আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিঁপড়া এবং জাদুর পানির গল্প



এক কিশোর পিঁপড়ার খুব শখ যে সে আকাশে উড়ে বেড়াবে। সে তার ছোট্ট মাটির ঘর থেকে বের হয়ে একদিন অনেক দূরে ঘুরতে যাবে। অনেক সুখ আর আনন্দের মাঝে সে স্বপ্নের পাখা মেলে ঘুরবে। সে তার বাবা মাকে এই স্বপ্নের কথা বলে। বাবা মা তাকে বুঝায় যে- বাইরের পরিবেশ ভাল না।

আকাশে অনেক ভয়ঙ্কর প্রাণী থাকে যা তোমাকে আঘাত করবে। আলোর কাছে গেলে তোমার মৃত্যু হবে। এত কথা শুনার পরেও কিশোর পিঁপড়া তার স্বপ্নকে ভুলতে পারেনা। সব সময় মাটির কাছে থাকতে তার ভালো লাগেনা। মাটির ময়লা রঙ আস্তে আস্তে তার অসহ্য লাগতে থাকে।

একসময় সে জানতে পারে, পিপড়ারাও এক জাদুরপানি খেয়ে উড়তে পারে। কিন্তু যারা সেই পানি একবার খেয়ে উড়ে গেছে- তারা আর কখনই ফিরে আসেনি। তাই সেই জাদুরপানির কূপ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কিশোর পিঁপড়া প্রতি রাতে সবার অজান্তে সেই জাদুরপানির কূপ আবার খনন করতে থাকে। রাতের চাঁদ তাকে মোহিত করে ফেলে।

সে চাঁদের কাছে- আলোর কাছে যাওয়ার স্বপ্নকে আরও তীব্র ভাবে লালন করতে থাকে। একদিন তার পরিশ্রম শেষ হয়। একরাতে সে জাদুরপানির দেখা পায়। সাথে সাথে তা পান করে। এক আশ্চর্য পরিবর্তন আসে তার দেহের গঠনে।

অবাক হয়ে লক্ষ্য করে তার দুই পাশে খুব সুন্দর দুটি পাখা গজিয়েছে। আকাশে উড়তে থাকে। অসম্ভব স্বপ্ন তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। সে আরও উপরে উঠতে থাকে। তার সারা শরীরে আনন্দের ঢেউ খেলেতে থাকে।

অনেক উপর থেকে সে দূরে এক গ্রাম দেখতে পায়। সেখানে অনেক আলোর খেলা তার নজরে আসে। সে নেশাগ্রস্থের মত সেদিকে যেতে থাকে। পেছনে ফেলে যায় তার ছোট্ট মাটির ঘর। তার ভাই-বোন, যাদের সাথে সে প্রতিদিন খেলা করত।

তার বাবা-মা , যারা তাকে অসম্ভব ভাবে ভালোবাসে। দুরের গ্রামে এসে সে এক বাড়িতে প্রবেশ করে। সে দেখে যে, কিছু ছোট ছোট মানুষ এক আশ্চর্য আলোকে ঘিরে খেলা করছে- ঠিক যেমন সে তার ভাই- বোনদের সাথে দুষ্টুমির খেলা খেলত! একজন বড় মানুষ এসে তাদের খেলা থামিয়ে দিয়ে তাদের মুখে খাবার দিতে লাগলো- ঠিক তার মা যেমন তার মুখে খাবার তুলে দেয়। হঠাৎ করে তার মার কথা মনে আসে। মার কাছে ফিরে যাওয়ার আগে সে সেই আশ্চর্য আলোর কাছে যেতে সামনে আসতে থাকে।

আলোর কাছে এসে সে বুঝতে পারে তার হালকা পাখা গলে গেছে । নিয়ন্ত্রন হারিয়ে সে আলোর উৎস মোমের মত গলিত অংশের উপর পড়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে তার শরীরে ফোস্কা পড়ে গেল। এখন শুধু মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা। সে বুঝতে পারল , তার মাটির ঘর কত নিরাপদ ছিল।

সুখ আর আনন্দের জন্য সে যে জাদুরপানি খেয়েছে, সেই সুখ আর আনন্দের ভিতরেই সে এতদিন ডুবে ছিল। সে বুঝতে পারে, যে আনন্দের পিছনে সর্বদা ছুটে চলেছে, সেই আনন্দ তার হাতের নাগালেই ছিল। ভবিষ্যৎ সুখ আর আনন্দের পিছনে ছুটার প্রয়োজন নেই, বরং সুখ আর আনন্দকে বর্তমানের ভিতরেই খুঁজে নিতে হয়, যা সর্বদা কাছাকাছিই থাকে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।