আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিও লিবারাল বাস্তবতা ও বাংলাদেশ: পরিস্থিতি ও প্রতিরোধ/ বাধন অধিকারী

~~~কেমন যেন একটা উৎকন্ঠায় আছি.......

বাধন অধিকারী। তারণ্যের উন্মাদনায় বিদ্রোহ-স্বাধীনতা-সংহতির বোধ নিয়ে লিখে যাচ্ছেন রাষ্ট্র-রাজনীতি-ক্ষমতা-মিডিয়া নিয়ে। এডওয়ার্ড সাঈদ যে নিঃসঙ্গ বুদ্ধিজীবীর প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন বাধনের মাঝে আমরা তাঁর ছায়া দেখি। কর্পোরেট জাতীয় দৈনিক তাঁর লেখা ছাপলেও শেষাবধি কেউ তাঁকে হজম করতে পারেনি। বানিয়ে ফেলতে পারেনি পালিত বুদ্ধিজীবী।

তাই নিয়মিত হওয়া হয়নি কোনে জাতীয় দৈনিকে। ২০০৭ সালে অগণতান্ত্রিক সেনা কর্পোরেট কর্তৃত্বের সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে যে বিদ্রোহ সংগঠিত হয়; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তার একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে এবং ঐ বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে অন্যায্য অগণতান্ত্রিক সরকারের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি গ্রেপ্তার-রিমান্ড-নির্যাতনের প্রতিবাদে জরুরি ক্ষমতার তোয়াক্কা না করে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জেগে উঠেছিলো, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে বাধন অধিকারী ছিলো তার বলিষ্ঠ সংগঠকদের অন্যতম। তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কর্তৃত্ব বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ প্লাটফর্মে যে মুক্ত বিম্ববিদ্যালয় আন্দোলন সংগঠিত হয় বাধন সেখানে ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক এবং কর্মী। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় প্রতিরোধ নয়, লেখায়ও প্রতিরোধ জারি রেখেছিলো বাধন তখন থেকেই। ঐ সময়টাকে ও নিও লিবারাল দুনিয়ায় বাংলাদেশের যাত্রাকালের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক পর্যায় বলে অভিহিত করেছিলো ।

তারপর থেকে সেই কালকে বাধন নির্মোহ বিশ্লেষণ করে গেছে, যাচ্ছে। জীবিকার তাগিদে বাধন অধিকারী কাজ নিয়েছিলো নতুন প্রকাশিত বসুন্ধরা গ্রুপের পত্রিকা "কালের কণ্ঠ"র সম্পাদনা বিভাগে। কিন্তু কর্পোরেট সংবাদ-বাণিজ্যের মাঝে নিজেকে বিলীন করে দেয়াটা তাঁর কাজ নয়। সেটা ও করেওনি। সম্পাদকীয় বিভাগে জারি থাকা আওয়ামী কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে একা ও লড়ে গেছে যতোটা পেরেছে।

কিন্তু শেষাবধি লড়াই জারি রাখতে পারেনি, কিন্তু জীবিকার অনিশ্চয়তার ভয়ে থেমে যায়নি ও। অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ওর আটকে যাওয়া একটা লেখা নিয়ে সুস্পষ্টভাবে সম্পাদক বরাবর ও বলেছে: ‘যে লেখাটি আমি লিখেছিলাম, তাতে একুশের চেতনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমার দায়িত্ববোধ, সাংবাদিক হিসেবে আমার নৈতিকতা আর পুরুষতান্ত্রিক অবদমনের এই যুগে একজন নারীর হাহাকারের সম্মিলন ছিলো। এমন একটি লেখা কালের কণ্ঠের পাতায় হাজির করতে না পারবার ব্যর্থতাকে সাথে নিয়েও যদি আমি কালের কণ্ঠে কাজ চালিয়ে যেতে থাকি তাহলে আমার বিবেচনায় আমি একুশের চেতনার সাথে, সমাজের সাথে, আমার নিজের সাথে এবং পুরুষতান্ত্রিক অবদমনের শিকার একটি মেয়ের সাথে অন্যায় করে ফেলি। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি চাকরি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবার। ’ যদিও "কালের কণ্ঠ" কর্তৃপক্ষ এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে শৃঙ্খলা ভঙ্গের তথাকথিত অভিযোগে তাকে বহিস্কার করে! বাধনের বিবেচনায় এই প্রতিক ইতিবাচক।

ওর ভাষায় ‘প্রমাণিত হলো আমি না, বরং কালের কণ্ঠের অগণতান্ত্রিক পরিসর আমাকে ধারণ করতে পারে না!’ লেখার জন্য আর বলার জন্য তাই ছোটকাগজ-সহ বিভিন্ন অনলাইন অল্টারনেটিভ পরিসরই বাধনের ভরসার জায়গা ছিলো সবসময়, এবং এখনও আছে। এই বিকল্প উদ্যোগগুলো বেঁচে আছে বলেই প্রতিরোধ আছে এবং বাধনের বিভিন্ন প্রতিরোধের প্রচেষ্টা মূর্ত হয়েছে। ওর লেখাগুলো সময়ের ঐতিহাসিক বিবরণ আকারে পড়তে পারি আমরা। বুঝে নিতে পারি একটি নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক যুগপর্বে একজন ব্যক্তি কিভাবে নিজের, নিজের বন্ধুদের আর তার চারপাশের পরিস্থিতি নিয়ে বোঝাপড়া করে যাচ্ছে কোনোরকমের মোহ-পক্ষপাত-ক্ষমতা-স্বার্থ ছাড়া। ডান-বাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এনজিও-কর্পোরেট কোনো মুনাফালোভী প্রতিষ্ঠান নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে ভালো রেজাল্টের বাসনায় কোনো শিক্ষক-প্রশাসনের চাটুকারিতা নয়; বাধন ক্ষমতার বিপরীতে নিঃসঙ্গ কর্মীর মতো করে বলে যাচ্ছে সমাজ-রাষ্ট্র-রাজনীতি-মিডিয়া নিয়ে।

আমরা যারা ওর বন্ধু, তাদের দিক থেকে তাই একটা কর্তব্য অনুভব করছি, ওর অনেক লেখাকে একজায়গায় জড়ো করে প্রকাশ করবার। সেই কথা বাধনকে বলতেই ও বাণিজ্যিক প্রকাশকদের প্রতি ওর অনাগ্রহের কথা স্পষ্ট করে জানান দেয় আমাদের। ‘আমার লেখাগুলোকে এক জায়গায় করে বাণিজ্য লুটতে দিতে ইচ্ছে হয় না, ভালো হতো যদি নিজেরা করা যেতো। দাম রাখা যেতো পাঠকের নাগালে। বেশি বেশি মানুষের কাছে সেটা পৌঁছাবার সুযোগ তৈরী হতো’ ওর এই বাসনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই আমরা 'বাংলাদেশ' নামের রাষ্ট্রটির উপর পাশ্চাত্যের ‘উদার গণতন্ত্রের’ অনুদার অভিঘাত এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বাসনা ও তৎপরতা নিয়ে ওর বেশকিছু লেখা একজায়গায় করে প্রকাশ করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।

সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়েও লিখেছে বাধন, কম হলেও। সেখানেও ক্ষমতা-রাজনীতি-প্রতিরোধের খেলাগুলোকেই ধরতে চেষ্টা করেছে ও। ফেসবুকের নোটগুলোও তেমনই। প্রতিরোধ-প্রেম- সংহতির বোধ বাধনের একমাত্র ভরসার জায়গা। আমরা বাধনের সেই প্রেম আর প্রতিরোধ বাসনা থেকে উৎসারিত লেখাগুলোকে এক জায়গায় করে প্রকাশ করতে যাচ্ছি: নিও লিবারাল বাস্তবতায় বাংলাদেশ: পরিস্থিতি ও প্রতিরোধ শিরোনামে।

আপনাকে সাথে চাই। পাশে চাই। প্রচ্ছদঃ চারু পিন্টু

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।