সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা
নিজের সাহিত্য নিয়ে তাঁর ভাবনা, তৃতীয় অংশ
নারী গ্রন্থটি লিখতে তাঁর সময় লেগেছে এক বছর কয়েক মাস। নারীবাদ ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর প্রিয় বিষয়। তবে ১৯৯০-উৎসাহ বোধ করেন নারী সম্পর্কে বই লেখার। তিনি এ বিষয়ে বলেছিলেন, নারী আমাদের সমাজে আজো সবচেয়ে নিষিদ্ধ বিষয়, এবং সবচেয়ে শোষিত শ্রেণী । প্রথাগত সমাজকে আমি আক্রমন করে আসছি অনেক দিন ধরে।
আমি এক সময় বুঝতে পারি একে ব্যাপকভাবে আক্রমণ করা সম্ভব শুধু নারীকে বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে। বর্তমান সমাজ ও সভ্যতা মানুষের উপযুক্ত নয়, তা অর্ধ মানুষের উপযুক্ত। নারী বিষয়ে আমি বেশ ৩০-৪০ হাজার পাতা পড়েছি, বাঙলাদেশে পাওয়া যায় নারী বিষয়ক প্রায় সব বই সংগ্রহ করার চেস্টা করেছি, তবে সব বই পাই নি। আমি কোনো অভিনব তথ্য উদঘাটন করি নি; প্রচুর তথ্য এ বিষয়ে মেলে, আমি সেগুলোকে আমার ভঙ্গি ভাষায় বিশেষ তাত্তিক কাঠামোতে প্রকাশ করেছি, যেভাবে বাঙলা ভাষায় এর আগে এতোটা ব্যাপকভাবে আর কেউ প্রকাশ করেন নি। আমার হাতে আরো অনেক ভয়াবহ তথ্য রয়েছে, কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করি নি।
কেন না প্রথাগত প্রতিক্রিয়াশীল সমাজ তা সহ্য করবে না।
একজন সাংবাদিক হুমায়ুন আজাদকে প্রশ্ন করেছিলেন, অনেকে অভিযোগ করে আপনার উপন্যাস যৌনতায় ভারাক্রান্ত কি না, আপনার অভিমত কি? হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, এটা অভিযোগ হবে কেন? এটা হওয়া উচিৎ প্রশংসা, কেন না অন্যরা যা করতে পারেন নি তাদের মধ্যবিত্ততার জন্যে, থেকে গেছেন সীমাবদ্ধ, আমি তা অতিক্রম করেছি। যৌনতা জীবনের প্রধান ব্যাপার এবং যৌনতা ছাড়া আমাদের সৃষ্টি হতো না। যৌনতার জন্য পৃথিবী রয়েছে। পৃথিবীর সব মহৎ শিল্পকলা।
তবে এবারের উপন্যাসে সে যৌনতা, যেমন, 'পাক সার জমিন সাদবাদ'-এর এটি নিতান্তই ধর্ষণ-ত’লক যৌনতা। একে যৌনতা বলা ঠিক হবে না। এটা আমি ব্যবহার করেছি এক ধরনের অতিশয় পীড়নমূলক স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদী, রাজনীতির একটি প্রতীক হিসাবে। এখন যারা ধর্ষণ করে তারাও কাম চরিতার্থ করার জন্য ধর্ষণ করে না, ধর্ষণ এখন তাদের কাছে রাজনীতি। কাজেই এ উপন্যাসে যে যৌনতা রয়েছে সেটি আছে ফ্যাসিবাদী রাজনীতির প্রতীকরূপে।
আমার আরো একটি উপন্যাস বেরিয়েছে যেটি শৈল্পিক দিক থেকে অনেক উৎকৃষ্ট। সেটি হচ্ছে, 'একটি খুনের স্বপ্ন'। এ উপন্যাসে জীবনের কিছু অংশ বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে কতো যন্ত্রণা থাকতে পারে- শারীরিক, মানসিক, যৌনযন্ত্রণা এর শিল্পিত বিবরণ রয়েছে। বাঙালি মুসলমান কতোটা কামরুগ্ন তা আমি জানি। আমি তো শিশু সুলভ, নিঃস্পাপ জনপ্রিয় লেখক নই।
আমি জীবনের সম্পর্ণ রূপ, সৌন্দর্য, কদর্য-অসৌন্দর্যের রূপ চিত্রণ করতে চাই। সেটা আমার কবিতায় রয়েছে, উপন্যাসে রয়েছে, প্রবন্ধে রয়েছে। লাম্পট্য এখানে প্রাত্যহিক ব্যাপার, কিন্তু তা লিখলে চরম লম্পটও নিষ্কাম সাধু হয়ে উঠে নিন্দা করে। ভন্ডামো আমাদের জাতীয় চরিত্র; কিন্তু আমি ভন্ডামো করি না। সাহিত্যতো জীবনেরই প্রতিরূপ।
জীবনের মতোই তা আপত্তিকর।
হুমায়ুন আজাদ সাক্ষাৎকার দিতে পছন্দ করতেন। পত্র-পত্রিকায় প্রচুর সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তাঁর নিজ সাহিত্য সম্পর্কে বলেছেন প্রচুর। তাঁর সাহিত্যের যে বিশ্লেষণ নিজে করেছেন তা অসাধারণ।
এটি তাঁর আরেকটি অনন্য মাত্রা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।