রাজনীতির আবর্জনাগুলো বাদ দিলে আপনার সাথে আমার দ্বিমত খুবই সামান্য।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদের মতে,মধ্যবিত্ত হচ্ছে তারা যারা নিজের ছোট্ট বাড়িতে থাকে অথবা দু-তিন বেডের ভাড়াবাড়িতে থাকে, নিজের একটা ছোট্ট গাড়ি আছে, ছেলেমেয়েদের মোটামুটি ভালো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলা মাধ্যমের স্কুলেই পড়ায় বা পড়িয়েছে। ছেলেমেয়েদের মধ্যে দু-একজন বড় হয়ে মা-বাবার সংসারে সাহায্য করা শুরু করেছে। বিদেশে বেড়াতে যেতে পারে না। তবে স্বদেশে বেড়ায়, আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নেয় এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে দমন করে রাখতে শিখেছে।
দেশীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের ধারক-বাহক মনে করা হয় এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে। কিছু দিন আগে এই বিষয়টাই পুনর্ব্যক্ত করেছেন একদল বুদ্ধিজীবি। তাদের মতে, জাতীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের ক্ষেত্রে এক সর্বগ্রাসী অবক্ষয়ের কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। কারন হিসেবে তারা বলতে চেয়েছেন যে দেশীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের ধারক-বাহক মধ্যবিত্ত শ্রেণী তাদের চিরায়ত মূল্যবোধ ও অহংবোধের অবস্থান থেকে সরে এসে দিন দিন গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসাচ্ছে। আর তাই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এ বিপর্যয় দেশের আবহমান সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে ভয়াবহ হুমকির মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে।
সুত্রঃ আমার দেশ
আমার মত সাধারন মানুষের অনেকেরই হয়ত এই বক্তব্য বোধগম্য নাও হতে পারে কারন এই ছোট্ট একটা শ্রেনী কিভাবে সমাজের ধারক বাহক হতে পারে। তাই এই বক্তব্যকে আমার কাছে নিছকই বুদ্ধিজিবীদের প্রলাপ বলে মনে হত। আমার এই ধারনার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে গতকাল বৃটেনে মধ্যবিত্ত শ্রেনীর একটা অনুষ্ঠানে যোগদানের ফলে। সহজে যেটা বুঝলাম তাহল, বৃটেনে গনতন্ত্র শক্তিশালী হওয়ার অন্যতম কারন হল এই মধ্যবিত্ত শ্রেনী। তার মানে কি এরা সবাই রাজনীতি করে?বৃটিশদের রাজনৈতিক সচেতনতা জানতে আমার অন্য একটি পোষ্টে কিছুটা বলেছি।
ঘটনা হল তারা রাজনীতি না বুঝলেও নিজের অধিকারের ব্যাপারে খুবই সচেতন, আমাদের সাথে তাদের এই হল পার্থক্য। শ্রেনী বিভাজন সব জায়গাতেই আছে,এখানেও আছে তবে আমাদের মত আকাশ-পাতাল নয়। বৃটেনে দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে ১৪% মানুষ(£১৮০-২০০/সপ্তাহে এর নিচে যাদের আয় তাদেরকে সাধারনত দরিদ্র বলে, সেই হিসেবে বৃটেনে বসবাসরত বাংলাদেশী ছাত্রদের ৯৮% হচ্ছে গরিব!) এবং অন্যদিকে ধনীক শ্রেনীটাও খুব ছোট। ৩০০০ অতি ধনী মানুষ রয়েছে বৃটেনে,সাথে সাথে ধরে নিলাম উচ্চমধ্যবিত্ত আরো কয়েক হাজার। ব্যাপারটা যদি খেয়াল করেন ধনী ও দরিদ্রের মাঝে রয়েছে একটা বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেনী,এখানেই হচ্ছে মুল আলোচ্য বিষয়।
Citizens UK হচ্ছে জনগনের সেবা কারী একটি ননপলিটিকাল দাতব্য(চ্যরিটি) সংস্থা। তারা লন্ডন সহ বৃটেনের আরো অনেকগুলো শহরে লোকাল কমিউনিটির মধ্যে কাজ করে থাকে। তাদের অনেকগুলো কাজের অন্যতম একটা কাজ হল মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা এবং ট্রেইনিংয়ের মাধ্যমে সেলফ ডেবেলপমেন্ট করা। কয়েকদিন আগে ঐতিহাসিক মেথডিষ্ট সেন্ট্রাল হলে ২৫০০ প্রতিনিধির উপস্থিতে তারা এক সম্মেলন করে যেখানে ইনভাইট করা হয়েছিল তিন পার্টির প্রধানদের যারা কিনা আজ ইলেকশানে প্রতিদন্ধীতা করছে। বৃটেনের হবু প্রধানমন্ত্রীর কাছে এরা ৬টি দাবী পেশ করেছিল যে ব্যাপারে Citizens UK এর সকল মেম্বার একমত এবং পার্টি প্রধানদেরকে ঐ দাবীগুলোর উপর তার দলের অবস্থান তুলে ধরতে বলা হয়েছিল।
পুরো পোগ্রামটা দেখলে আপনার মনে হতে পারে সাধারন একটা সংগঠন কিভাবে দেশের নেতাদের গ্রিলিং করছে,ওদেরতো অবস্থা খারাপ কারন এর একেকটা মন্তব্যের উপর উঠানামা করবে ভোট কারন পুরা দেশবাসি এই প্রোগ্রামটা দেখছে। যে কেউ ভেলকি বাজি দিয়ে পার পাবেনা কারন মিডিয়া উপস্থিত!
এরকম অসংখ্য সামাজিক সংগঠন গড়ে উঠার কারনে এইখানে জনগন আমাদের মত অতিমাত্রায় রাজনীতি না বুঝেও,লাফালাফি না করেও রাজনৈতিক নেতাদেরকে জবাবদীহি করতে বাধ্য করছে।
Citizens UK একটা ব্যাপার আমার খুব ভাল লেগেছে আর তাহল তারা বার বার বলেছে আমরা কোন দলকে সাপোর্ট করিনা কিন্তু সবাই ভোটার,তাই তোমরা নেতারা যেই প্রধানমন্ত্রী হওনা কেন এই হচ্ছে আমাদের দাবী তা যে দলই ক্ষমতায় যাওনা কেন আমাদের জনগনের কমন ইন্টারেষ্ট তোমাদেরকে মেনে নিতে হবে, নেতারাও বাধ্য!
পলিটিক্স না করেই যদি এরকম অধিকার আদায় করা যায় তাহলে ফালতু পলিটিকস করার কোন মানে আছে? প্রশ্ন করতে পারেন তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশকে কেন অযথা উন্নত দেশের সাথে তুলনা করছি? আসলে, গনতন্ত্রের সুফল পেতে হলে অবশ্যই জনগনকে প্রথমে নাগরিক অধিকার আদায় করে নেয়ার জন্য নন-পলিটিকাল সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে দেশের প্রতিটি অন্ঞলে, আর এটা করতে যে কোটি টাকা লাগেনা এই সাধারন জ্ঞানটুকু আমাদের অনেকের ভিতর নেই এবং তা তৈরি হতে দেয়া হয়না বলেই মনে করি,আর তাই এই তুলনা।
আমাদের নেতারা আমাদেরকে পলিটিকালি শুধু এরাউজ(উত্তেজিত হওয়ার অধিকার দেন) করেন ঠিকই কিন্তু দেননা শুধু নাগরিক অধিকার, আর আমরাও রাজনীতি করার অধিকার নিয়াই খুশি নাগরিক অধিকার ঝুলে থাক শুধু প্রতিশ্রুতির পাতায়। নাগরিক অধিকার এবং অনার্থক রাজনীতি করার পরিনাম বুঝে পলিটিকস না করেই সরকার এবং পলিটিকাল পার্টির উপর আনডু প্রেসার করে জনগনের অধিকার আদায় করার ক্ষমতা শুধু মধ্যবিত্তেরই আছে, আর তাই আমাদের দেশের ধনিক এবং রাজনীতিকরা এই শ্রেনীটাকে মাথা গজিয়ে উঠতে দিতে চায়না......
ভাল করে খেয়াল করলে দেখা যায় সঠিক চিত্রটা, আমাদের দেশে ৩৬% মানুষ এখনো দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে আর অন্যদিকে কোটিপতি বনে গেছে বিশাল একটা অংশ।
এই কোটিপতি অংশটা কিন্তু দিন দিন কোটি পতিই হচ্ছে আর গরিব হচ্ছে গরিব। টিআইবির জরিপ মতে দেশে বর্তমানে ৬৩ হাজার কোটিপতি আছেন (২০০৮)। অনুমান করতে পারি, দেশে আরও ৫০ লাধিক লাখপতি রয়েছেন। সোর্সঃ জনকন্ঠ
এই এক আজব দেশ যেখানে চোর বাটপার তো আছেই অন্যদেশের ভিক্ষুকও বিভিন্ন চ্যানেলে লাখ পতি বনে যায়। দরিদ্ররা তাই জন্ম লব্দ রাস্তা খুজে কিভাবে বড়লোক হওয়া যায়।
রাজনীতি তার মধ্যে অন্যতম একটা সিড়ি। যার কারনে ছাত্ররা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে হলে ফ্রি খাওয়ার লোভে! টাকার বিনিময়ে বিক্রি হওয়া গরীবরাই মুলত পিকেটিং এবং রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। মধ্যবিত্তের খুব কম সংখ্যকই রাজনীতির সাথে যুক্ত!
গার্মেন্টস সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যদি শ্রমিকরা নায্য মুল্য পেত তাহলে তারা আগুনও ধরাতনা আর ওদের ওবারল উন্নয়নে দেশেও মধ্যবিত্তের সংখ্যাটা বৃদ্ধিপেত যারা কিনা সমাজ পরিবর্তনে উপরে বর্নিত (বৃটেন) উপায়ে ননপলিটিকালি সমাজ উন্নয়নে ভুমিকা রাখত, অন্তত পক্ষে দেশের মানুষকে রাজনৈতিকদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হত হতনা।
কিন্তু আমাদের ধনিক শ্রেনী কি চাইবেন মধ্যবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাক?তারা কি চাইবেন ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হউক? ব্যাবসায়ীরা কি নিশ্চিত করবেন শ্রমিকের নায্য মুল্য?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।