গুলশানে পাকিস্তান হাইকমিশন সংলগ্ন দুটি সড়কের নামকরণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে হওয়ায় পাকিস্তানের দারুণ গাত্রদাহ হয়েছে। অন্তর্জ্বালা অন্তরে না রেখে ইসলামাবাদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাস্তার নামকরণের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ পর্যন্ত জানিয়েছে। পাকিস্তান মনে করে এটি বাংলাদেশের 'উদ্দেশ্যমূলক ও উস্কানিমূলক' কাজ। পাকিস্তান ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর প্রতিবাদ জানালেও দুই দেশের সরকার এতদিন তা গোপন রেখেছিল। সে সময় ইসলামাবাদে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনারকে তলব করে প্রতিবাদপত্র
হস্তান্তর করে পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়.......
আর ব্লগে আসে পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্ব কেন হবে না??? এ ধরনের পোস্ট...
পাকিস্থানের সাথে আমাদের কি এখনো শত্রুতা আছে??? তাদের সাথে আমাদের বর্তমান সম্পর্ক কি???
আসে টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের হারের কারনে দু:খমূলক পোস্ট,,,আসেন পাকিদের সাথে সহবস্থান-সহবাসের ইচ্ছাপ্রকাশকারীদের অভিনন্দন জানাই.......চিয়ার্স...
এবারের টি২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপের শুরুটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলো।
বাংলাদেশ হারলেও কম্যুনিটির মাথা বাংলাদেশের মকসুদ আলী খুব বেশী কষ্ট পায়নি । পাকিস্তান গেছে সেমিফাইনালে। পাশের ফ্ল্যাটের মুসলিম ব্রাদার, সালিম নাওয়াজ ওরফে সালিম ভাই তখন ভীষণ আনন্দিত। তার সাথে আনন্দে আত্নহারা মকসুদ আলী...
ফয়সালাবাদ থেকে আরো বিশ বছর আগে এই পরবাসে এসে শেঁকড় গাঁড়ার সময় নি:স্ব সালিম ভাই খুব বেশী কিছু না আনলেও ক্রিকেটের জন্য বিশাল এক মন নিয়ে এসেছিলেন। জাভেদ মিয়াদাঁদ, ওয়াসিম আকরাম ,মোহাম্মদ আসিফ, শহীদ আফ্রদি আর ইমরান খাঁনের বিশাল বিশাল পোস্টার তার ড্রয়িং রুমে।
অন্যদিকে দেশের বাইরে এসে নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মকসুদ যখন কিছু একটা করবো করবো ভাবছে তখন সালিম ভাই ছিলেন বড় ভাইয়ের মতো। কত্তোদিন দুপুরে-রাতে সালিম ভাই ডেকে ডেকে খাইয়েছে, হালাল মুরগীর ডানাটা কিংবা স্যামন ফিশের লেজটা প্লেটে তুলে দিয়েছে যত্ন করে। আলাপ জমেছে ক্রিকেট নিয়ে। ক্রিকেট মানেই সালিম ভাইয়ের টিভি রুম। উমর আকমলের ছক্কা দেখে যখন চেয়ার ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে চিৎকার দেয়, সালিম ভাই তখন মকসুদের গ্লাসে আরেকটু ব্ল্যাক লেভেল ঢেলে দেয়।
ক্রিকেট কিংবা তলানীর শরাবের চেয়েও আরেকটি কারণে সালিম ভাইয়ের বাসা মকসুদের কাছে এক অদম্য আকর্ষণ, সালিম ভাইয়ের বৌ। আফসানা ভাবী পেশোয়ারের মেয়ে। ভাবীকে দেখলে মকসুদ নিজের মাঝে অন্য রকম এক শিহরণ অনুভব করে, বুকের ভেতরের শিরশির করা ঢেউটা তলপেট - হাঁটু ছাড়িয়ে যায় পায়ের তালুতে। সালিম ভাইয়ের গোলগোল চোখ দুটোকে ফাঁকি দিয়ে মকসুদের চোখ তখন আফসানা ভাবীর রেডরোজ মাখা কপাল, খাড়া নাক, নাকের দু'পাশে হাসির ভাঁজ পেরিয়ে ধারালো চিবুকে গিয়ে থামে। উঠতি কৈশোরে যাত্রাপালার এক্সট্রা ড্যান্স দেখে মনের ভেতর জন্ম নেয়া অনুভূতিটা জেগে উঠে আবার।
নাকে তখন কাশ্মির বনস্পতির চিকেন টিক্কা মাসালা আর আলু পারাটার ঘ্রাণ আসলে মকসুদ স্বাভাবিক জগতে ফিরে আসে।
এবারও সেরকম উল্লাস হতে পারতো, ওল্ড স্ম্যাগলারের ফোর ফিফটি এমএল বোতল শেষ হয়ে যেতো নিমিষে। কিন্তু সেমিফাইনালে পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়ার সাথে হেরে সব ওলট-পালট হয়ে গেলো। সালিম ভাইয়ের সাথে দেখা করার সাহস পায় না মকসুদ। অনেকদিন আফসানা ভাবীকেও দেখে না।
মকসুদের অপেক্ষাটা খুব দীর্ঘ অবশ্য হলো না। কিছুদিন পর হঠাৎ মকসুদের বাসায় সেলিম ভাইয়ের আগমন...হ্যায় ব্রাদার.. আই এম মিসিং ইউ ফর সাম ডেইস..
মি টু ব্রাদার...বিগলিত হাসি নিয়ে মকসুদ..
সপ্তাহ কয়েক পর শারজায় পাকিস্তান-শ্রী লংকা সিরিজ জমে উঠলে সালিম ভাইয়ের টিভি রুম পুরনো আমেজ ফিরে পায়। শহীদ আফ্রিদির দুই চার আর চার ছক্কা দেখে উল্লাসে আপ্লুত হয় দু'জন। ফ্রিজ থেকে চিকেন বিরিয়ানী বের করে ওভেনে গরম করে সালিম ভাই। আফসানা ভাবী মাস খানেকের জন্য পেশোয়ার গেছে শুনে মকসুদের মন কিছুটা খারাপ হয়ে আসলেও টেবিলে চিভাস রিগ্যালের বোতল ফিরতি ভালোলাগা এনে দেয়।
সালিম ভাই আজ খানিকটা বেশী পান করছে। মাঝে মাঝে সোডা পানি ছাড়াই গলায় ঢেলে দিচ্ছে ঢকঢক করে। মকসুদও সমান তালে চলার চেষ্টা করছে। সালিম ভাইয়ের মাঝে তখন প্রবল ইতিহাসবোধ জাগ্রত হয় - 'দোজ অয়্যার বাস্টার্ড পলিটিসিয়ানস... ডিভাইডেড আস। উই ব্রাদার, ব্রাদা-র' - বলতে বলতে সালিম ভাইয়ের গলায় শব্দ আঁটকে যায়।
খানিকটা অস্থির মনে হয়। মকসুদ পাশে গিয়ে বসে, এসি-টা কমিয়ে দেয়। সালিম ভাই আবারও বকাবকি করে - 'স্টিল, স্টিল দেয়ার মাইট বি অ্যা কনফেডারেশন। স্টিল উই ক্যান বি ইউনাইটেড'। এই ফাঁকে মকসুদ বাকী বোতল সাবাড় করে দেয়।
সোফা ছেড়ে উঠতে পারে না, নেশাটা আজ বড্ড বেশী হয়ে গেছে। চোখের পাতা জোড়া লেগে আসে।
...উপুড় মাথায় যখন বালিশে দমবন্ধ দমবন্ধ লাগে, তখন মকসুদ টের পায় তার পিঠের উপর ভর করেছে সালিম ভাই। বিশাল পেশীর সাথে লড়াইয়ে হেরে মকসুদ যখন বিধ্বস্ত, সালিম ভাই তখন ডিওরেক্সের প্যাকেট ছিড়ে বলে - 'স্টিল, দেয়ার মাইট বি অ্যা কনফেডারেশন'।
বি;দ্র:পোস্টটি আনোয়ার সাদাত শিমুলের পরবাসে পাকমন নামক পোস্টটির বর্তমান সংস্করণ.....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।