রাণীর অভিসার
বামন মূল্লুকে এক প্রতাপশালী রাজা ছিল। রাজার ঘোড়াশালে ঘোড়া , হাতি শালে হাতি, আর বাগান ভর্তি পাখি ছিল। পাখি ছিল বলেই ছিল ফুল। কি ছিল না রাজপ্রাসাদে? সবই ছিল, শুধু রাণীর মনে সুখ ছিল না। রাজকর্ম শেষে রাজা ঘরে ফিরত গভীর রাতে।
তাতে প্রজাদের মনে সুখ ছিল কিন্তু শরীর দহনে রাণীর মনে সুখ ছিল না। গভীর রাত অব্দী জেগে থাকত রাণী, একা। মনে তার দুখ পাখির নিত্য আসা যাওয়া। দেহ ফুলে তার না ফোটা সুঁই এর বেদনা। বসন্ত আসে তার জীবনে শীতের কৃচ্ছতা নিয়ে।
উদাসী রাণী নির্বাক পাথর হয়ে বসে থাকে জানালায়। ভাবে এই বুঝি উম্মত্ত সমুদ্র স্রোত ভাসাতে এলো তাকে। যে ক্ষয়ে কষ্টে আছে, যে কষ্টে আনন্দ আছে তা-ই তার সদা জাগ্রত আকাঙ্খা। একদিন সত্যই সেই দিন এলো। সে এলো- তীব্র স্রোতে রাণীকে ভাসায়ে।
সামান্য রাজকর্মচারী, পেয়াদা পুত্র। প্রত্যহ সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অব্দী চলতে থাকলো পাথর আর ফেনীনীভ স্রোতের খেলা। এ যেন অন্তহীন খেলা। সমাজ, সংসার, ধর্ম- অধর্ম, অবনতী ও পরিণতী সবই পরাভূত হলো এ খেলায়। বুদ্ধীমতী রাণী খোলা দরজায় পোষা কুকুর বসালো।
দূর থেকে রাজাকে আসতে দেখলেই কুকুর ঘেউ ঘেউ করত। রাণী সহজেই খিড়কী দরজা দিয়ে পেয়াদা পুত্রকে বের করে দিত। এভাবেই রাত্রী যেতে লাগল। রাড়তে লাগল রাজার সন্দেহ। প্রতি রাতে ঘরে ঢুকেই রাণীর আলু-থালু শাড়ী, অগোছালো বিছানা; যেন কচু বনে কেউ শুয়োর ঢুকিয়েছে ।
আর নিয়মিত কুকুরের চিৎকার রাজার সন্দেহের নতুন মাত্রা যোগ করলো । কুকুরটাকে সে মেরেও ফেলতে পারে না- হাজার হলেও রাণীর কুকুর বলে কাথা। আবার পাহারারত অবস্থা থেকে অন্যত্র সরাবে তাতেও সমস্যা। কুকুর চিৎকারে রাণী পাছে টের পায় । অনেক ভেবে ভেবে রাজা এক ফন্দি আটলো।
তলব করলো পেয়াদাকে। হুকুম করলো রাজ্যের ভেতর থেকে সবচেয়ে সুন্দরী কুত্তীকে বের করে আনো। রাজ হুকুম তামিল করলো পেয়াদা। সুন্দরী এক শ্বেতাঙ্গী কুত্তী এলো রাজপ্রাসাদে। গভীর রাত্রে শয়ন করে দিকে কুত্তিকে নিয়ে রাজা এলো ।
রাণীর কুকুর তরুনী কুত্তিকে দেখে মালিকের হুকুম গেল ভূলে । নিশব্দে দৌড়ালো সে রাজার ছেড়ে দেওয়া কুত্তীর পেছনে। শয়নকে খোলা দরজায় দাঁড়িয়ে রাজা দেখলো পাথরের ক্ষয় আর স্রোতের অবক্ষয়। ক্রোধান্বিত রাজা তরবারি কোষমুক্ত করে দু’জনকে দ্বি-খণ্ডিত করলো।
নীতি বাক্যঃ অভিসারে অভিসারক্ষম পাহারাদার না রাখায় ভালো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।