ছোটবেলা থেকে কত সেলিব্রেটিকে যে ভালবেসেছি, তার ইয়ত্তা নেই। একদম প্রথমে কাকে ভালবেসেছিলাম মনে নেই। তবে প্রথম যার কথা মনে পড়ছে সে হচ্ছে সালমান খান। তখনও বোধহয় স্কুলেও ভর্তি হইনি। সালমান খানের প্রথম সিনেমা 'ম্যায়নে পেয়ার কিয়া' দেখি।
বড় বড় চোখ, লম্বা লম্বা চুল, মাথা নাড়ালেই এপাশ থেকে ওপাশ চলে যায়, ইনোসেন্ট একটা চেহারা কিন্তু ঠিক তেমনই পাজি। আমারতো এত ভাল লেগে গিয়েছিল! এইরকম একটা প্রেমিক পেলেতো কথাই নেই।
তারপর অনেকদিন কাকে কাকে ভাল লেগেছিল মনে করতে পারছি না। তবে যখন যে সিরিজটা টিভিতে দেখাতো তার নায়ককেই যে একটু একটু ভাল লাগতো, এটা ঠিক।
মনে হয় তখন ক্লাস এইটে পড়ি।
নোবেলের একটা এ্যাড দেখাতো কেয়া নারকেল তেলের। "কেয়া, তারারা হারায় হারায় চাঁদের আলো
তোমার চুল এমন আঁধার কালো"
ঐ এ্যাড দেখেতো আমি নোবেলের জন্য পুরা পাগল। যখনই ঐ এ্যাডটা দিতো আমি যেখানেই থাকি না কেন, ছুট্টে চলে আসতাম। আর কত জায়গায় যে এই কবিতাটা লিখে রেখেছিলাম।
ঐ সময়ই একটা সিরিজ দেখাতো 'সুপারম্যান'।
সম্ভবত রবি অথবা বুধবার বিকেলে। সুপারম্যানকে আমি তখন এত ভালবেসে ফেললাম! যখন সে সুপারম্যান হয় তখন না। যখন বোকা বোকা সাংবাদিক ক্লার্ক কেন্ট থাকে তখন। সাধারণত কেউ তার পছন্দের পুরুষের প্রেমিকাকে পছন্দ করে না। কিন্তু আমি অনেক উদার ছিলাম।
ক্লার্ক কেন্টের প্রেমিকা লোয়েস লেনকেও আমার খুবই পছন্দ ছিল।
তখন জাহিদ হাসান নতুন নতুন। একটা নাটক, নাম মনে নেই, জাহিদ হাসান আর তানিয়া ছিল। 'তুমি আমার প্রথম সকাল' গানটা ছিল একটা দৃশ্যে। ওই নাটক দেখে আমি জাহিদ হাসানকেও ভালবেসে ফেললাম ভীষণ।
পরে যখন মৌয়ের সাথে বিয়ে হল, আমি এত দু:খ পেয়েছিলাম। কত প্ল্যান করেছিলাম কিভাবে মৌয়ের হাত থেকে জাহিদকে উদ্ধার করা যায়।
তারপর নাইনে যখন উঠি, আরেকটা সিরিয়াল দেখোতো, 'হারকিউলিস'। মহাশক্তিমান হারকিউলিস, তার উদারতা, সুঠাম দেহ, ব্যক্তিত্ব, আরো কি কি যেন, কে জানে! সব কিছু দেখে আমি হারকিউলিসের প্রেমে পড়লাম। একইসাথে হারকিউলিসের বন্ধু ইয়োলাসকেও ভাল লেগে গেল খুব।
ইয়োলাস ছোটখাট আর প্রচন্ড দুষ্টু। এই দুষ্টু দুষ্টু পাজি পাজি ব্যাপারটা আমার খুবই ভাল লাগে।
দ্য এক্স ফাইলসের মোলডারকেও একটু একটু ভাল লাগতো। তবে এক্স ফাইলস কম দেখা হতো, ভয় পেতাম তো
ঐ সময়টাতেই প্রেমে পড়লাম শোয়েব আখতারের। গভীর উদাস চোখ, ঝাকড়া এক মাথা চুল, রাফ এন্ড টাফ শোয়েবের জন্য আমিতো পুরা ফিদা।
শোয়েবকে দেখার জন্য বোলিং এর পুরো সময়টা আমি টিভির সামনে স্থির বসে থাকতাম। শোয়েবের একটা পোস্টার এখনও আমি রেখে দিয়েছি।
তখনই এল টাইটানিক মুভিটা। যদিও মুভি আমি বহু পরে দেখেছি, কিন্তু ছবি দেখে আর গল্প শুনে লিওনার্দো ডিক্যাপিওকে আমি ভালবেসে ফেললাম। ডিক্যাপ্রিও'র কিছু পোস্টারও আছে আমার সংগ্রহে
ওই সময়টাতেই মারা গেল সালমান শাহ।
চারদিকে তখন সালমান শাহ ক্রেজ। আমাকেও কিছটা ছুঁয়ে গেছিল। তবে সেভাবে নয়।
তারপর বহুদিন পছন্দগুলো তেমন বদলায়নি। নতুন কেউ আসেনি সেভাবে।
ভার্সিটিতে ভর্তির পর একদিন এক বান্ধবীর বাসায় যেয়ে দেখলাম 'এ্যা ওয়াক ইন দ্য ক্লাউড' মুভিটা। নরম-সরম, হ্যান্ডসাম, ম্যানলি আর প্রচন্ড রোমান্টিক নায়ক কিয়ানু রিভস আমাকে দখল করে নিল। আমি ভয়ানকভাবে প্রেমে পড়লাম কিয়ানু রিভসের। 'ম্যাট্রিক্স' দেখার পরতো আমি আমার নায়কের আরেকটা চেহারা দেখলাম। যেমন রোমান্টিক, এ্যাকশনেও তেমনি।
কিছুদিন পরে দেখলাম 'ট্রয়'। আকিলিস চরিত্রটার প্রতি আমি এমনিতেই দুর্বল। তায় আবার আকিলিস চরিত্রে ব্র্যাড পিট। দেখলাম 'মি. এন্ড মিসেস স্মিথ'ও। প্রেমে পড়লাম ব্র্যাড পিটের।
এরইমাঝে আমার হৃদয়ের অনেকখানি জায়গা দখল করে নিল অর্জুন রামপাল। এখনও তেমনিভাবে দখল করে আছে। চেহারায়, ব্যক্তিত্বে, পৌরুষে...সব সব দিক থেকে একেবারে পারফেক্ট একজন হিরো। অর্জুনের মত কাউকে যদি পেতাম।
সবশেষ আমি প্রেমে পড়লাম গত কোরবানি ঈদের সময়।
সাধারণত টিভি নাটকগুলো দেখা হয় না ওইভাবে। ঈদের নাটক, এই হিসেবে একটা নাটকে দেখলাম আরেফিন শুভকে। অনেকটা মিল পেলাম অর্জুনের সাথে। আর যায় কোথায়? শুধু শুভকে দেখবো, এজন্য যত অখাদ্যই হোক শুভর প্রত্যেকটা নাটক আমি দেখলাম।
কত সেলিব্রেটির প্রেমেই না পড়লাম এই জীবনে।
সবার কথা হয়তো মনেও নাই। কিন্তু তাদের সব্বাইকেই আমি অনেক অনেক ভালবেসেছি। তারা একেকজন 'আমার হিরো'।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।