♠ ব্লগার ইমন জুবায়ের ♠ মেঘের আড়ালে থাকা একটি নক্ষত্রের নাম
এক.
মোড়ের দোকান থেকে সিগারেটটা জ্বালিয়ে নিয়ে একরাশ ধোয়া ছাড়ে নিশীথ।
ছন্নছাড়াদের জীবেনেও সুখ আছে। অদ্ভুত রকমের সুখ। নিশীথের ভাবনারা সবে মাত্র ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। সকালে একটা ভাবনা ছিলো; এখন আরেকটা জেঁকে বসেছে।
ফানফুট রাস্তার পাশটায় আসতেই পেছন থেকে রিকসার ঘন্টির আওয়াজ পেল নিশীথ, পিছু ফিরে দেখার আগ্রহটা কাজ করেনা আর আজকাল।
- এই নিশীথ দা, কেমন আছেন?
কন্ঠটা পরিচিত!! পিছু ফিরবার আগেই সামনে এসে দাড়ায় রিক্সাযাত্রী রুমকি। তা এই ভর দুপুরে কোথায় চললেন ? বলে রুমকি দাড়ালো।
এই ভর দুপুরে সে,যে মাছির মতো ঘুড়ছে আধকানা মেয়েটা বোধহয় দেখেও দেখছে না। আর দেখলেও ভাবনার ভাবাকাশে ভাবতে পারেনি।
নিশীথ তাকায় রুমকির দিকে, তোমার মা যেতে বলেছে তো; আমি সন্ধ্যের দিকে আসবো।
দুই.
নিশীথ দীর্ঘ ছয় বছরের বাসিন্দা এ নগরের। জীবনে বড়কিছু হবার আশাটা কৈশরেই মরে গিয়েছিলো। মামা,কাকা,দাদা, সবাই মূর্খের দল কি,না। জীবনের চাকা পাংচার হতে, হতে শেষ মুহুর্তে গ্যারেজে পড়ে থাকবে তবু চাকরি হবেনা; জেনেই নিশীথ নিজ থেকে আর বেশিদূর আর এগোয়নি।
হায়ার সেকেন্ডারিটা পাশ দিয়েছে কোনরকম। কলেজ থাকতেই স্থানীয় সাহিত্য পত্রিকায় লেখালেখি করতো। বড় এক কবি একদিন বললেন, কবিতায় কি পেটের ক্ষিদে মিটবে। তোমার মতো হা-ভাতের এসব মানায় না।
সেই থেকে তার কবি হবার বাসনা মরে গিয়ে ভূত হয়ে গিয়েছে।
আজকাল তাই মধ্যরাতে জেগে উঠে দু’এক চরণ লিখবে বলে তাও পারেনা। বিদ্যূত নামের চাদঁটা দীর্ঘ বিরতি দিয়ে দিয়ে শেষে মধ্য রাতে জলসায় যায় ড্যান্সিং করতে।
ভাড়াবাড়িতে থাকে নিশীথ। রান্নার ঝামেলা ভাড়াওয়ালাই নিয়েছে। ও খালি সকাল-দুপুর খেয়ে যায়।
চারটি টিউশনি করে আর একটা কোচিং সেন্টারে ভর দুপুর বকবকানির চাকরি নিয়েছে। নিজে এলেবেলে যাই হোক না কেন, ছাত্রদের জ্ঞান দিতে সদা প্রস্তুত।
ছ’বছর আগে গন্ডগ্রাম ত্যাগ করে এই শহরে ঠায় নিয়েছিলো নিশীথ,পকেটে তখন দুই হাজার টাকা ছিলো মাত্তর। আটশ ঘর ভাড়া, বারশো খাওয়া খরচ, এই বলে বাড়িওলা ওকে ভাড়া দিয়েছে। বড্ড ভালো লোক।
তবে তাকে দিয়ে ফাউ ছেলেমেয়ে পড়িয়ে নিচ্ছে আর কি। সেটা অবশ্যি ফাউ বলা চলেনা। বছরে দুইবার নতুন কাপরচোপর তেল সাবান দিচ্ছে, এও বা কম কি,সে। ভালোই চলে যায় ওর। মাসিক আয় সাড়ে তিন হাজার টাকা।
কোন একাউন্ট নেই, মরে গেলে পড়ে থাকবে, ভেবে করা হয়না। লোকে বলে ভবিষ্যত !! দুর ছাই ছন্নছাড়াদের আবার ভবিষ্যত কি!!
তিন.
গেট খুলে ভেতরে চলে যায় নিশীথ। সোফায় বসতেই রুমকির মা সদা হাস্যময়ী এসে হাজির।
তা নিশীথ কি ভাবলে, বলে জিজ্ঞেস করে রুমকির মা। নিশীথ এ, কদ্দিন শুধু ভাবছেই।
আজকাল মানুষ গুলো কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে খালি কব্জা করতে চায়। টাকা মানুষকে কল্পনায় এভারেষ্টের চূড়ায় উঠায়।
কদ্দিন আগে রুমকির মা পথে পেয়ে যা বললেন তা শুনে খানিকটা তন্দ্রাপুরে চলে গিয়েছিলো নিশীথ। বলে কি মহিলা।
রুমকি আর চুমকি দু বোন ।
চুমকি বড়।
সুশ্রী শিক্ষিতা। রুমকির মা লজ্জা শরম হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে ফেললো চুমকি তোমাকে খুব পছন্দ করে । আমরা তাই চুমকি কে তোমার হাতে তুলে দিতে চাই তুমি কি বলো।
নিশীথের ঘরজামাই হবার ইচ্ছে নেই।
তার উপর ভালোলাগা জাতীয় বিয়ে, পর সময়ে দ্বন্ধ লাগা দাম্পত্য জীবন মোটেই সুখকর না। সেটা খুব ভালো করেই জানে ও। মনবাগান পুড়ে ধোয়া উঠার সে সব দিন রাস্তার সারমেয় সন্তানরা খেয়ে ফেলেছে। এখন কাট কাট লাইফ।
আর ঘর জামাই নাহ্ ভাবতেই পারে না নিশীথ।
সে ঘামছে তাই।
চলবে...............
২য় ও শেষ পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।