, Emotion এর কারণেই এরা Idol Worship করছে। এর জন্যে এরা বিশ্বাসকে যুক্তি দিয়ে বুঝাকে ওয়াজিব করেছে।
৩. কবরের আযাবকে তারা বিশ্বাস করে না।
অথচ এই বিষয়ে সহীহ হাদীস ও কোরআনের আয়াত রয়েছে। রাসূল ﷺ নামাজে শেষ বৈঠকে কবরের আযাব থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। মুতাযিলা সম্প্রদায়ও এই কবরের আযাবকে বিশ্বাস করতো না।
৪. এরা ইলমুল কালামে বিশ্বাসী। অর্থাৎ কোরআন এবং হাদীসের উপরে এরা যুক্তিকে প্রাধান্য দেয়।
কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এই ইলমুল কালাম আকীদাকে অস্বীকার করে। ইমাম আবু হানিফা (রহ) এবং ইমাম শাফেঈ (রহ) এই ইলমুল কালামদের বিদআতী আখ্যায়িত করেছেন এবং যারা ইলমুল কালাম ব্যবহার করতো তাদের শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দিতেন।
৫. মুতাযিলা, মাতুরিদী, আশআরী সম্প্রদায়ের আকীদার সাথে এদের যথেষ্ট মিল রয়েছে। এমনকি হিজবুত তাহরীরের প্রতিষ্ঠাতা Taqiuddin an-Nabahani মাতুরিদী আকীদার, এবং মাতুরিদী আকীদার উলামাদের Ulamaa ut-Tawheed বলে অভিহিত করেছে।
হিজবুত তাহরীর এর কার্যক্রম:
১. এরা খিলাফতের দাওয়াত প্রচার করে।
যেকোন বিষয়ে আলোচনা করার আগে তারা খিলাফতকে উল্লেখ করবে। আর এটা করতে যেয়ে তারা বিভিন্ন সেমিনার করে খিলাফতের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। খিলাফতের প্রয়োজনীয়তা বলতে যেয়ে তারা কুরআন এবং সুন্নাহর ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে। আর এদের চেনার এটাই সহজ উপায় এরা সর্বপ্রথম খিলাফতের দাওয়াত দিবে।
২. এরা মানুষকে প্রথমেই খিলাফতের দাওয়াত দিবে যদিও সেই মানুষটির ইসলাম, ঈমান সম্পর্কে অজ্ঞ, শিরক-বিদআতে লিপ্ত থাকে তবুও সমস্যা নেই।
৩. এরা তাদের আন্দোলনকে রাসূল ﷺ এর সাথে তুলনা করে। অথচ রাসূল ﷺ মক্কার মুশরিকদের প্রথমেই খিলাফতের দাওয়াত দেন নি। তিনি তাওহীদ তথা একত্ববাদের দাওয়াত দিতেন। তিনি কখনও বলেননি, আমরা খিলাফত করব, কাজেই আমাদের খিলাফতে যোগ দাও, তিনি বলতেন, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর, তার সাথে কাউকে শরীক করো না। অর্থাৎ রাসূল ﷺ এর সুন্নাত হল মানুষকে আগে ঈমান সম্পর্কিত শিক্ষা দেওয়া, তাদের আকীদা ঠিক করানো, শিরক থেকে মুক্ত করানো।
খিলাফত হচ্ছে একদম শেষ স্টেজ, আর এরা প্রথম স্টেজ ঠিক না করেই এক লাফে খিলাফত প্রতিষ্ঠ করার জন্যে উঠে পরে লেগেছে।
৪. ইসলাম বিষয়ে এদের জ্ঞান খুবই কম, শুধু খিলাফতের কথা বলবে, তাদের যুক্তি গণসচেতনতা তৈরী করে বিপ্লব তথা গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা।
৫. মুসলিম উম্মাহর অধপতন হয়েছে আল্লাহর আনুগত্য, রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ না মানার কারণে। অথচ এই বিষয়টি তারা কখনও উল্লেখ করবে না, বরং তারা খিলাফতকে গুরুত্ব দিবে।
আরো যারা বিস্তারিত জানতে চান তারা নীচের লিংকটি বিস্তারিত পড়ে নিতে পারেন।
এখানে ক্লিক করুন
আল্লাহ তাআলা আমাদের ভুল পথে পরিচালিত তথা সঠিক-সরল পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া থেকে হিফাজত করুন এবং ইখলাসের সাথে ও রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ অনুযায়ী ইবাদত করার তৌফিক দান করুন। । আমীন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।